আজ বাংলাদেশের ৫০তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী দশদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের নেতা রাষ্ট্র নায়ক সরাসরি ও ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মেদির উপস্থিতিতে সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। আজকের দিনে সুখী-সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেবেন এদেশের কোটি জনতা। স্বাধীনতার ৫০তম এই মহান দিবসে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে কৃতজ্ঞ জাতি।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয় এবং এরপর নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্জন করে স্বাধীনতার সোনালী সূর্য। এর আগের দিন ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। হামলা শুরু হওয়ার পরই স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নির্বিচারে বাংলার বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মূহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
নয়মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে পৃথিবীর মানচিত্রে। এই স্বাধীন দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের এই দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
এমন সময়ে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষও। এর মধ্যেই মাসখানেক আগে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: বিগত ১২ বছরে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।
তিনি বলেন: গড় আয়ু, লিঙ্গ সমতা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার, নারী ও শিশু মৃত্যুহার, স্যানিটেশন, খাদ্য প্রাপ্যতা – ইত্যাদি নানা সূচকে বাংলাদেশ শুধু তার প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সাথে আমরা একমত। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নানা সূচকে বাংলাদেশ শুধু তার প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখার শপথ নিতে হবে সুবর্ণজয়ন্তীতে। আমরা মনে করি, যে চার মূলনীতি (গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র) এর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; তা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে পারলে অগ্রযাত্রা আরও গতি পাবে। এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
জাতির পিতার দেখানো পথ ধরে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো আজকের দিনে এই আমাদের প্রতিজ্ঞা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই ক্ষণে সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।