প্রতি বছর ৩ এপ্রিল পালন করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। চলতি বছরেও হবে না তার ব্যতিক্রম। দিনটি নানা আয়োজন ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করতে সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন। তবে শেষ সময়ে এসে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এফডিসির আয়োজনে এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার।
বুধবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যায় এফডিসিতে চলচ্চিত্র কর্মীদের সংগঠন বাংলা চলচ্চিত্র পরিবার একান্ত বৈঠকে বসে। সেখানে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন ও বর্তমান চলচ্চিত্রের হালহকিকত নিয়ে কথা বলেন তারা। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক, অভিনেতা আলমগীর,পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রশিদ চৌধুরী, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাইমন সাদিক, নৃত্যশিল্পী সমিতির সভাপতি মাসুম বাবুল, নির্মাতা এস এ হক অলীকসহ অনেকে।
বৈঠক শেষে আসন্ন জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসকে সামনে রেখে উদ্ভুত জটিলতা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফারুক। প্রতি বছর এফডিসি কর্তৃপক্ষ, শিল্পী সমিতি ও চিত্রপরিচালক সমিতিসহ এফডিসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস পালন করা হলেও এবার সরকারি আয়োজন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। আলাদাভাবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষদের নিয়ে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপনের ঘোষণা দেন।
তারা বলছেন, ঘটনাটি মূলত জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস অনুষ্ঠানের ‘সভাপতি’ কে হবেন তা নিয়ে।
বিগত বছরগুলোতে সিনিয়র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। তার প্রয়াণের পর এবছর কে সভাপতি হবেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। চলচ্চিত্র পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় যে, এবার উৎসবের সভাপতি হবে প্রবীণ অভিনেতা হাসান ইমাম।
কিন্তু, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি উৎসবের সভাপতি হিসেবে এফডিসির এমডি আমির হোসেনের নাম প্রস্তাব করেন দাবি করে জায়েদ খান বলেন, এ কারণে তথ্যমন্ত্রীর অপসারণ চেয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার।
হাসান ইমামকে জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের সভাপতি করা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ফারুক বলেন: সৈয়দ হাসান ইমাম আমাদের মুরুব্বী। চলচ্চিত্র উৎসবের সভাপতিত্বে তাকেই মানায়। তাই তাকে সবাই মিলে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা মানে আমাদের চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষকেই অপমানের চেষ্টা। এজন্য আমরা তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।
জায়েদ খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: হাসানুল হক ইনুর অধীনে আমরা আর কিছু করবো না। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে সবচেয়ে সিনিয়র এবং গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবে রাজ্জাক ভাই সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। এবার রাজ্জাক ভাই না থাকার কারণে হাসান ইমাম ভাইকে সভাপতি করে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু হাসান ইমাম ভাইকে সরিয়ে মন্ত্রী এফডিসির এমডিকে সভাপতি করার কথা বলেছেন। এ কারণে আমরা সকলে তার পদত্যাগ দাবি করছি।
আয়োজন থেকে চলচ্চিত্র পরিবার সরে গেলে বিশৃঙ্খলা হবে কিনা জানতে চাইলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন: আমরা কষ্ট করবো আর তারা সিদ্ধান্ত দেবে এমনটা হতে দেয়া হবে না। এফডিসিতে সমস্ত উৎসব, আয়োজনতো আমরাই করি। ফারুক ভাই, আলমগীর ভাই, হাসান ইমাম ভাইরাই সবকিছু ট্যাকেল দেন। টাকা পয়সা থেকে শুরু করে সমস্ত অ্যারেঞ্জইতো আমাদের। উনারা শুধু মজা নেন। তাছাড়া এফডিসিতো আমাদের। শিল্পীদের। উনারাতো পর্যটকদের মতোন থাকেন।
শুধু এই উৎসব নয়, তথ্যমন্ত্রী এখনো বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারেননি দাবি করে জায়েদ খান বলেন: অযাচিত হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে সাফটা চুক্তির নামে তিনি ভারতীয় সিনেমা দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি সেসব ছবি মুক্তি দিতে প্রিভিউ কমিটি, সেন্সর বোর্ডেও হস্তক্ষেপ করছেন। এসব কারণেই ইনুর অপসারণ চাইছে চলচ্চিত্র পরিবার।