ঈদের নাটক। শুটিং, এডিটিং নিয়ে তাড়া। এদিকে লোকেশন কারওয়ান বাজার গিঞ্জির ভেতর। মুরগির আড়ৎ-এ। রিয়েলেস্টিক লোকেশন। একেতো নোংরা পরিবেশ, তার উপর দুর্গন্ধ। লাইট, ক্যামেরা মেম্বার থেকে শুরু করে আর্টিস্ট, সবাই লোকেশন জেনেই কাজে এসেছেন। তবু এমন বাস্তবতার মুখোমুখি পড়বেন কেউ হয়তো ভাবেনওনি। কথা ছিলো চারদিনের মধ্যে শেষ করবেন শুটিং। কিন্তু বাগড়া দেয় কখনো ভয়ঙ্কর রোদ, আবার কখনো বৃষ্টি। এভাবেই প্রতিকূল পরিবেশে টানা ছয়দিনের শুটিংয়ে শেষ হয় চ্যানেল আইয়ের জন্য ঈদের বিশেষ নাটক ‘মুরগি মতিন’-এর। আর এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও দক্ষ ক্যাপ্টেনের ভূমিকা পালন করেন আবু শাহেদ ইমন।
হ্যাঁ। বহুল প্রশংসিত ‘গোল্ডেন এ প্লাস’-এর পর চ্যানেল আইয়ের জন্য ফের নাটক নিয়ে আসছেন ‘জালালের গল্প’ নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন। নাটকের নাম ‘মুরগি মতিন’। চ্যানেল আইয়ে দেখানো হবে ঈদের ৬ষ্ঠ দিন বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে।
মা-বাবার প্রত্যাশার চাপে কীভাবে শিশুদের শৈশব বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে, রেজাল্ট নিয়ে বাবা-মায়ের চাপে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে কী করে শিশু কিশোররাও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এমনটাই সুনিপুন ভাবে গত বছর ঈদুল আযহায় ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ নাটকে তুলে ধরেছিলেন নির্মাতা ইমন। সেসময় বাংলা নাটকের বিভিন্ন গ্রুপে অনেকেই নাটকটি নিয়ে রিভিউ লিখেন। নাটকটির বিষয়বস্তু, উপস্থাপনা, গল্প বলার ঢঙ, নির্মাণ নিয়ে আলোচনা চলে। বেশ প্রশংসা কুড়ান আবু শাহেদ ইমন। এমনকি ‘বড় ছেলে’র ডামাডোলে ঈদের অন্যতম সেরা কাজ ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ না হলেও এখন পর্যন্ত ইউটিউবে নাটকটি প্রায় ১৪ লাখ বার ভিউ হয়েছে। আর এমন কাজের পর ছোট পর্দায় এবার কী নিয়ে আসেন সেদিকেতো অনেকের খোঁজ খবরতো থাকবেই! কিন্তু ‘মুরগি মতিন’ নাম শুনেই অনেকের চোখ কপালে!
দর্শকের এমন আচরণে বিস্মিত নন নির্মাতাও। তার সরল স্বীকারোক্তি, ‘মুরগি মতিন’ থিমেটিক একটি কাজ। গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে মাদক নিয়ে যা ক্রমাগত ঘটে চলেছে, সেসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই একটু রঙ চড়িয়ে , একটু স্যাটায়ের মেজাজে বলা এই নাটকের গল্প। নাটকে মুরগি মতিন মূলত একজন ড্রাগ ডিলার। যে মুরগির ভেতর ড্রাগ পাচার করতে করতে এক সময় বিখ্যাত ড্রাগ ডিলারে রূপ নেয়। কিন্তু উনার জীবনের ক্রাইসিসটাই হচ্ছে উনার নামের আগে কেনো ‘মুরগি’ দেয়া হলো!
‘গোল্ডেন এ প্লাস’ একেবারে সিরিয়াস ধরনের একটি নাটক। মধ্যবিত্তের ভেতরের ইমোশন দিয়ে নির্মিত। তাই সব শ্রেণির মানুষের প্রশংসা পেয়েছে। সেই জায়গা থেকে ‘মুরগি মতিন’ কিছুটা কমেডি ঘরানার। সিরিয়াস ড্রামা থেকে সোজা কমেডিতে কেনো?-এমন প্রশ্নে আবু শাহেদ ইমন জানান, টিভির জন্য ড্রামা যখন আমরা বানাই, আমার মনে হয় সবার আগে কনটেম্পরারি বিষয়ই আমাদের মাথায় আসে। তারচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এক্সপেরিমেন্টাল অব স্টাইল। টিভি নাটকে এটা করা যায়। এ মাধ্যমে আমি খুব কম কাজ করি। বছরে একটা কি দুটি করলেও সেটা জাস্ট স্টাইল প্র্যাকটিসের জন্য করি। আর কমেডি জনরা নিয়ে আমার একদম কাজ করা হয়নি। ‘মুরগি মতিন’-এ যে স্টাইল অব অ্যাক্টিং পারফর্মেন্স, এটা কিন্তু আমার অন্য নাটকে কিংবা সিনেমায় নাই। এমনটা যদি অন্য কারো কাজ দেখতে গিয়েও দেখি তবু খুব বেশীক্ষণ নেয়া যায় না। তারপরও আমি এবার ‘মুরগি মতিন’ দিয়ে এই জনরাটা এক্সপেরিমেন্ট করলাম। এখন দেখি দর্শক কীভাবে নেয়!
কমেডি ঘরানার হলেও ‘মুরগি মতিন’-এ গড়পরতা কমেডির বাইরে ভিন্ন কিছু পাবেন দর্শক এমন আশাবাদ জানিয়ে নির্মাতা আরো বলেন, নাটকটিতে অনেক বক্তব্য আছে। ভাঁজে ভাঁজে স্যাটায়ার আছে। একজন আন্ডারগ্রাউন্ড গডফাদারের লাইফ আছে। ‘মুরগি মতিন’ খুবই হাইপার স্টোরি। আমার নির্মিত ‘জালালের গল্প’ বা ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ বা আমার যতো কাজ আছে এগুলো থেকে একদম ভিন্ন একটি কাজ ‘মুরগি মতিন’। আমার একটি চলচ্চিত্র ছিলো ‘কন্টেইনার’। যা ছিলো সাইলেন্ট। আর ‘মুরগি মতিন’ ঠিক তার উল্টো। এ নাটক ডায়ালগে ভরপুর। ডায়ালগ নিয়েও আমি বেশ এক্সপেরিমেন্ট করেছি এই নাটকে।
‘মুরগি মতিন’-এর ক্যামেরায় ছিলেন রাজিন মনির। আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে ‘গোল্ডেন এ প্লাস’-এর মতোই আছেন দীপক সুমন। এছাড়াও নাটকটিতে দেখা যাবে পায়েলিয়া পায়েল, শারমিন আঁখি, সজলসহ আরো অনেকে।