লেনদেন সহজ বলে দিন দিন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা। কিন্তু বেশিরভাগ গ্রাহক নিবন্ধন করে কোনো রকম লেনদেন করছেন না। আর এ কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে অসংখ্য হিসাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার। বাকি ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৮৩ হাজার বা প্রায় ৬৩ শতাংশ হিসাবই নিষ্ক্রিয়।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী; ১ মাসে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ১৪ লাখ ১৭ হাজার। সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার। বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে।
তবে গ্রাহক সংখ্যা ধারাবাহিক বাড়লেও সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা উল্টো কমেছে। টানা ৩ মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই হিসাবে অক্টোবর শেষে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার, যা মোট গ্রহকের ৩৭ শতাংশ। আগের মাস সেপ্টেম্বরে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এমএফএস-এ গত অক্টোবরে ৭৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৪১টি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা আদান-প্রদান হয়েছে। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৯০ জন।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, মোবাইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বা দ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। সব শ্রেণি পেশার মানুষ যুক্ত হচ্ছে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।
গত অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সরকারি পরিশোধ ১০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৬০৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।