চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আসন্ন। দলীয় বিবেচনায় প্রার্থীতে কি চমক থাকবে তা আলোচিত বিষয় নয় এখন জনগণের কাছে। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাসিরের হালখাতার অংক নিয়ে জনগণের মতের ভিন্নতা আছে এবং থাকবেই। তবে এর সবটাই বিবেচনা করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেগা সিটির উন্নয়ন চলমান। আর এ শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কার্যক্রমের সার্বিক চিত্র উপলব্ধি করা যাবে আসন্ন গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে। এ শহরের সবুজে ঘেরা প্রকৃতির নান্দনিক পরিবেশ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ইট পাথরে শহর সাজানোর চেষ্টা এখানেও হচ্ছে অন্য স্থানের মত। কথায় আছে, ‘আধুনিকতায় যে রংয়ের চমক থাকে, তা ক্ষনস্থায়ী। একই সাথে সে কেড়ে নেয় মৌলিকত্ব। হারিয়ে যায় প্রকৃতির আপন রূপ। ‘
সিটি কর্পোরেশন এককভাবে নগরের উন্নয়নের কাজ করতে পারে না। তবে পরিস্কার পরিছন্নতা, মশা নিধনসহ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিয়ে নগরবাসীকে সেবা দিতে নগর সেবক বাধ্য। তাই একজন মেয়র দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও প্রতিটি নাগরিকের প্রতি তার দায়িত্ব সমান। কারণ মেয়রের আসনটি কোন ব্যক্তি বা দলের একক বিষয় নয়। জনগন তাদের ভোট দিয়ে যাকে এ চেয়ারে আসীন করবে; তিনি কেবল মাত্র ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করে নগরবাসীকে সেবা প্রদানের জন্য। সুতরাং স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র একজন যোগ্য ব্যক্তি হবেন এটাই প্রত্যাশা থাকে নগর বাসীর। সে হোক যে দলেরই। এ কারণে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যক্তি জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে বিবেচ্য।
তবে বর্তমান সময়ে জনগনের স্বতঃর্স্ফুত ভোটে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। যা অতি দুঃখজনক। তবে এর জন্য শতভাগ দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর দাম্ভিকতা ও ক্ষমতার দাপট।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সরকার দলের সর্মথকরাও ভোট দিতে ভোট কেন্দ্র যায়নি। এ নিয়ে নানা ধরনের অভিমত রয়েছে মানুষের। তার মধ্যে বিশেষভাবে যে কথাটি বলা হয় তা হলো,’দীর্ঘ মেয়াদি সরকার আওয়ামী লীগের জয় শতভাগ নিশ্চিত। অতএব আমার তোমার ভোটের কোন প্রয়োজন নাই।’ আবার অন্য ভাবে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক প্রচারণা করে দল আর ভোটের জন্য আছে প্রশাসন ও পুলিশ।’
এধরণের মনোভাব কোন রাজনৈতিক দলের জন্য হিতকর নয় কোনভাবেই। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে চসিক নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীদের মুখ্য কাজ হবে জনগনকে ভোট দানে উৎসাহিত করা। তা না হলে ঢাকার মতো চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচন হবে অনেকটাই ভোটারবিহীন।
নিজের দলের মানুষের ভোটের প্রতি অনীহার দায়কে এড়িয়ে যাওয়া ভুল। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হতে হবে দলের উচ্চপর্যায়ের নেতা কর্মীদের। তা না হলে ঢাকার মতোই ভোট না দিয়ে কেবল সেল্ফিবাজী অভিনন্দন বার্তার পুনরাবৃত্তি হবে চসিকের নির্বাচনেও।
এখন প্রশ্ন হলো জনগনকে ভোটমুখী করার দায়িত্ব শুধু আওয়ামী লীগের কেন। এর কারণ হলো ভোটের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ চট্টগ্রামের উপ নির্বাচন ও ঢাকার ২টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিগত জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও হতাশাজনক ছিল। এই ৩ টি নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে প্রচারণা চালিয়েছে। কিন্তু জনগনকে ভোট দিতে নিতে পারেনি তেমনভাবে কোন দল। বিএনপির সর্মথকদের মাঝে ভয় ভীতি থাকাটা অমূলক নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সর্মথকরা অত্যধিকভাবে প্রশাসন নির্ভর হয়ে শতভাগ নিশ্চিত ছিল বিজয়ে। যার কারণে তারা ভোট না দিয়ে অপেক্ষা করেছে ফলাফল ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে অভিনন্দন জানাতে।
সুতরাং এমন মাত্রারিক্ত হেয়ালি মনোভাব আওয়ামী লীগের মত দলের সর্মথকদের কাছে কাম্য নয়। তাই নিজেদের ভোট কতটা দলের জন্য অর্থবহ তা অনুধাবন করে চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে।
সারা দেশের রাজনৈতিক চিত্র দেখলে মনে হয়, দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন ব্যক্তি নাই। যার ফলশ্রুতিতে ভুল ভ্রান্তিকে শুধরিয়ে নেয়ার চেষ্টাও নেই। তবে এমন পরিস্থিতি একটি দীর্ঘ মেয়াদি রাজনৈতিক দলের সরকারকে বিপথে নিয়ে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে অনেকাংশে ভোটার বিহীন নির্বাচন পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারচুপি, কেন্দ্র দখল, হানাহানির ভয়ে মানুষ এখন ভোট দিতে যায় না তা কিন্তু নয়। বরং ভোটের রাজনীতির মেরুকরণের হিসাবটা পূর্ব নির্ধারিত রয়েছে ধারণা করে নিজের দলের মানুষরাও । আর সে কারণে তারা ভোট দিতে অনীহা প্রকাশ করে।
সুতরাং গনতান্ত্রিক পরিবেশে উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে হলে জনগনকে ভোট কেন্দ্রে নেবার দায়িত্ব শতভাগ পালন করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। ভুলে গেলে চলবে না উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় জনগনের রাজনৈতিক মত প্রকাশে ভোট হল অন্যতম একটি মাধ্যমে।
সুতরাং চসিকের নির্বাচনে প্রার্থীগনকে জনগনের সরব ভোটের জন্য লড়াই করতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করার দায়ভার পুলিশ আর প্রশাসনের। আর জনগনকে ভোট প্রদানে সরব করার দায়িত্ব হলো প্রার্থী, দল ও তার নেতা কর্মীদের। বিজয়ের মাল্য তখনই পরিপূর্ণতা পাবে; যখন নগরবাসীর সরব উপস্থিতিতে মুখরিত হবে ভোটের দিন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)