চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আজম নাছির উদ্দিন এবং মনজুর আলমের ব্যক্তিগত প্রভাব ও দলীয় পরিচয় নিয়ে যেমন ভোটাররা মনে মনে বিশ্লেষণ করছেন, তেমনই তাদের সততা, কাজ করার ক্ষমতা এবং নগরপিতা হিসেবে আগামী ৫ বছর নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাকেও ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিচ্ছেন তারা।
ভোটাররা এটাকে দেখছেন ‘গম মানুষ’ অর্থাৎ ভালো মানুষ মঞ্জুর আলমের সঙ্গে ‘খামর মানুষ’ অথাৎ পরিশ্রমী মানুষ আজম নাছির উদ্দিনের লড়াই হিসেবে।
প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হওয়ার পর পরই শুরু হয়েছে ভোটারদের নানান হিসেব নিকেষ। কোন নামে বা মার্কায় দেবেন তাদের মূল্যবান সিল তাই ভাবছেন এখন।
মেয়র পদে ১২ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে মূলত দ্বিমুখী। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী আজম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে বিএনপি ও ২০ দল সমর্থিত প্রার্থী সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের মধ্যে।
আজম নাছির উদ্দিন:
মা-বাবার ৪র্থ সন্তান তিনি। জন্ম ১৯৫৭ সালে। স্কুল জীবন থেকেই সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন নাছির। রাজনীতিবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে। সিটি করপোরেশন ভবনের খুব কাছে আন্দরকিল্লায় তার বাড়ি। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে জেল খেটেছেন বহুবার। হামলা মামলার শিকারও হয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির পথ বেয়ে ২০১৩ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ৫ম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী। রাজনীতিবিদ হলেও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে রয়েছে তার সুনাম। বর্তমানে নাছির চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। ৫৮ বছর বয়সী হলেও তরুণদের তার উপর রয়েছে অগাধ আস্থা । আবার লাগামহীন তারুণ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার চ্যালেঞ্জও রয়েছে নাছিরের।
সরকারি দল সমর্থিত হওয়ায় ক্ষমতা বেশি থাকবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, জনগণের কাছে নিজের আস্থা অর্জন করলে জনগণ ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নগরপিতা হিসেবে তাকেই নির্বাচিত করবে।
মনজুর আলম:
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র। জন্ম ১৯৫৫ সালে। দীর্ঘ সময় নিজ ওয়ার্ড ৯ নং কাট্টলীর কাউন্সিলর থাকলেও ১/১১ এর সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন। সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও ২০১০ এর নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করে চমক দেখায় বিএনপি। সফলও হন তিনি। সফল ব্যবসায়ী মনজুর সাধারণের কাছে গম (ভালো) মানুষ হিসেবে পরিচিতি।
সৎ, নির্লোভ এবং দলীয় প্রভাব মুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সবাইকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে গত ৫ বছর সিটি করপোরেশন পরিচালনার সুনামও রয়েছে তার। তবে প্রধান অঙ্গীকার জলাবদ্ধতা নিরসন করতে না পারা, প্রশাসনিক দক্ষতার অভাব ও বিরোধী দলীয় প্রার্থী হওয়ায় নিজের প্রতিশ্রুত বেশ কাজ সমাপ্ত করতে পারেননি বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, মেয়র থাকা অবস্থায় মনজুর আলম জনগণকে পাশে রেখে নগরীর উন্নয়ন করেছেন। যতটুকু উন্নয়ন অসমাপ্ত রয়েছে এবার জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে তিনি সেই কাজ সমাপ্ত করবেন।
তিনি আরও বলেন, মনজুরের প্রচারণায় সমর্থকদের যে ঢল নেমেছিলো তাতেই বোঝা যায় তার জনপ্রিয়তা কতটুকু।