একটি লেখা রচনার পর তাকে ঘষেমেজে-কাটাকাটি করে ভালো লেখায় পরিণত করা, সন্তান মানুষ করার চেয়েও কম না! আর সেসব সন্তানকে সবার সামনে একত্রে তুলে ধরার সুযোগ হয় বই প্রকাশের মাধ্যমে। পত্রিকায়ও তুলে ধরা যায়, তবে তা বিচ্ছিন্নভাবে হয়। আর বইয়ের থাকে একত্রে, একটি পরিবারের মতো।–এমনটাই মনে করেন শিশুসাহিত্যিক তানজিল রিমন।
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তানজিল রিমনের চতুর্থ বই ‘মোটকু মামার অভিযানে বিল্টুর বন্ধুরা’। এর আগের বইগুলো হচ্ছে-তোমার সঙ্গে আড়ি, আমাদের ক্লাস ক্যাপটেন, এক তালি ভাই বল্টু। তবে বইগুলোর মধ্যে কোনটা পছন্দের এমন প্রশ্নের জবাবে এই লেখকের মন্তব্য, লেখকের কাছে তার সব বই-ই পছন্দের। এখন পাঠকরা কী বলছেন, সেটাই বড় কথা।
এবারের বইমেলায় তানজিল রিমনের প্রকাশিত বইটি ছোটদের গল্পের বই। বইটিতে মোট ছয়টি গল্প রয়েছে। লেখক বলেন, ছোটরা যেভাবে চিন্তা করে, সেভাবেই লেখার চেষ্টা করেছি গল্পগুলো। তাছাড়া ‘পড়াগুলো হারিয়ে যায় বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে’ ও ‘ভয়ংকর ভয়’ গল্প দুটোতে ফ্যান্টাসি যোগ করে লেখার চেষ্টা ছিল। ছোটবেলায় বিড়ালের ছানাকে নিয়ে সবার নানান স্মৃতি রয়েছে। আর বিড়ালের ছানাকে নিয়েই রয়েছে ‘ঝুমা কাজল ও মিনির গল্প’। অন্য তিনটি গল্প হচ্ছে- ভূত গবেষণা ইনস্টিটিউট, পিকলুর অ্যাকুরিয়াম, মোটকু মামার অভিযানে বিল্টুর বন্ধুরা।
বই বা বই প্রকাশ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই এই লেখকের। তবে লেখালেখিটা করতে চান সবসময় এবং চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করেই। তবু একজন পাঠকের কাছ থেকে লেখকের তো কিছু চাওয়া থাকেই। এই লেখকের মতে, লেখকের কাছে পাঠকই তো সব। আর পাঠকের কথা মাথায় রেখেই লেখক কোনো লেখা রচনা করেন। সবচেয়ে ভালো লাগে, যখন বই বা লেখা পড়ে কোনো পাঠকের কাছে ফিডব্যাক পাওয়া যায়। সেটা হতে পারে, পাঠকের ভালো-খারাপ লাগা দুটোই। আমার দ্বিতীয় বই ‘আমাদের ক্লাস ক্যাপটেন’ প্রকাশের পর ব্যাপক ফিডব্যাক পেয়েছি, যা আমি চিন্তাও করিনি। ২০১৩ সালে প্রকাশিত বইটি মেলায়ই প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে যায়। পরে দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়েছে। এটা আমার অনেক বড় সফলতা বলে মনে করি। আর এটা হয়েছেই পাঠকের জন্য। অনেকেই একটা বই কিনে নিয়ে গেছেন পড়ার জন্য এবং পড়ার পর তিনি ১০/১৫টি করেও কিনেছেন ছোটদের দেওয়ার জন্য। আর আমার কাছে মনে হয়, পাঠক ঠিকই ভালো লেখা বা লেখক খুঁজে নেন। সেক্ষেত্রে হয়তো একটু সময় লাগে।
পাঠকের কাছে যেমন কিছু চাওয়া থাকে তেমন প্রকাশকের কাছেও কিছু প্রত্যাশা থাকে লেখকের। তার মতে, ভালো কাগজ, ভালো লেখা, ভালো ছাপা, বাধা বাঁধাইসহ সর্বোপরি মানসম্মত ত্রুটিমুক্ত বই প্রকাশ করাটাই আমার চাওয়া। প্রকাশকদের সম্পাদনা পরিষদও থাকা উচিত। কিন্তু দুই একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাদে এটা আর কারোরই নেই। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বইও ভুল বানান, বাক্যগঠনে অসংগতিসহ বই প্রকাশ হয়।
লিখছেন এখন, লিখবেন যতদিন সম্ভব। তবে এই লেখকের লেখা ‘আমাদের ক্লাস ক্যাপটেন’ বইটি যারা পড়েছেন, তারাই তাকে আরেকটি পর্ব লেখার অনুরোধ করেছেন। লেখক বলেন, তাই আমারও ইচ্ছে আছে, তবে সেখানে শুধুই অ্যাডভেঞ্চার নয় কিশোরদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো থাকবে।
সাহিত্যচর্চা আমাদের দেশে হচ্ছে। আমরাও বিদেশী কিছু সাহিত্য পড়ি মাঝে মাঝে। তবে নিজের সাহিত্য দেশের বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দুটি ক্ষেত্র রয়েছে বলেই মনে করেন তানজিল রিমন।। একটি বাংলা ভাষার মানুষদের কাছে, অন্যটি অন্যান্য ভাষার মানুষদের কাছে।
তানজিন রিমন মনে করেন, বাংলা ভাষাভাষী যারা আছেন, এখন অনলাইনের যুগে তাদের কাছে পৌঁছানো কঠিন বিষয় না। আর অন্য ভাষার মানুষদের কাছে ছড়িয়ে দিতে হলে ইংরেজি ভাষায় লিখতে হবে অথবা বাংলা ভাষার বই ইংরেজিতে অনূদিত হতে হবে। বিশ্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজি ভাষা সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
তানজিল রিমনের লেখা ‘মোটকু মামার অভিযানে বিল্টুর বন্ধুরা’ বইটি প্রকাশ করেছে সাহস পাবলিকেশন। লেখকের নিজের করা প্রচ্ছদ ও অলংকরণে বইটি পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থেমেলার ৩৭৫ নাম্বার স্টলে। দাম ১৩৫ টাকা।