পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের শুনানি চলতি মাসে শুরু হবে। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণের দাবি করে মুফতি হান্নানসহ আট আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ৬ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হাইকোর্টেও বহাল থাকবে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
মামলায় বলা হয়, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ইসলামবিরোধী বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৭ জন, ওইদিন হাসপাতালে ২ জন এবং পরে আরো একজন মারা যান। ঘটনার দিন রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ।
হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা হলেও বিস্ফোরক মামলাটি বিচারাধীন। বিভিন্ন সময়ে থানা, ডিবি ও সিআইডির ৭ জন তদন্ত করেন ঘটনাটি। প্রায় আট বছর পর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০০৯ সালে।
এর আগে তদন্ত চলার সময়ে তিন আসামি মুফতি হান্নান, আকবর ও আরিফ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে হামলার পরিকল্পনা, আসামিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ করে তারা।
সরকারি এর্টনি সহিদুল ইসলাম খান বলেন, রমনা বটমূল বোমা হামলায় মুফতি হান্নান তার জবানবন্দীতে বোমা হামলার আগে তারা বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করেছে, এ ঘটনার পরিকল্পনা করেছে। বোমা সংগ্রহ ও সরবাহরহ করেছে এবং সর্বশেষ ঘটনাস্থলে বোমা হামলা করেছে। এরা প্রত্যেকে এ হামলার সঙ্গে সম্পৃত্তা রয়েছে।
২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দায়রা জজ রুহুল আমিন এই মামলায় আটক মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সি ওরফে আবুল কালাম ওরফে আবদুল মান্নান, আরিফ হোসেন ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, জামিনে থাকা মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, পলাতক মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং আটক শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, পলাতক মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, ৬ আপিল ও ৩ জেল আপিল শুনানির জন্য ৬ এপ্রিল হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়। পরদিন বিষয়টি শুনানির জন্য তালিকায় আসে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের বেঞ্চে।
সরকারি এর্টনি সহিদুল ইসলাম খান বলেন, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি জে এম হাসানের সম্বনয় গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলতি মাসে শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা চাই আটজন আসামির ফাসির আদেশ বহাল এবং যাদের যাবজ্জীবন আছে তাদের সে আদেশটাও বহাল থাকুক।
রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে হাইকোর্ট বেঞ্চে সপ্তাহে দুদিন ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়। ওই সময়ে এই মামলার ১৩’শরও বেশি পৃষ্ঠার পেপার বুকের উল্লেখযোগ্য অংশ উপস্থাপন করা হবে।