চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘চল যাই’-এর ক্লিপ দেখে চল্লিশ লাখ টাকা অনুদান!

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উক্তিকে উপজীব্য করে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চল যাই’। গেল ৬ মার্চ দেশের সব মাল্টিপ্লেক্সসহ ছবিটি মুক্তি পায় মোট ৮টি প্রেক্ষাগৃহে। দ্বিতীয় সপ্তাহে আরো ১২টি হল ছবিটি নিয়েছিলো, তিন দিন চলেছে ও। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে তো হল ই বন্ধ!

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ‘চল যাই’-এর একটি ভিডিও ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন সুমন জাহিদ নামের একজন। হৃদয়স্পর্শী সেই ক্লিপটি শেয়ার করে তিনি লিখেন,

‘‘অনেকদিন পর চোখে জল এলো। আমি স্বপ্নেও ভাবি নি- এমন নির্মাণ ও সম্ভব। তূর্যের (ছবির গল্প ভাবনা, চিত্যনাট্যকার ও অভিনেতা) জন্য মনটা খারাপ হলো, ওর কোন সাহায্যেই আসতে পারলাম না। মুজিববর্ষের বিশাল তরীতে ওর জায়গা হয় নি, চেষ্টা করেছিল ওর মত করে। আমার সীমিত যোগাযোগের মধ্যে ছবির স্পন্সরের জন্য কয়েকজন কে নক করলাম, বাট ইট ইজ টু লেইট। সিনেমা টা এখনও আমার দেখার সুযোগ হয় নি। সত্যি বলতে কি- কিছুটা সংশয়ও কাজ করছে, কেননা ৭ মিনিটের যে হৃদয়স্পর্শী অসাধারণ ক্লিপটি আমি দেখলাম তার মুগ্ধতা যদি পূর্ণতায় কেটে যায়? মুজিববর্ষের এই শুভক্ষণে মাত্র ৭ মিনিটের এই ক্লিপটি আপনার হৃদয়ে একটু দাগ কাটতে পারে।’’

এই ক্লিপের সূত্র ধরেই চ্যানেল আই অনলাইন যোগাযোগ করে ছবির টিমের সঙ্গে। কথা বলেন ‘চল যাই’-এর চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা খালিদ মাহবুব তূর্য। ছবিটি করতে যেয়ে নানান আনন্দ, বেদনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন তিনি।

সিনেমার সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার পর প্রয়োজন ছিলো অর্থের। এরজন্য বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা ও করেছেন। কিন্তু সফল হননি। তূর্য বলেন, ‘চল যাই’ নির্মাণের আগে যখন স্পিচ করেছি, তখন কারো সহযোগিতা পাইনি। এই সিনেমা নির্মাণ করতে যেয়ে বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে আমাদের। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি, অনেকেই মনে করেছেন এরা কতো টাকা অনুদান পেল কে জানে! অনেকের মনোভাব ছিলো এরকম। কারো বিন্দুমাত্র সহায়তা পাইনি। সিনেমাটা হবে কিনা, এটা নিয়েও অনেকে সন্দিহান ছিলেন।

‘ছবিটা নির্মাণের পর যখন বিভিন্ন জায়গায় এটা নিয়ে মুভ করেছি, তখন আমার খুব ডিমোটিভেটেড লেগেছে। কারণ আমি তো পলিটিক্যাল কেউ না। আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা প্রজেক্ট করেছি, যারা টুকটাক ছবিটা দেখছেন তারা অনেকেই ভাল বলছেন, এটা ভাল লাগার। কিন্তু সর্বোপরি আমি মন থেকে সিনেমাটা নিয়ে সেটিসফায়েড না। কারণ আমি তো কবীর সুমনকে নিয়ে একটা বই লিখে, কিংবা জাতির জনককে নিয়ে একটা সিনেমা বানিয়ে ফাঁপড়ে পড়তে পারবো না। কিন্তু রিলিজ থেকে শুরু করে এই ছবিটা নিয়ে যে ধরণের পলিটিক্যাল বিষয়ের সম্মুখিন হতে হয়েছে, সেটা আমার জন্য একটা এক্সপেরিয়েন্স ই বটে! আমি আবারও বলছি, আমি কারো কোনো কো-অপারেশন পাইনি।’-বলছিলেন তূর্য।

এতো নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্যেও তূর্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সোহানী হোসেনের প্রতি। কী করলেন তিনি? তার ভাষ্য মতে, আমার ছবি রিলিজের দু’দিন আগে একজন মহিলা ‘চল যাই’-এর কিছু ক্লিপ দেখে তার ব্যক্তিগত ভালো লাগা থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে গেছেন! উনার নাম সোহানী হোসেন, তিনি ‘সত্তা’ নামের একটি চলচ্চিত্রের প্রযোজক, ইউনিভার্সাল গ্রুপের মালিক।

‘চল যাই’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক হওয়ার শর্তে এমন অনুদান কিনা?- প্রশ্নে তূর্য বললেন, কোনো উদ্দেশ্যে বা শর্ত দিয়ে তিনি এই টাকা আমাদের দেননি। প্রযোজক হতে কিংবা বিজনেস রয়ালিটিও চাননি। তিনি জাস্ট এই ছবিটি দেখে আমাদের ডোনেট করেছেন। পরবর্তীতে আমি উনার প্রতি সম্মান জানিয়ে পোস্টারগুলোতে তার একটা কোম্পানিকে টাইটেল স্পন্সর করেছি এবং সব জায়গায় আমি লিখে দিয়েছি যে ,‘ছবিটি সোহানী হোসেনের অনুদানে নির্মিত’!

করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা দেশের হল বন্ধ থাকছে ২ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছবিটি নিয়ে সারা দেশে ঘুরতে চান তূর্য ও ‘চল যাই’ টিম। জানালেন, প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে আমাদের হল সংখ্যা ডাবল ছিলো। তিন দিন ছবিটি চলেছেও। এরপরেই করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ২ এপ্রিল পর্যন্ত সব হল বন্ধ থাকায় এখন কোনো সিদ্ধান্ত নেই নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিকল্প ব্যবস্থায় সারা দেশে ‘চল যাই’-এর স্ক্রিনিং করতে চাই।

সোহানী হোসেনের অনুদানে খালিদ মাহবুব তূর্যর গল্প ও চিত্রনাট্যে ‘চল যাই’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন মাসুমা রহমান তানি। এন ইনিশিয়েটিভ মাল্টিমিডিয়া নির্মিত ছবিটি প্রযোজনা করেছেন রাসেল মাহমুদ। এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন আনিসুর রহমান মিলন, তাসনুভা তিশা, লুসি তৃপ্তি গোমেজ, হুমায়রা হিমু, সাব্বির হাসান, হৃতিকা ইসলাম, নাভিদ মুনতাসির, শিশুশিল্পী শরীফুলসহ অনেকে।