চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

চলচ্চিত্রের জয়গান: ঢাকায় এক হলেন দুই বাংলার তারকারা

তবে একসঙ্গে দুই বাংলার চলচ্চিত্রের এতো গুণী মানুষেরা যখন এক মঞ্চে দাঁড়ান তখন সব ভুলে বাংলা চলচ্চিত্রের জয়গানই মুখ্য হয়ে উঠে…

জমকালো আয়োজনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো টিএম ফিল্মস নিবেদিত ‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস (বিবিএফএ)’-এর আসর। যেখানে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জয়গান গাইলেন ঢাকা ও কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতারা।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী মিলনায়তনে দুই বাংলার রথি-মহারথিদের মিলন মেলা বসে। সেখানে প্রায় সবার কণ্ঠেই আগামি দিনের বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে জয়গান শোনা যায়।

প্রথমবারের মতো এই আয়োজনের শুরু থেকেই চোখে পড়ে বেশকিছু অব্যবস্থাপনার চিত্র। বিকেল ৫ টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রাত প্রায় ৮টার দিকে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। উপস্থিত দর্শকদের পাশাপাশি বিষয়টিতে বিরক্ত হন গণমাধ্যম কর্মীরাও।

এছাড়াও মনোনয়নপ্রাপ্ত শিল্পীদের অভ্যর্থনা জানানোর বিষয়টিতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন একাধিক শিল্পী। দুই বাংলার মিলন মেলায় হিন্দি গানে পরিবেশনা, কলকাতার এই সময়ের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা প্রসেনজিত ও জিতের মতো অভিনেতা উপস্থিত থাকলেও এই সময়ের ঢাকাই ছবির প্রতিনিধিত্ব করা শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খানের অনুপস্থিতিসহ এমন বেশকিছু অব্যবস্থাপনার দেখা মেলে পুরো আয়োজন জুড়ে।

তবে একসঙ্গে দুই বাংলার চলচ্চিত্রের এতো গুণী মানুষেরা যখন এক মঞ্চে দাঁড়ান তখন সব ভুলে বাংলা চলচ্চিত্রের জয়গানই মুখ্য হয়ে উঠে। ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে এ আয়োজনটি বাংলা চলচ্চিত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই মন্তব্য করেন সকলে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে টিএম ফিল্মসের চেয়ারপার্সন ফারজানা মুন্নী বলেন,‘দুই বাংলার সেরা শিল্পীদের সম্মান জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। দুই বাংলায় চলচ্চিত্রে এখন সংকট চলছে, ঠিক এই সময়ে চলচ্চিত্রের পথে পা বাড়িয়েছে আমাদের টিএম ফিল্মস। নতুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার প্রয়াসে আমরা প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বপ্ন দেখছি দেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দেওয়ার।’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্যে রাখেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ফিরদাউসুল হাসান, বিবিএফএ এর সমন্বয়ক তপন রায়, পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক মন্ত্রী ব্রাত্য বসুসহ ঢাকা ও কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা।

বর্ণাঢ্য এই সন্ধ্যা রাতে শুরুতেই চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগম ও ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্মাননা গ্রহণ করে আনোয়ারা বলেন, আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। কারণ এতো বড় সম্মান আমাকে দেওয়া হলো। এই আয়োজনের মাধ্যমে দুই বাংলার বন্ধুত্ব আরো মজবুত হোক।

রঞ্জিত মল্লিক বলেন, দু-বাংলায় যৌথ প্রযোজনায় আরও বেশি ছবি নির্মাণ করা উচিত। দুদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে ছবিগুলো পৌঁছুবে। বাংলাদেশে এসে আজীবন সম্মাননা নেওয়াটা অনেক গর্বের।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা একই ভাষায় কথা বলি। আমরা একই পাখির কলতান শুনি। কিন্তু রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদেরকে বিভক্ত করেছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি জলবায়ুও এক। কিন্তু আমাদের মধ্যে এ ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নিশ্চয় আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে। এ কারণেই এই আয়োজন। এ ধরনের আয়োজন সংস্কৃতি চর্চাসহ চলচ্চিত্র নির্মাণের চর্চার দিক থেকেও বেগবান করবে।

কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, সিনেমার যে সময় সেটা আশ্চর্য ম্যাজিক। যেটা এক হাজার বছরের গল্প দু বছরে বলা যায়। পাঁচ মিনিটের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায়। সিনেমায় আমরা সময়কে সংকুচিত করতে পারি। আবার প্রসারিত করতে পারি। এক আশ্চর্যজনক মাধ্যমে আমরা কাজ করি। সিনেমা সত্যি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে প্রীতি ও মিলন বয়ে আনতে পেরেছে কী? এটা নিয়ে একটা লেখা আরও আগেই লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে হয়ে উঠেনি। সিনেমা আমাদের একত্রিত করে দিবে, মানুষের মধ্যে আর কোন বিভেদ থাকবে না। সিনেমা যে কাজটা করতে পারে সেটা হলো আমাদের স্মৃতিমালাকে একত্রিত করতে পারে। আর এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেই প্রত্যাশাই রইলো

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এই আয়োজনের জুরি বোর্ডের সদস্য বাংলাদেশের আলমগীর, কবরী, ইমদাদুল হক মিলন, খোরশেদ আলম খসরু ও হাসিবুর রেজা কল্লোল। অন্যদিকে, ভারত থেকে আছেন গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু, গৌতম ভট্টাচার্য, অঞ্জন বোস ও তনুশ্রী চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় আছে ভারতের জি-বাংলা ও বাংলাদেশের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে এটিএন বাংলা ও গানবাংলা টেলিভিশন। ইভেন্ট পার্টনার হিসেবে আছে ওয়ান মোর জিরো। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন কলকাতার মীর আফসার আলী ও শাহরিয়ার নাজিম জয়।

কলকাতার তারকাদের মধ্যে ছিলেন প্রসেনজিত, জিৎ, পরমব্রত, আবীর, তনুশ্রী, পাওলি দাম, সৃজিত মুখার্জি, কৌশিক গাঙ্গুলী প্রমুখ।

সেখানে প্রসেনজিত বলেন, দুই বাংলা এক হলে বাহুবলীর মতো ছবি বানানো যাবে। এভাবেই মেলবন্ধন আরও মজবুত হোক।

বাংলাদেশের তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ওমর সানি, মৌসুমি, জয়া, পরীমনি, সিয়াম, নিরব, ইমন, নুসরাত ফারিয়া, ববি, পূজা, তাসকিন প্রমুখ।