যারা দেশ বিদেশের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত, তাদের জন্য চলচ্চিত্র উৎসব মূলত একটি আশির্বাদ। নয় দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকার ৬টি প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ১৭তম আসর। উৎসবের সপ্তম দিন বুধবার(১৬ জানুয়ারি)। যেকোনো উৎসব সফল হয় প্রচুর সংখ্যক মানুষের অংশ গ্রহণে। গত সাত দিনের চলচ্চিত্র উৎসবের এই আয়োজনে কেমন ছিলো দর্শক উপস্থিতি?
সাধারণত চলচ্চিত্র উৎসব গুলোতে যে ধরনের ছবি প্রদর্শন করা হয়, সেগুলো নিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষ ছাড়া সাধারণ দর্শকের আগ্রহ কম থাকে। ঢাকায় চলচ্চিত্র উৎসবেও এমনটায় দেখা গেছে গত সাতদিন। বিশেষ করে সকাল ও দুপুরের শো গুলোতে ঢাকার দর্শকদের খুব একটা টানতে পারেনি বিশ্ব চলচ্চিত্র। বিশেষ করে অঁলিয়েস ফ্রসেস ও শিল্পকলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা চলচ্চিত্র গুলোর প্রদর্শনীতে দেখা গেছে প্রায় দর্শক শূন্যতা।
প্রতিদিন সকাল থেকে ৬টি ভেন্যুতে চলছে বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র। সকাল ও দুপুর পর্যন্ত ভেন্যুতে খুব একটা দর্শক সমাগম চোখে পড়েনি কোথাও। তবে প্রতিদিন বিকাল ও সন্ধ্যার শোগুলোতে দর্শকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। উপচে পড়া ভিড়ও দেখা গেছে কোনো কোনো দিন, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ফেস্টিভালে আসার আগে পূর্ব আলোচিত ছবিগুলোরই দর্শক বেশী।
শাহবাগে তিনটি ভেন্যু, একটি গণগ্রন্থাগার এবং অন্য দুটি ভেন্যু জাতীয় জাদুঘরে। এছাড়া অলিয়ঁস ফ্রসেস, শিল্পকলা ও যমুনা ব্লকবাস্টারে প্রদর্শীত ছবিগুলো ছিলো প্রায় দর্শক শূন্য। হাতে গোণা দর্শক দেখা গেছে।
এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে এখন পর্যন্ত তিনটি ছবির শো দেখতে দর্শকের লম্বা সারি চোখে পড়েছে, এমনকি টিকেট নিয়ে রীতিমত লড়াই করতেও দেখা গেছে। তিনটি ছবিই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির সময়ে ছিলো আলোচনার শীর্ষে। এরমধ্যে নূর ইমরান মিঠুর পরিচালনায় ‘কমলা রকেট’, সৃজিত মুখার্জীর ‘এক যে ছিলো রাজা’ এবং অনম বিশ্বাসের ‘দেবী’ উল্লেখযোগ্য।
নূর ইমরান মিঠুর ছবিটি দেখানো হয়েছে উৎসবের দ্বিতীয় দিন। জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে দেখানো হয় ছবিটি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার শো হওয়ায় দর্শকে পূর্ণ ছিলো পুরো মিলনায়তন। একই দিনে গণগ্রন্থাগারে ‘পাঠশালা’ নামের আরেকটি ছবি দেখতেও দর্শকের লাইন দেখা গেছে।
উৎসবের চতুর্থ দিনে ছিলো ভারতীয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জীর ছবি ‘এক যে ছিলো রাজা’। এই ছবিটিও দেখানো হয় জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার শো দেখতে টিকেট সারিতে দেখা যায় লম্বা লাইন। প্রায় দেড় ঘন্টা আগেই গণগ্রন্থাগারের সামনে টিকেট পেতে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে।
ছবিটির কাহিনি বাংলাদেশের হওয়ায় এমনিতেই দর্শকের বাড়তি আগ্রহ ছিলো ‘এক যে ছিলো রাজা’ নিয়ে। তার উপর ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া। সব মিলিয়ে ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের অন্যতম হাউজফুল ছবির তালিকায় নাম উঠে কলকাতার এই ছবির।
তবে দর্শকের সারি ছাড়িয়ে যায় উৎসবের ৬ষ্ঠ দিনে প্রদর্শীত জয়া আহসানের প্রথম প্রযোজনার ছবি ‘দেবী’। অনম বিশ্বাস পরিচালিত ২০১৮ সালের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবির তালিকায় শীর্ষে দেবী। টানা কয়েক সপ্তাহ জুড়ে প্রেক্ষাগৃহে ব্যবসা করেছে ছবিটি। ‘বাংলাদেশ প্যানারোমা’ বিভাগে মঙ্গলবার বিকালে গণগ্রন্থাগারে দেখানো হয় ছবিটি। যা দেখতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। শুধু তাই নয়, হাউজফুল হওয়ায় অনেকে মিলনায়তনের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছবিটি দেখেছেন!
উৎসবের বাকি আরো দুই দিন। ভিনদেশি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ছাড়াও এই দুই দিনে দেখানো হবে সৃজিত মুখার্জীর উমা, রাজীবুল হোসেনের ‘হৃদয়ে রঙধনু’, অরুণ চৌধুরীর ‘আলতা বানু’, লীসা গাজীর ‘রাইজিং সাইলেন্স’ এর মতো বাংলা ভাষার ছবি। এছাড়াও কাতার, চীন, নরওয়ে, সার্বিয়া, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের আলোচিত ছবিও দেখানো হবে।