বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিনে মাঠে নামছে পর্তুগাল ও স্পেন। গ্রুপ বি’র ম্যাচটি রাশিয়া মহাযজ্ঞের প্রথম হাইভোল্টেজ লড়াই। জায়ান্ট দুদলে তারকার ছড়াছড়ি। পর্তুগিজদের যেমন আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো; স্প্যানিশদের সার্জিও রামোস, ইস্কো, কারভাহালরা। তারা আবার রিয়েল মাদ্রিদে সতীর্থও। ক্লাব বন্ধুত্ব ভুলে অবশ্য এবার দেশের হয়ে লড়ার পালা।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ১২টায় সোচিতে মুখোমুখি হবে পর্তুগাল ও স্পেন। গ্রুপে তাদের অন্য দুই সঙ্গী ইরান ও মরক্কো। ইরান-মরক্কো প্রতিপক্ষকে হঠাত চমকে দেয়ার সামর্থ্য হয়ত রাখে, তবে ফুটবল শক্তির বিচারে গ্রুপ বি’তে আসল লড়াইটা হবে স্পেন-পর্তুগালের মধ্যেই। তারা পরের পর্বে যাচ্ছে ধরে নিয়েই গ্রুপসেরা হওয়ার লড়াইটা এপর্বে আকর্ষণের কেন্দ্রে।
প্রতিটি দলেই শক্তি যেমন আছে, আছে দুর্বলতাও। বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল যেমন অতি রোনালদো নির্ভর, স্পেন তেমনি বিশ্বকাপ শুরুর আগেরদিন কোচ ছাঁটাই করে কঠিন সময়ে। আর মরক্কো, ইরানের ক্ষেত্রে বলা যায় নির্দিষ্টি দিনে তার প্রতিপক্ষের কতটা কঠিন পরীক্ষা নিতে পারবে, সেটার ওপর নির্ভর করছে বাকিকিছু।
দেখে নেয়া যাক এই গ্রুপের চার দল কে কি অবস্থায় থেকে বিশ্বকাপ শুরু করছে।
পর্তুগাল
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ৬ বার
সেরা সাফল্য: ১৯৬৬ বিশ্বকাপে তৃতীয় ও ২০০৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল
ফিফা র্যাঙ্কিং: ৪
সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার ৩৩ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর খুব সম্ভবত এটাই শেষ বিশ্বকাপ। পর্তুগিজদের জাগিয়ে দিতে এই একটা কারণই যথেষ্ট। অধিনায়ককে স্মরণীয় বিশ্বকাপ উপহার দিতে নিশ্চয় কার্পণ্য করবেন না দলটির বাকি ফুটবলাররা।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই পরীক্ষা দিতে হবে স্পেনের বিপক্ষে। গ্রুপসেরা নির্ধারণ করা ম্যাচ। আবার শুভসূচনা করার চাপও সঙ্গী হবে। আইভোরিয়ান ডার্বিতে চোখ রাখলে রোনালদো নিশ্চিত ভাবেই দলের প্রাণ। তাকে সঙ্গ দেবেন আন্দ্রে সিলভা ও জোয়াও মারিওরা। গত বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয়া পর্তুগিজরা নিজেদের প্রমাণ করতে চাইবেন এবার। কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের অধীনে পর্তুগাল যে একটি দল হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ ২০১৬ ইউরো জয়।
কোথায় শক্তি?
দলে আছেন এক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যেকোনো পরিস্থিতে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। দুই বছর আগে ইউরো জিতে দেখিয়েছে, বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত তারা। একঝাঁক তরুণ ফুটবলার আছেন যারা জ্বলে উঠতে পারেন যেকোনো ম্যাচেই।
কোথায় দূর্বলতা?
রোনালদো যদি শক্তি হন, তবে রোনালদোই পর্তুগালের বড় দূর্বলতা! মেসির ওপর যেমন আর্জেন্টিনার ভার, তেমনি পর্তুগাল চেপে আছে রোনালদোর কাঁধে। অধিনায়কের কোনোপ্রকার নিষ্প্রভটা বিপদ ডেকে আনতে পারে দলের জন্য। তার উপর ইউরোজয়ী দলটির ১০ জন থাকছেন না বিশ্বকাপ দলে। তাতে অভিজ্ঞতার খানিকটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে সান্তোসের দলে।
স্পেন
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ১৪ বার
সেরা সাফল্য: ২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ১৯৫০, ১৯৮৬, ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল
ফিফা র্যাঙ্কিং: ১০
২০১৪ বিশ্বকাপের দুর্যোগ ভুলে ৩২ দলের মধ্যে অন্যতম সেরা শক্তিশালী দল নিয়ে রাশিয়ায় গেছে স্পেন। যে দল নিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছিল স্প্যানিশরা, এবারের দলটা যেন সেই পথেই হাঁটছে।
বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ স্পেন দল। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জেরার্ড পিকে, সার্জিও রামোসদের সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদ মাতানো ইস্কো, লুকাস ভাসকেজ, ডিয়েগো কস্তাদের নিয়ে স্পেনের দলে ঘাটতি খুঁজে পাওয়া দায়। কী রক্ষণ, মাঝমাঠ কিংবা আক্রমণ; মূল একাদশ সাজিয়েও সাইডবেঞ্চেও প্রতিভার ছড়াছড়ি লা রোজাদের।
২০১৬ সালে ইউরো বিপর্যয়ের পর দায়িত্ব পান হুলেন লোপেতেগি। দায়িত্ব নিয়েই দলকে সাজিয়েছেন এক সুতোয়। বিশ্বকাপ শেষে রিয়ালের কোচ হতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণার পর অবশ্য বিশ্বকাপের ২৪ ঘণ্টা আগে চাকরি গেছে লোপেতেগির। সাবেক কোচের অধীনে কোনো ম্যাচ হারেনি সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা।
কোথায় শক্তি?
বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল বলা হচ্ছে স্পেনকে, সবচেয়ে অভিজ্ঞও। প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে দলটি দেখিয়ে শিরোপার বাইরে আর কোনো চিন্তাই নেই রাশিয়ায়।
কোথায় দূর্বলতা?
শিরোপার চিন্তাই চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে স্পেনের। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম ‘হয় জিত নয় মরো’! অবশ্য স্পেনের মতো দলের কাছে শিরোপা ছাড়া আর কিইবা চাওয়ার সমর্থকদের! তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কোচ কাণ্ড। লোপেতেগির হঠাত বিদায়ের ধাক্কা সামলে কতটা গুছিয়ে কঠিন পরীক্ষার পথ পাড়ি দিতে পারে স্পেন, সেটাই এখন দেখার।
ইরান
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ৪ বার
সেরা সাফল্য: কখনোই গ্রুপপর্ব পেরাতে পারেনি ইরান
ফিফা র্যাঙ্কিং: ৩৪
কখনোই নকআউটে খেলার স্বাদ না পাওয়া ইরান এবারও পারবে না এমন নয়। আবার গ্রুপে দুই ইউরোপীয় জায়ান্ট স্পেন-পর্তুগালকে টপকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া বেশ কঠিন এটা মেনেই এগোতে হবে ইরানকে।
ইরান সাউথ কোরিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে এশিয়া থেকে সবার আগে বিশ্বকাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করেছে। পার্সিয়ানরা অপেক্ষায় থাকবে অঘটনের।
কোথায় শক্তি?
বিশ্বকাপে ভালো করার মতো শক্তিশালী রক্ষণ আছে ইরানের।
কোথায় দূর্বলতা?
রক্ষণ না হয় সামলানো গেল, কিন্তু গোল করবেন কে? ইরানের এখানেই মাথাব্যথা। একজন বিশ্বমানে স্ট্রাইকারের অভাব আছে এশিয়ান দলটির।
মরোক্কো
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ৪ বার
সর্বোচ্চ সাফল্য: ১৯৮৬ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্ব
ফিফা র্যাঙ্কিং: ৪৮
মরক্কো তাদের শেষ বিশ্বকাপ খেলেছে ১৯৯৮ সালে। রাশিয়ার বিমানে উঠতে তারা পেছনে ফেলে এসেছে আইভরী কোস্টের মতো দলকে।
নিয়মিত বিশ্বকাপে খেলা দল নয় মরক্কো। শক্তিতে খুব একটা পিছিয়ে নেই আফ্রিকান দলটি। অধিনায়ক ও সেন্টারব্যাক মেধি বেনাতিয়া খেলেন জুভেন্টাসে। আয়াক্সে খেলা হাকিম জিয়েখকে নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে এভারটন ও লিভারপুলের মধ্যে। স্পেন ও পর্তুগালকে চমকে দেয়ার মতো সক্ষমতা আছে দলটির।
কোথায় শক্তি?
মরক্কো দল হিসেবে বেশ গোছানো। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াও দারুণ।
কোথায় দুর্বলতা?
দলটিকে ভোগাবে একজন যোগ্য স্ট্রাইকারের অভাব।
এই গ্রুপ হতে দ্বিতীয় রাউন্ডের সম্ভাব্য দল
গ্রুপ ‘বি’ থেকে সামর্থ্য আর পরিসংখ্যান এগিয়ে রাখছে স্পেনকে। পর্তুগালও খুব একটা পিছিয়ে নেই। বাজির দরে এ দুই দলই এগিয়ে। তবে নিজেদের দিনে চমক দেখাতে পারে মরোক্কো, ইরানের যে কেউ।
গ্রুপ সূচি-
জুন ১৫: মরোক্কো-ইরান (রাত ৯টা)
জুন ১৫: স্পেন-পর্তুগাল (রাত ১২টা)
জুন ২২: পর্তুগাল-মরোক্কো (সন্ধ্যা ৬টা)
জুন ২২: স্পেন-ইরান (রাত ১২টা)
জুন ২৫: পর্তুগাল-ইরান (রাত ১২টা)
জুন ২৫: স্পেন-মরোক্কো (রাত ১২টা)