উইকেটে বল না ঘুরলে সাফল্য আসে না, ম্যাচের মোড়ও ঘোরে না। শেষ কয়েকবছরে ঘরের মাঠে যে কয়েকটা উল্লেখযোগ্য জয় বাংলাদেশের, তার সবগুলোর পেছনে চোখ বুঝে অবদান ছিল ঘূর্ণি উইকেটের। তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে কী রকম উইকেট চান সে প্রশ্নে টার্নিং উইকেটের পক্ষেই ভোট দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু কে জানতো সেটাই হয়ে যাবে বুমেরাং!
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে আফগানিস্তানের চেয়ে ১৪৮ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। হাতে আছে কেবল দুই উইকেট। দিন শেষে যখন কথা বলতে এলেন সাকিব আল হাসান, তখন তার মুখে স্পষ্ট বিরক্তি! সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন, এমন উইকেট মোটেও প্রত্যাশা করেননি।
‘এরকম উইকেট আমরা মোটেও প্রত্যাশা করিনি। এই উইকেটে খেলা আমাদের জন্য খুব কঠিন। যেরকমটা আশা করেছিলাম, পেয়েছি তার উল্টোটা।’
যে উইকেটে প্রায় সাড়ে তিনশো করেছে মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা আফগানিস্তান, সেখানেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ডুবেছেন রীতিমত হাবুডুবু খেতে খেতে। ১০৬ রানেই নাই হয়ে গেছে ৬ উইকেট। খানিকটা মান বাঁচানো গেছে মুমিনুল হকের ফিফটি ও দিনের শেষের দিকে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত-তাইজুল ইসলামের লড়াইয়ে।
সাকিব জানতেন কী উইকেট হলে এমনটাই হতে পারে। এ ধরনের উইকেট হলে এগিয়ে থাকবে আফগানরাই। কারণ তাদের আছে তিনজন রিস্ট স্পিনার, যেটা বাংলাদেশের নাই। বাংলাদেশের স্পিনাররা বল ঘোরান আঙুলের জোড়ে, ভালো করতে হলে উইকেটের সাহায্য দরকার হয় তাদের। আর রিস্ট স্পিনাররা বল ঘোরাতে পারেন যেকোনো উইকেটেই। টার্নিং-ফ্ল্যাট যেকোনো উইকেটই তাদের কাছে সমান।
অবস্থা বুঝে নিজেদের স্বার্থেই তাই টার্নিং উইকেট চেয়েছিলেন সাকিব। প্রতিপক্ষ যা করার করুক, নিজেদের বোলাররা যেন সবটুকু ফায়দা নিতে পারে উইকেটের সেটাই ছিল তার চাহিদাপত্রে। কিন্তু চাহিদার উল্টো হয়েছে!
বিপক্ষে গেলেও উইকেটে এমন কোনো জুজু ছিল না যে সেখানে খেলাটা অসম্ভব। সাকিব স্বীকার করছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুলটা ছিল টাইগার ব্যাটসম্যানদেরই। শেষদিকে মোসাদ্দেক-তাইজুলের অবিচ্ছিন্ন ৪৮ রানের জুটিও বুঝিয়ে দিয়েছে একটু বুঝে খেললেই হত।
যা হওয়ার হয়ে গেছে ভেবে সাকিব এখন সে কথা ভুলে যেতে চাইছেন। ঘুরে দাঁড়াতে চান পরের ইনিংস থেকেই, ‘আমরা যা চেয়েছি তার উল্টোটা পেয়েছি। তাই বলে এর মানে এই নয় যে, আমরা ভালো খেলতে পারবো না। একটা ভালো দল চিন্তার বাইরে থেকে এলেও সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সেই উত্তরটা দেয়ার।’
‘এখন এসব ভেবে কিংবা আলোচনা করে লাভ নেই। কীভাবে দাঁড়াতে পারি সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। মোসাদ্দেক আর তাইজুল যেভাবে ব্যাট করেছে তা দেখে আমি বলবো না এই উইকেটে একদমই খেলা অসম্ভব। ওরা প্রমাণ করেছে এই উইকেটে টিকে থাকলেই রান করা সম্ভব। আমরা আমাদের সেরাটা দিলেই এখানে রান করা সম্ভব।’