নাজিফা তুষি ছিলেন ‘চ্যানেল আই লাক্স সুপারস্টার-২০১৪’-এর প্রথম রানার্সআপ। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময়েই রেদওয়ান রনির ‘আইসক্রিম’ ছবিতে কাজের প্রস্তাব পান। সিনেমার পোকা মাথায় গিজগিজ করায় সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। ‘আইসক্রিম’ দিয়েই তুষির রাজকীয় অভিষেক হয়। এরপর লম্বা বিরতি। শিগগির একাধিক ছবি নিয়ে ফিরছেন নাজিফা তুষি। তার আগে এই তারকা মুঠোফোনে কথা বললেন আরো বেশকিছু বিষয় নিয়ে…
অনেক দিন ধরে শুনছি, আপনি নতুন সিনেমার জন্য অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষার শেষ কবে?
ওয়েট ওয়েট আমাকে বলতে দিন। আমার হাতে এখন নতুন কয়েকটি ছবি আছে। এরমধ্যে একটিতে সাইন করে ফেলেছি। বাকি তিনটি ছবিতে সাইন না করলেও মোটামুটি কনফার্ম বলা যায়। সবগুলো আমাদের দেশের ছবি। মুক্তির পর এসব ছবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মুক্তি পাবে। বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে। আগামী বছরের শুরুতেই বিস্তারিত জানাতে পারবো। তার আগে নয়। জানুয়ারি থেকে মে-জুনের মধ্যে প্রজেক্টগুলোর কাজ গোছাবো।
তাহলে এসব ছবির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
প্রস্তুতি তো নিচ্ছি বছরের শুরু থেকে। তবে শেষ তিনমাস বেশি পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দৈনিক ওয়ার্কআউট, ডান্স, অভিনয় শিখছি। পুরোপুরি নিয়মের মধ্যে চলতে হচ্ছে। আরও একটা ভাবনা আছে। কাজগুলো শুরুর আগেই ইন্ডিয়া থেকে দুই-তিন মাসের একটা কোর্স করে আসবো। সেখানে ডান্স, অভিনয়ের খুঁটিনাটি সবকিছুই শেখা যাবে। আমি সবসময় বলেছি, আমার সবকিছু সিনেমা জুড়ে। মাঝেমধ্যে শখে হয়তো মডেলিং করেছি। তবে আমার আল্টিমেট গোল সিনেমা।
‘আইসক্রিম’ মুক্তির পর এতো গ্যাপ নিলেন কেন?
আইসক্রিম মুক্তি পেয়েছিল ২০১৬ সালে। পুরো বছরটাই ছবিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এই বছর নিজেকে প্রস্তুত করছি। ভাঙছি, গড়ছি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই হয়েছে যে, ‘আইসক্রিম’ মুক্তির পর থেকে আমি চাইলে সপ্তাহে পাঁচটি করে ছবিতে সাইন করতে পারতাম। কিন্তু আমি ওই কাতারে পড়তে চাই না, পড়িনি। আমি নিজের সন্তুষ্টির পর মানুষকে যে কাজ দিয়ে খুশি করতে পারবো সেই কাজটা করবো। সেজন্য এতটা গ্যাপ লেগেছে। এখনো ছবির অফার আসে। কিন্তু আমার মতো করে পাইনা, তাই কাজ করিনা। বছরে যদি ভালো একটা কাজও করতে পারি, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আমি সংখ্যার চেয়ে মানে বিশ্বাসী।
আপনার কাছে কেমন ছবির প্রস্তাব যাচ্ছে? আপনি চাচ্ছেন-ই বা কেমন বলুন তো…?
আমার কাছে যেসব ছবির প্রস্তাব আসে সেগুলোর গল্প পছন্দ হতো না। গল্প ভালো হলে পরিচালক ভালো লাগতো না। প্রযোজকের মাঝে পেশাদারিত্ব মনোভাব দেখি না। ছবির প্ল্যানিং ঠিকঠাক থাকতো না। একটা ভালো ছবির জন্য এসব কিছুই সমন্বয় প্রয়োজন। সবমিলিয়ে পছন্দ হয় না। ছবিতে কাজের জন্য আমি সবার আগে প্রাধান্য দেই গল্প এবং পরিচালক। আর একজন ভালো ডিওপি। সহশিল্পীকে এটা আমার আছে গুরুত্বপূর্ণ না। আমি বিশ্বাস করি গল্প ভালো হলে পরিচালক কখনও কাজটা খারাপ বানাবেন না। আমি নিশ্চিত থাকবো তিনি ভালোভাবেই কাজ করবেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন এটা সবাই জানেন। তারপরেও আমি হতাশ হইনি। অপেক্ষা করেছি। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর একটা ভালো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গেলে অপেক্ষা করতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
আপনি নাটকে কাজ করলেন না কেন?
আমি চাইলে অনেক অনেক নাটকে কাজ করতে পারতাম। ভালো ভালো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে পারতাম। দেশের সেরা প্রোডাকশন হাউজের সঙ্গে কাজ করতে পারতাম। করিনি, আর করবও না। আমি জানি আমার সমসাময়িক অনেকেই নাটকে কাজ করে দিব্যি আছে। নাটকে কাজ করলে হয়তো আমি বেশি উপার্জন করতে পারতাম। কিন্তু তা না করে আমি আমার কোয়ালিটিফুল সিনেমার জন্য অপেক্ষা করেছি। পরের বছরই ইনশাল্লাহ ভালো ভালো ওইসব কাজগুলো করতে পারবো।
সিনেমাকে কেন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন?
২০১৪ তে চ্যানেল আই ও লাক্সের মাধ্যমে আমার মিডিয়া যাত্রা শুরু। তার আগে থেকেই আমার পরিকল্পনা ছিল সিনেমা করবো। প্রচুর বই পড়েছি, সিনেমা দেখেছি বলেই হয়তো আমার এই ইচ্ছের জন্ম হয়েছিল। তখন মনে হতো আমি বড়পর্দায় কাজ করতে চাই। সেজন্য লেখাপড়ার বিষয়ও ফিল্ম স্টাডিজ। আমি জানি, একটা সময় আমি হয়তো অভিনয় করতে পারবো না, তখন আমি নিজেই সিনেমা বানাবো। আমার ক্যারিয়ারের আগাগোড়া প্ল্যানটাই সিনেমাকে ঘিরে। সবসময় নিজেকে বড় ক্যানভাসে দেখতে চাই বলেই আমি সিনেমাকে প্রাধান্য দেই। আরেকটা বিষয় বলতে চাই, আমাদের দেশের নাটক এখন কোয়ালিটি হারাচ্ছে। একদিনে ১০-১৫ টি দৃশ্যের কাজ করতে হয়। এটা আমার দ্বারা হবে না। আমার আছে মনে হয়, অভিনয় হলো সাধনা। চরিত্রে ঢুকতে হবে, তারপর অভিনয় করতে হবে। নাটক করলে হয়তো আমার এই স্কিলটা নষ্ট হতো।
আপনাকে মিউজিক ভিডিওতে দেখা গেছে…
মিউজিক ভিডিওর প্রতি আগ্রহ ছিল না। রেদওয়ান রনি ভাইয়ের নির্দেশনায় লাকী আখন্দের চিকিৎসার জন্য ট্রিবিউট করে তার গানের মডেল হয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ইমরানের গানে সালমান শাহ অভিনীত ‘এ জীবনে যারে চেয়েছি’ গানের নতুন আয়োজনে মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছিল এটাতে সিনেম্যাটিক ব্যাপার থাকবে। সেজন্য করেছিলাম। মিউজিক ভিডিও দেখার পরে অনেকেই আমাকে বলছেন, নায়িকার মতো লাগছে। এই ব্যাপারটা বোঝার জন্যই কাজটি করেছিলাম। এছাড়া ইমরানের গান আমার পছন্দের। সেজন্য সবকিছুই মিলে গিয়েছিল বলেই কাজটি করেছিলাম। খুব ভালো সাড়া মিলেছে।
সিনেমার যে অবস্থা তাতে নতুন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা সহজ বলে মনে করেন?
একদম সহজ না। আমি গত দুই বছর ধরেই তো যুদ্ধ করছি। আমি চাইলে আইসক্রিমের পর আমার ১০ টি সিনেমা মুক্তি পেতে পারতো! হাতে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছি। এটাই বড় যুদ্ধ। ধরেন, আমার পেটে ভীষণ খিদে আছে। সামনে খাবারের পসরা সাজানো। কিন্তু আমি জানি, এটা একবার খেলে আমি মোটা হয়ে যাবো, অথবা অসুস্থ হয়ে পড়বো। চাইলেই আমি সুন্দর খাবারগুলো খেতে পারছিনা। সিনেমার ব্যাপ্যারটাও আমার কাছে এমন লাগে। আমি চাইলেও টাকার মোহে সবকিছু লুফে নিতে পারছি না। আমার কিন্তু কিছু কষ্ট আছে। কারণ, আমি ফিল করি আমাকে স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে কম। কাজ কম করছি। তারপরেও আমি ভালো কাজের জন্য বসে আছি। আমার স্বান্তনা হচ্ছে, এই দোষ আমার না। আমার ইন্ডাস্ট্রিটাই এমন।
দেশের মধ্যে আপনার পছন্দের তিনজন পরিচালক ও তিনজন নায়কের নাম বলুন। যাদের সঙ্গে কাজ করতে চান…?
পরিচালকদের মধ্যে দীপঙ্কর দীপন, অমিতাভ রেজা এবং রেদওয়ান রনি। নায়কদের মধ্যে সবার আগে অবশ্যই শাকিব খান। এরপর আরিফিন শুভ এবং শরিফুল রাজ।
ছবি: নাজিফা তুষির ফেসবুক থেকে সংগৃহিত