একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনদিন যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী সপ্তাহে আরো দু’দিন তারা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের সুযোগ পাবে। এরপর আসামীপক্ষের পালা।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন এর আদালতে মামলার বিচার চলছে। মামলার জন্য পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে আগের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে বিশেষ এজলাস বসেছে। বিচার চলছে একইসঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলায়।
গত সোম-মঙ্গল-বুধ এ তিনদিন রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। মামলার এজাহার, কয়েক দফা তদন্ত এবং আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের সূত্র ধরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এসব যুক্তির প্রেক্ষাপটে তারা আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানাবেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।
প্রথম তিনদিনের যুক্তি-তর্কে যেসব বিষয় পরিস্কার হয়েছে:
- শেখ হাসিনাকে হত্যার টার্গেটেই ওই হামলা চালানো হয়।
- শেখ হাসিনা যেহেতু অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারার প্রতীক তাই ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো তাকে টার্গেট করেছিল।
- হামলায় সহযোগিতার ভূমিকা পালন করে খোদ তৎকালীনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
- জঙ্গি নেতারা মুফতি হান্নানসহ বনানীর হাওয়া ভবনে গিয়েছিলেন। সেখানে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকে তারেক রহমান তাদের সকল কাজ-কর্মে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
- বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।
- আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংগঠিত জোট সরকার প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়।
- গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিএনপির দুই নেতা তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু জড়িত ছিলেন।
- তারা জঙ্গিদের প্রশাসনিক ও আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
- আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে বৈঠক করে সেখান থেকেই গ্রেনেড তুলে দেয়া হয় জঙ্গি নেতাদের হাতে।
- হামলায় সহায়তা করেছিল পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই।
- তৎকালীন আইজিপি আশরাফুল হুদা হামলাকারীদের প্রশাসনিক সহযোগিতা দেন। হামলার ঘটনার পর পুলিশ প্রধান হিসেবে ব্যবস্থা নিতে তিনি একবারও ঘটনাস্থলে যাননি বা খোঁজ নেননি।
- তৎকালীন উপ-কমিশনার ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান ঘটনাস্থলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
- তৎকালীন ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেনেড আক্রমণের সুবিধায় ও রক্ষার উদ্দেশ্যে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেননি। এ ঘটনায় ব্যবহৃত অবিস্ফোরিত তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেননি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী।
মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৯। তাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে আছেন।
অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে। মামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন।
মামলার আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এবং সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর হামলার মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।