ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে সপ্তাহখানেক ধরেই আলোচিত এক নাম ‘ক্রিপ্টোকিটিজ’। এটি মূলত একটি গেম যা কাজ করে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথারিয়ামের ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে। ২৮ নভেম্বর এই গেমটি চালুর পর থেকেই গেমাররা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে গেমটি খেলার জন্য।
ক্রিপ্টোকিটিজ গেমে একজন গেমার ভার্চুয়াল পোষা বিড়াল কিনে থাকে এবং এই বিড়ালটি বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। ক্রিপ্টোকিটিজের পোষা বিড়াল কেনার জন্য গেমাররা খরচ করছেন হাজার হাজার ডলার মূল্যের ইথার (ইথারিয়াম ব্লকচেইনের ভ্যালু টোকেন)।
তবে লেনদেনের এই বিপুল চাপ বইতে পারছে না ইথারিয়ামের ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক। ফলশ্রুতিতে বিপুল পরিমাণ লেনদেন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আটকে আছে।
এক প্রতিবেদনে ইথারস্ক্যান জানিয়েছে, গেমটি চালু হওয়ার পর নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৬ গুন।
ক্রিপ্টোসেলস নামের একটি ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত এই গেমটি খেলার জন্য গেমাররা ব্যয় করেছে প্রায় ৬০ লাখ ডলার। প্রতি মুহূর্তেই এই লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।
ক্রিপ্টোকিটি কী?
ইথারিয়াম ব্লকচেইন ব্যবহার করে তৈরি করা ভার্চুয়াল বিড়াল। এই গেমের প্রতিটি প্রাণীই একেবারে ইউনিক, একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। প্রতিটি ক্রিপ্টোকিটিরই আছে ২৫৬ বিটের জিনোম কোড।
সাধারণ প্রাণীর মতো ক্রিপ্টোকিটির মাঝেও আছে দুটি আলাদা লিঙ্গের বিড়াল যা ভার্চুয়ালি বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। বিড়ালগুলোর ডিজিটাল ডিএনএ’র মাধ্যমে ৪০০ কোটি পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া সম্ভব।
কিছু কিছু ক্রিপ্টোকিটি দেখলে মনে হতে পারে জীবন্ত কোনো বিড়ালের ছবি।
একটি ক্রিপ্টোকিটির দাম কতো?
বিভিন্ন দামের কিটি রয়েছে। সর্বনিম্ন এক ডলারেরও কম মূল্যের কিটি যেমন আছে, তেমনি আছে এক লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের কিটি। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় কিটি হলো ‘জেনেসিস’। একেবারে আদি প্রজন্মের (জেনারেশন জিরো) এই কিটি প্রথম বিক্রি হয়েছিল ২৪৬.৯ ইথারে (প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার ডলার)।
ক্রিপ্টোকিটি কেনার জন্য কেবল ইথারই ব্যবহার করা যায়। এজন্য শুরুতেই ব্রাউজারে মেটামাস্ক নামের একটি ওয়ালেট ইনস্টল করে নিতে হয়। এরপর কোনো এক্সচেঞ্জ থেকে ওয়ালেটটি রিচার্জ করে নিয়ে খেলতে হবে ক্রিপ্টোকিটিজ।
এতো কিটি আসে কোথা থেকে?
গেমটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এক্সিয়ম জেন প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে কিটি বিক্রি করে। এর বাইরে আগের প্রজন্মের যেসব কিটি রয়েছে, সেগুলোর বংশবৃদ্ধির মাধ্যমেও বিপুল সংখ্যক কিটির জন্ম হচ্ছে যা কিনছে অন্যরা।
কেউ যখন একটি কিটি কিনে নিচ্ছে, তখন সেটি যুক্ত হয়ে যাচ্ছে ইথারিয়ামের ব্লকচেইন। ফলে যতদিন না পর্যন্ত সেটি বিক্রি করা হচ্ছে, ততদিন ওই কিটির মালিকানায় কোনো পরিবর্তন আসবে না, এমনকি যদিও গেমটি বন্ধও হয়ে যায়।
কেন ধীরগতির হচ্ছে ইথারিয়াম?
মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে প্রতিটি লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য আলাদা খরচ রয়েছে। লেনদেন যত দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে, এই খরচ তত বেশি। ইথারিয়াম নেটওয়ার্কের মোট লেনদেনের ১০ শতাংশই এখন হচ্ছে এই গেম খলার জন্য। আর তাতে করে অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক লেনদেন জমে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে চাইলে ইথারিয়ামের খরচও তাতে বাড়বে।
তবে ক্রিপ্টোকিটিজ জানিয়েছে, সমস্যা সমাধানে প্রতিটি কিটির জন্মের খরচ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিয়েও কাজ করার কথা জানিয়েছে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।