মানুষ কেন ঘুষ খায়? অভাবে খায়? নাকি স্বভাবে খায়? এর জবাবে অনেকেই অনেক কথা বলবেন হয়তো। অনেক জ্ঞানগর্ভ আলোচনাও চলতে পারে।
ঘুষ খেতে খুবই আরামদায়ক,তাই খায়। এর চেয়ে সহজ কথা কিছু আর হতে পারেনা। কোনো কষ্ট নেই, কোনো ফাইল পাস করার জন্য ড্রয়ারে কেউ একজন পাঁচশ বা এক হাজার টাকার বান্ডিল ফেলে দিল, সাথে সাথে ড্রয়ার বন্ধ। এই টাকা যোগাড় করতে সেবা গ্রহীতার কতটুকু কাঠখর পোড়াতে হয়েছে সেটা জানা-জরুরি না।ঘুষ খাওয়া দরকার তাই খাওয়া হয়।
কারো কারো রক্তে মিশে গেছে ঘুষ খাওয়া। সরকার বেতন-ভাতা যতই বাড়িয়ে দিক না কেন, ঘুষ খাওয়া বন্ধ হবেনা কিছুতেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন ও প্রশাসন কেন্দ্রের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে ১২ ডিসেম্বর নবীন কর্মকর্তাদের বলেছেন,‘জনগণের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। প্রতিটা কর্মচারীকে চিন্তা করতে হবে, কতটুকু সেবা আমি দিতে পারলাম।নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই দেশের মানুষের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে সাবধান হতে হবে। কারণ দুর্নীতির জন্য সব অর্জন ম্লান হয়।’
প্রধানমন্ত্রীর এই আহবান-ই প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশে ঘুষ কতটা জনপ্রিয় একটি নাম। তিনি অবশ্যই জানেন সরকারের সবগুলো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না।
প্রধানমন্ত্রীর এই আহবান কতটুকু প্রতিফলিত হবে সেটা সময় বলে দেবে। এই আহবান তিনি সব সময় করে থাকেন। কারণ তিনি একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্যে তিনি কথাগুলো বলেছেন তারা এই আহবানকে কতটা গুরুত্ব দেবেন সেটাই দেখার ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের আন্তরিকভাবে জনগণের সেবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,‘জনগণের সেবা নিশ্চিতে সরকারি কর্মীদের দুশ্চিন্তা দূরকরার চেষ্টা চলছে। বেতন ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়ি-ফ্ল্যাট-বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।কর্মীরা ভালো কাজ করলে উন্নয়ন হবে। তখন বিভিন্ন সুবিধা আরও বাড়ানো সম্ভব।’
প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নেবার জন্য এভাবেই সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নানা প্রণোদনার ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা করে থাকেন।
গ্রাম দেশে একটা কথা আছে, চোর না শোনে ধর্মের কথা। গল্পটা এরকম, একজনকে চোরকে সন্ধ্যার পর কাছে পেয়ে এক মুরুব্বি তাকে হেদায়েত করছেন এভাবে- ‘বুঝলি চুরি করা খুব খারাপ। মানুষের অভিশাপ লাগলে সারা জীবন কষ্টে জীবন যাপন করতে হবে। আল্লাহ’র কাছেও কোনো দিন মাফ পাবি না। তার উপর যদি ধরা পড়ে যাস, পাবলিকের মার খেয়ে মরেও যেতে পারিস। সুতরাং কি বুঝলি? চুরি করা মহাপাপ।বুঝছিস?’
চোর তখন জবাব দেয়, ‘হ বুঝছি, আইজ যাই, রাত বাইড়া যাইতাছে।হাত চুলকাইতাছে। সিঁদ না কাটলে আমার ভালো লাগেনা।’বলেই চলে যায়।
অর্থাৎ চোর কখনো সাবধান বাণী শোনে না। তবে প্রধানমন্ত্রী যাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন অর্থাৎ আইন ও প্রশাসন কেন্দ্রের নবীন কর্মকর্তারা ওরকম হবে, এটা আমরা আশা করিনা। আমাদের আশা জনবান্ধব একদল চৌকশ কর্মকর্তা বের হবে আগামীতে। যাদের সেবায় দেশ উন্নত দেশে উন্নীত হতে পারবে ২০৪১ সালের মধ্যে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)