প্রেমিকের সাথে শান্তির নীড় গড়ার আশায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা (১৯)। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ৪১ দিনের মাথায় লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে।
পালিয়ে যাওয়ার এতগুলো দিন পর প্রেমিকের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনাই যেনো কাল হলো তার। পরিবারের চেষ্টায় বন্যা বাড়ি ফিরলো ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।
মঙ্গলবার ভোরে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজ মোড় এলাকায় মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় বন্যা। সাথে প্রাণ গেছে তার ভাই মারুফ (৪০) ও চাচা মিরাজুল ইসলামেরও (৬০)।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে বাবা হারানো নারায়ণগঞ্জের ভাটিবন্দর এলাকার বাসিন্দা বন্যাকে পরিবারের সিদ্ধান্তে ৮ মাস আগে এক সৌদি প্রবাসীর সাথে টেলিফোনে বিয়ে হয়। কিন্তু এ বিয়েতে মত ছিল না তার।
এক পর্যায়ে গত ৬ জুন প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায় সে। পালানোর সময় মুঠোফোনে মাকে বলেও দেয়, তাকে না খুঁজতে।
বিষয়টি জানার পর পরই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন তার মা। এরপর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ নিশ্চিত হয় বন্যার অবস্থান।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোর্শেদ আলম চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, পুলিশের কয়েকদিনের চেষ্টার পর বন্যা জানায়, তার ভাই ও চাচা এলেই সে ফিরে যাবে।
এ কথামতো পুলিশ সদস্যদের সাথে করে তাকে আনতে যান তার ভাই ও চাচা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এ দুর্ঘটনায় নিহত হন তারাও।
মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে বন্যাকে নিয়ে ফেরার পথে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজ মোড় এলাকায় মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বন্যা, তার ভাই ও চাচা নিহত হন। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন আহত হয়েছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা পুলিশের একটি দল রাজশাহীর বাঘমারা এলাকা থেকে বন্যাকে নিয়ে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজ মোড় এলাকায় পৌঁছলে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডারটির বিস্ফোরণ ঘটে।
বন্যা তার ভাই ও চাচার সাথে গাড়ির পেছনের সিলিন্ডারের উপরের সিটে বসায় ঘটনাস্থলেই সেসহ দুইজন নিহত হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরেকজনের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের একটি উদ্ধারকারী দল তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার এসআই তানভির আহমেদ, এএসআই হাবিবুর, পুলিস সদস্য আবছার ও মাইক্রোবাসের চালক আকতার।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে এবং আহতদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মাইক্রোবাসে আগুন লাগার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে তারা। সিলিন্ডারটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল কীনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।