চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় এনে হত্যা

তিন বছর পর জট খুললো রাসেল হত্যাকাণ্ডের, গ্রেপ্তার ২

ভুক্তভোগী রাসেলের সঙ্গে বাগেরহাটের একই গ্রামে বিয়ে করা আসামি সজলের সখ্যতা গড়ে ওঠে।  এক পর্যায়ে রাসেলকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় আসতে বলে সজল। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী রাসেলকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

তিন বছর পর রাজধানীর কদমতলী এলাকার ক্লু-লেস রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ হত্যা মামলায় জড়িত প্রধান আসামীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। গ্রেপ্তাররা হলেন প্রধান আসামী মো. সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু (২৫)।

শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা হতে পিচ্চি সজলকে এবং ওইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর শ্যামপুরের হাজীগেট ব্যাংক কলোনী থেকে হুন্ডা বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছুরি জব্দ করা হয়।

যেভাবে গ্রেপ্তার হত্যাকারীরা
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আদালতের আদেশের পর পিবিআই মামলাটি গ্রহন করে ক্লু-লেস রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে রাসেলের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসায় ব্যাপক তদন্ত শুরু করে। পরে মামলার সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রধান আসামি সজলের অবস্থান জানা গেলে পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় একটি দল বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে পিচ্চি সজলকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্যে পরে রাজধানী থেকে হুন্ডা বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সেদিন যা ঘটেছিল
পিবিআই জানায়, ভুক্তভোগী রাসেল (২২) বাগেরহাটে কৃষি কাজ করত। ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসে। ওই বছরের ১১ অক্টোবর রাতে রাসেলের মা রাশেলা বেগম মুঠোফোনে খবর পায়, রাসেল ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে মারা গেছে, তার লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা আছে।
পরে রাশিলা বেগম ঢাকায় এসে ঢামেকের মর্গ থেকে ডান পাজরে পিঠের দিকে ব্যান্ডেজ অবস্থায় তার ছেলের লাশ শনাক্ত করে।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাতে রাজধানীর কদমতলীর থানার বড়ইতলা মোড়ে কেউ ছুরি দিয়ে রাসেলের ডান পাজরের পিঠের দিকে আঘাত করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করে। কিন্তু কি কারণে কারা রাসেলকে হত্যা করল এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি, এলাকার মানুষরা জানায় ছিনতাইকারীর ছুরির আঘাতে রাসেল মারা যায়।

যেভাবে রাসেলের সঙ্গে সখত্যা গড়ে উঠে সজলের
বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন: আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, খুলনা জেলার রূপসা থানায় রাসেলের বাড়ি, ওই এলাকার একই গ্রামে বিয়ে করে পিচ্চি সজল। সে কারণে দুজনের মধ্যেই সুসম্পর্ক হয়। সজল ঢাকার কদমতলীতে ভাড়া থাকত, সে বিভিন্ন মামলার আসামি থাকায় শশুরবাড়িতে পলাতক হিসেবে থাকত। মূলত ওই সময় গুলো রাসেল আর সজলের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক সময় রাসেলকে একটি টায়ার কোম্পানি চাকরি দেবে বলে ঢাকায় নিয়ে আসে সজল। কিন্তু ঢাকায় আসার পরেও রাসেলকে চাকরি না দেয়ায় দুজনের মধ্যে কথা বাকবিতণ্ডা হয়।

রাসেলকে হত্যার ছক সাজায় পিচ্চি সজল
রাজধানীর কদমতলী এলাকার শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞী পিংকি সজলের পরিচিত। অন্যদিকে শ্যামপুরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী পারভেজের সঙ্গে এলাকায় মাদকের প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ পিংকির বিরোধ চলছিল। পিংকি এক পর্যায়ে পারভেজকে খুন করার জন্য পিচ্চি সজল ও হুন্ডা বাবুকে ভাড়া করে।

পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো.আবুল কালাম আজাদ বলেন: রাসেলের সঙ্গে বাকবিণ্ডতার জেরটা মনে রেখেছিল সজল। তাই সেটার প্রতিশোধ নিতে পারভেজকে খুনের পাশাপাশি রাসেলকেও হত্যা করার পরিকল্পনা করে সজল।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে কদমতলীর বড়ইতলা মোড়ে ইয়াবা সেবনের জন্য পারভেজ, হুন্ডা বাবু, আল আমিন, সজল এক হয়। এ সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাসেলকেও আসতে বলে সজল। ইয়াবা সেবনের পর হঠাৎ ছুরি দিয়ে পারভেজ ও রাসেল উপর্যপুরি সজলকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। রাসেল ও পারভেজ থেকে যায়। রাসেল ও পারভেজের চিৎকারে এলাকাবাসী এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাসেলকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। অন্যদিকে বেঁচে যায় পারভেজ।

ডিবি’র এসি রাহুলকে গুলি করেছিল পিচ্চি সজল
আবুল কালাম আজাদ বলেন: আসামি সজলের বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় খুন, ডাকাতি, হত্যা চেষ্টা ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলা আছে, এরমধ্যে একটি হল ২০১১ সালের ৯ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রাহলি পাটোয়ারীকে গুলি করেছিল সজল।

তিনি আরো বলেন, রাসেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

রাসেলের মায়ের আদালতে না রাজির আবেদন
আবুল কালাম আজাদ বলেন: রাসেল হত্যাকাণ্ডে তার মা রাশিলা বেগম ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর কদমতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং ১৯) করে। পরে কদমতলী থানা পুলিশের তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের অপরাধ প্রমাণিত হলেও ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল তা উদঘাটন হয় নি তাই ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চুড়ান্ত রিপোর্ট সত্য (নং ৫৯) দাখিল করে।

খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় ওই চুড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে ভিকটিমের মা আদালতে না রাজির আবেদন করেন। পরে আদালত পিবিআইকে রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব দেয়।