সূর্যটা নেমে এসেছিলো পৃথিবীর কাছে, বুধ গ্রহটা আমন্ত্রণ জানাচ্ছিলো পৃথিবীবাসীকে গ্রহটিতে আরো বেশি অভিযান পরিচালনার জন্য। ভিনগ্রহ থেকেও যেন কে এসে শোনাচ্ছিল কথা। পুরো মহাবিশ্বটাই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে প্রসাদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
দুই দিন ব্যাপি বিজ্ঞান মেলা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা। সেখানেই মহাবিশ্ব নিয়ে মঞ্চনাটক করে ১৪ জন শিক্ষার্থী। নাটকে নাটকে আমাদের এই ছায়াপথে থাকা গ্রহ, নক্ষত্র থেকে মহাবিষ্ফোরণ ও ভিনগ্রহ হয়েই তাদের সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছিলো খুদে বিজ্ঞানীরা। আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার আয়োজিত এই মেলায় বেছে নেওয়া হয় স্কুলসেরা বিজ্ঞানকর্মীও।
১৭ ও ১৮ মে, দুই দিনের মেলার ওই আয়োজনে কী ছিলো না শিক্ষার্থীদের জন্য। ঢাকা থেকে যাওয়া আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের দুই প্রশিক্ষক তরুণ বিজ্ঞানী শাহাবুদ্দিন সামি ও ওয়ালটনের মোবাইল ফোন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে কর্মরত মুরাদুল ইসলাম মনু মেলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের দেখান নিজেদের তৈরি করা তিনটি প্রজেক্ট।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া প্রায় পাঁচশোরও বেশি শিক্ষার্থী দলে দলে ভাগ হয়ে পরিদর্শন করেন সেসব প্রকল্প।
পরের দিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পালা। এবার শিক্ষার্থীদের প্রজেক্টগুলো তৈরি করা শিখিয়ে দেন এই দুই প্রশিক্ষক। তবে কেবল প্রজেক্ট প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ নেওয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিলো না এই মেলা। ছিলো আরো নানান আয়োজন। বিজ্ঞানপ্রেমী এবং আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের সহ-উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর সুর দিনব্যাপিই সব শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখেন বিজ্ঞান আড্ডার মাধ্যমে। খেলা আর গল্পের মধ্যে দিয়ে তাদের সামনে তুলে ধরা হয় বিজ্ঞানের মজার মজার দিক।
আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের বিজ্ঞানকর্মী আফরোজা খাতুন এবং আফিফা খাতুনও অংশ নেন বিজ্ঞান আড্ডায়। দুইদিনব্যাপী চলমান বিজ্ঞান আড্ডাতে ছিলো উপস্থিত বিজ্ঞান বক্তৃতার আয়োজনও। বিজ্ঞানী হতে গেলে তো কেবল পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়ন পড়লেই হয় না, মনোবিজ্ঞান পড়েও কেউ হতে পারে মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞান পড়ে হতে পারে সমাজবিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে হতে পারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তাই কে কোন বিজ্ঞানী হয়ে এই এলাকার কোন ধরনের উন্নয়নের অংশীদার হতে চায় সেই বিষয়েই চলে উপস্থিত বিজ্ঞান বক্তৃতা।
বিজ্ঞান মেলার আয়োজক আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের সহ-উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর সুর বলেন, জীবন ও জগতকে বোঝার একটি প্রক্রিয়া বিজ্ঞান। আমরা চাই, আড্ডা-আলাপ, খেলা ও মেলার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে শিশু-কিশোরদের কাছে জনপ্রিয় করতে। শিশুদের কৌতুহলী মনকে আরও উৎসাহী করতে। আগামী প্রজন্ম যেন অহেতুক বিজ্ঞানভীতিতে না ভুগে বরং যুক্তি, বোধ ও বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে সত্যিকারের মানুষের পৃথিবী গড়ে তোলে।
প্রসাদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকবর আলী বলেন, এই ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চায় আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করবে।
বিজ্ঞানমেলার আরেকটি মূল আকর্ষণ ছিলো বইমেলা। বইমেলায় প্রদর্শিত হয় আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের বিজ্ঞানকর্মীদের লেখা বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন মজার মজার বই।
আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার আয়োজিত ২০১২ সালের সেরা বিজ্ঞানকর্মী মাহফুজ রহমান, ২০১৩ সালের সেরা বিজ্ঞানকর্মী মাসুম আলী ছাড়াও প্রধান দুই প্রশিক্ষককে সহযোগিতা করেন ইনজামামুল হক এবং আবদুল্লাহ গালিব।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আকবর আলী, সহকারী শিক্ষক আব্দুল মোকিম, আজিজুর রহমান।
এবছর নির্বাচিত স্কুলসেরা বিজ্ঞানকর্মী নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমাইরা বুশরার হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় অনুবীক্ষণ যন্ত্র, বিজ্ঞান বাক্স ও বই।
আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের বিজ্ঞানকর্মী মোস্তাকিম আলী, ইকবাল হোসেন এবং দুই প্রশিক্ষক মিলে বেছে নেন স্কুল সেরা বিজ্ঞানকর্মী, যৌথভাবে দ্বিতীয় এবং যৌথভাবে তৃতীয় বিজ্ঞানকর্মীকে। যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে লুবনা জাহান ও ইসরাত জাহান। যুগ্মভাবে তৃতীয় হন মাহমুদা খাতুন ও হিমু।
আয়োজনে বেছে নেওয়া স্কুলসেরা আগ্রহী শিক্ষার্থী, সেরা উপস্থিত বিজ্ঞানবক্তা ও সেরা প্রশ্নকারী শিক্ষার্থীকেও। ১৮ মে শেষ হয় দুইদিনব্যাপী এই বিজ্ঞানমেলা।
ছবি: আফিফা খাতুন ও সোহেল।