চমকের অপেক্ষায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ। কী চমক থাকছে আজ? জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর থেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় নেতা-কর্মীরা। নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের আগ্রহ ক্ষমতাসীন দলের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন?
শনিবার জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিন উদ্বোধনের পর সভাপতির ভাষণ, সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদক প্রকাশ, বিদেশি অতিথিদের বক্তব্য, কাউন্সিলরদের দাবি উপস্থাপন এবং সব শেষে আবার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির বক্তব্যের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনটি রাখা হয়েছে আজ।
তবে দ্বিতীয় দিনের আনুষ্ঠানিকতা হবে রুদ্ধদ্বার। সকাল সাড়ে নয়টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাগোয়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হবে দিনভর নানা কার্যক্রম।
আজকের আনুষ্ঠানিকতা
দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনের শুরুতেই আওয়ামী লীগের ৭৮টি জেলার নেতারা তাদের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উত্থাপন করবেন। এজন্য একজন নেতা তিন মিনিট করে সময় পাবেন। এরপর কাউন্সিলরদের ভোটে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা হবে।
নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের চমক বলতে যা বলা হচ্ছে, তা এই পর্যায়েই থাকছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। তারা জানান, নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। এরপর ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
১৯৮১ সালের পর থেকে প্রতিটি জাতীয় সম্মেলনেই এখন পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকে বেছে নেননি আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু এবার একাধিকবার শেখ হাসিনা তাগিদ দিয়েছেন নতুন নেতা বেছে নিতে। কাউন্সিলররা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন কি না-তা ঠিক করে এই অধিবেশনেই।
নির্বাচন কমিশন আহ্বানের পর কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে সভাপতি হিসেবে এক বা একাধিক নাম প্রস্তাব করা হবে। এরপর তা সমর্থন করবেন অন্য এক বা একাধিক কাউন্সিলর। যদি একটি নাম প্রস্তাব হয়, সে ক্ষেত্রে আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু একাধিক নাম প্রস্তাব হলে কাউন্সিলররা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট দিয়ে নির্বাচন করবেন সভাপতি।
এরপর একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবেন সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় সম্মেলন শুরুর তিন দিন আগ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফ ছাড়া অন্য কারও নাম আলোচনায় না আসলেও সম্মেলনের দুই দিন আগে থেকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নাম উঠেছে আলোচনায়।
তবে সম্মেলন শুরুর আগের দিন সৈয়দ আশরাফ কোনো গুজবে কান না দিয়ে জানিয়েছেন, দলে কী চমক থাকছে, তা জানেন কেবল শেখ হাসিনা ও তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্মেলনে যোগ দেয়ায় আলোচনা হচ্ছে তাকে নিয়েও। তিনি দলের নেতৃত্বে আসছেন কিনা এ আলোচনা চলছে কাউন্সিলের ভেতরে বাইরে।
জয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতৃত্বে আসবেন নাকি শুধু সদস্যই থাকবেন সেটা জানার জন্য কাউন্সিল শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলে অপেক্ষা করতে হতে পারে আরো কয়েকদিন।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে আগ্রহ
সম্মেলনে যোগ দেওয়া কাউন্সিলররা সজীব ওয়াজেদ জয়কে রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নেতৃত্বে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
সাধারণ সম্পাদকের সুরে সুর মিলিয়ে কাউন্সিলররাও সজীব ওয়াজেদ জয়কে সক্রিয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রথম দিনে জেলা নেতারা বলেছেন, সভাপতি শেখ হাসিনা যে নেতৃত্ব বেছে নেবেন তাই তারা মেনে নেবেন।
আলোচনার খোরাক সোহেল তাজ
আলোচনার সবশেষ খোরাক জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজকে ঘিরে। গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় সোহেল হঠাৎ করেই সম্মেলনের দুই দিন আগে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাসায় গিয়েছেন, কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে কী নিয়ে বৈঠক হয়েছে সেটা জানা যায়নি। তবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসছেন।
এর আগে তিনি ফেসবুকে মানুষের মতামত চেয়েছিলেন যে মানুষের কল্যাণে তার কী করা উচিত? হাজার হাজার সমর্থক তাকে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হতে বলেছেন।
এছাড়া শেষ মুহূর্তে গাজীপুর থেকে কাউন্সিলরও হয়েছেন তিনি। অভিমানে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়া সোহেলও কি দলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পাচ্ছেন-এই আলোচনাও দলের ভেতরে বাইরে পাচ্ছে ব্যাপক গুরুত্ব।