বিপিএলে এলিমিনেটর ম্যাচ মানেই হেরে যাওয়া দলের বিদায়, আর জয়ী দলের ফাইনালে ওঠার পরীক্ষায় টিকে থাকা। এমন সমীকরণের ম্যাচে গেইল ঝড়ে খুলনা টাইটানসকে উড়িয়ে টিকে থাকল রংপুর রাইডার্স। মাশরাফীর দল ১৬৮ রানের টার্গেট টপকে গেছে ২৮ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখেই।
শুক্রবার দিনের ম্যাচ হলেও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে ফ্লাডলাইটের আলোয় ব্যাটিং করতে হয়েছে খুলনাকে। একদিকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, তার উপর টস হার; মাশরাফী-রুবেল-মালিঙ্গা সমৃদ্ধ পেস আক্রমণের সামনে কঠিন পরীক্ষার অপেক্ষাই ছিল টাইটানসের ব্যাটসম্যানদের। পরীক্ষায় কেউ খুব বেশি সফলও হলেন না, হলেন না ব্যর্থও। দলীয় প্রচেষ্টার এক ইনিংসে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় খুলনা। সেই লক্ষ্যে গেইলের তাণ্ডবে ছেলেখেলা করেই জিতে গেল রংপুর।
আগামী রোববার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মাশরাফীদের প্রতিপক্ষ হবে ঢাকা ডায়নামাইটস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মধ্যকার শুক্রবারের সন্ধ্যার প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে যাওয়া দল।
বিপিএলের চলতি আসরে দুটি ফিফটি পেয়েছেন ক্রিস গেইল। তবে ফিফটি করেই ফিরেছেন সাজঘরে। এবার খুব প্রয়োজনের মুহূর্তে ইনিংস টেনে নেয়ার কাজটা করে দেখালেন। রংপুর টুর্নামেন্ট জুড়েই ধুঁকে ধুঁকে এতদূর এসেছে। খাদের কিনারায় থাকা সেই দলটিই এদিন অন্যরকম হয়ে ধরা দিল তার সৌজন্যে।
গেইলের জ্বলে ওঠা ইনিংসটি অপরাজিত থাকল ১২৬ রানে। ৫১ বলের ইনিংস, ১৪ ছয় ও ৬ চারে সাজানো। অনেক রেকর্ডের বিধ্বংসী এক ইনিংস।
ওপেনিংয়ে নামা সোহাগ গাজী (১) ও পরে ম্যাকাকালাম (০) দ্রুত ফিরে শঙ্কা জাগিয়েছিলেন। ২৫ রানেই রাইডার্সদের ছিল না দুই উইকেট। জফরা আর্চার নিজের প্রথম ওভারেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে আতঙ্ক বাড়ান রংপুর শিবিরে। পরের ওভারেই অবশ্য আর্চার দিয়ে বসেন ১৯ রান। ইনিংসের তখন পঞ্চম ওভার। ম্যাচ ঘোরানো ওভারটিতে গেইল মারেন একটি ছয় ও দুই চার। তাতে দলীয় ফিফটি চলে আসে ৫.১ ওভারে।
পরের গল্পটা কেবলই গেইলের। গেইল শো চলতে থাকে ম্যাচ পকেটে আসা পর্যন্ত। ক্যারিবীয় ব্যাটিংদানব সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৪৫ বলে। তখন ১০টি ছয় ও ৬টি চারের মার ছিল। পরে সেটি পৌঁছায় ১৪টি ছয়ে। বিপিএলে কারও এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয়।
এটি বিপিএলে গেইলের চতুর্থ সেঞ্চুরি। প্রথম আসরে দুটি ও দ্বিতীয় আসরে একটি শতক হাঁকিয়েছিলেন এই বাঁহাতি। পরের বছর হাঁকান আরও একটি। গত দুই আসরে সেঞ্চুরি পাননি। এবার এলিমিনেটর ম্যাচে এসে আক্ষেপ মেটালেন। সেই সঙ্গে বিপিএলের পঞ্চম আসরের সেঞ্চুরিখরাও ঘোচালেন।
বিপিএলে এটি গেইলের সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ১১৪ রানের। যেটিতে বিপিএলের আগের সর্বোচ্চ ১২টি ছক্কা হাঁকান। এদিন বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের স্কোরের মালিক বনেও গেছেন গেইল। সাব্বির রহমানের ১২২ কে টপকে গেছে গেইলের ১২৬।
রংপুরের দারুণ জয়ে অবদান আছে আরেকজনের। সিঙ্গেলসে খেলে প্রান্ত বদলে গেইলকে স্ট্রাইক দিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ মিথুন। শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন মিথুন, গেইলের সঙ্গে ১৪৬ রানের জুটি গড়ে। বিপিএলে যেটি তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি।
এর আগে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছিল রংপুরের বোলাররা। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারের মধ্যে দুই তরুণ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে রান আটকে রাখেন তারা। এসময় খুলনার উদ্বোধনী শান্ত ১৫ ও ওয়ানডাউন আফিফ ১১ রানে ফিরে যান।
তখন রান বাড়ানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ঝড় তোলেন মাহমুদউল্লাহ। তার ৬ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ২০ রানের ইনিংসটিও অবশ্য দ্রুতই থেমে যায়। অবশ্য তার আগেই দলীয় ফিফটি পেয়ে যায় খুলনা, ৬.১ ওভারে।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে রানের চাকা থেমে যায় আবারও। দলীয় রান তিন অঙ্ক পেরোয় ১৩.৫ ওভারে। তবে শেষদিকে ব্র্যাথওয়েট ও পুরান ঝড় তুলে সংগ্রহ দেড়শ পেরিয়ে নেন।
মাঝে ইনফর্ম আরিফুল হক ৩০ বলে ২৯ রান করে ফেরেন সাজঘরে। বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে বেশ কয়েকটি বাউন্ডারি পেয়ে যাওয়া ব্র্যাথওয়েট শেষ পর্যন্ত ৯ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন, ৩ চার ও এক ছয় এসেছে তার ব্যাটে। আরেক ক্যারিবিয়ান পুরার ২২ বলে ২৮ করে মালিঙ্গার বলে ফিরেছেন।
মালিঙ্গা ২টি উইকেট পেয়েছেন। একটি করে উইকেট গেছে সোহাগ গাজী, নাজমুল ইসলাম, রুবেল হোসেন ও রবি বোপারার দখলে। উইকেটহীন থাকেন মাশরাফী, তবে রান দেয়ায় সবচেয়ে কিপটে ছিলেন এই পেসার; ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৩ রান।