চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

গৃহশিক্ষকের হাতেই খুন হয় শিশু রাকিন

গৃহশিক্ষক পারভেজ শিকদার পরিকল্পিতভাবে শিশু সাদমান ইকবাল রাকিনকে অপহরণ করে খুন করে। গত দুই বছর ধরে রাকিনের বাসায় গৃহশিক্ষক ছিল পারভেজ।

রোববার গাজীপুরের শ্রীপুর ও জয়দেবপুর হতে শিশু রাকিন (১০) হত্যার মূল আসামি পারভেজ শিকদার (১৯) ও ফয়সাল আহমেদকে (১৮) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১।

সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র‍্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম।

তিনি বলেন, পারভেজ শিকদার দুই বছর যাবত রাকিনকে প্রাইভেট পড়াতো। টেলিভিশনে বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ক সিনেমা নাটক বিশেষত ক্রাইম পেট্রোল দেখে রাকিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করতে থাকে পারভেজ।

গত ছয় মাস আগে রাকিনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য বাসা থেকে রাকিনের বাবার মোবাইল চুরি করে।

‘পারভেজ পরিকল্পনা করে যে ভুক্তভোগীর বাবা ব্যবহৃত মোবাইল দিয়ে অপহরণের পর তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে খুব সহজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়া যাবে। এমনকি মোবাইলের কল ডিটেইলস থেকে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় গত ৬ মাস থেকে সে মোবাইল বন্ধ রেখেছিল এবং অন্য কোথাও ফোন কল করেনি।’

সারোয়ার কাশেম বলেন, রাকিন হত্যার প্রধান আসামি পারভেজ গতবছর এলাকার ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এগ্রিকালচার ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়। তার পিতা মানসিক ভারসাম্য, মা গৃহিনী এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড় হওয়ায় তার পড়াশুনার খরচ চালাতো নিহত শিশু রাকিনের পরিবার। বিনিময়ে গত দু’বছর ধরে শিশু রাকিনকে প্রাইভেট পড়াতো অভিযুক্ত পারভেজ।

‘অপরজন, ফয়সাল একই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। একই এলাকার হওয়ায় দুজনে একই সঙ্গে গত তিন-চার বছর ধরে বিভিন্ন নেশা করায় ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে তারা। তাই দু’জনে মিলেই রাকিন হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, গত ৫ ডিসেম্বর বিকেলে পারভেজ ও ফয়সাল গোপনে রাকিনকে একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। পরে সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাকিনকে আটকে রাখার চেষ্টা করে।

কিন্তু জঙ্গলের ভেতর রাকিনকে আটকাতে ব্যর্থ হয় তারা। কিন্তু রাকিন ছাড়া পেয়ে গেলে তাদের কথা সবাইকে জানিয়ে দিবে এই ভয়ে তারা দ্রুত তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারা দুজনে শ্বাসরুদ্ধ করে রাকিনকে হত্যা করে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, আসামিরা আগে থেকেই নেশাগ্রস্ত ছিল। যে কারণে তারা যখন এ ঘটনা ঘটাচ্ছিল তাদের মানবিক হিতাহিত জ্ঞান বলতে হয়তো কিছুই ছিল না। তারা যখন ভিকটিমের বাবার কাছে মুক্তিপণ চাইতে ফোন করেছিল তখনই তাদের ফোনের টাকা শেষ।

‘এ অবস্থায় তারা যেখানে টাকা রিচার্জ করেছিল সেখানে কোনো প্রমাণ যেন না থাকে সেজন্য রিচার্জের নম্বরটি ছোট একটা কাগজে লিখে রিচার্জ শেষে সেটি ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়। আর সে কাগজ দিয়েই মূলত তাদের আটক করতে সক্ষম হয়েছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার লোভে পড়েই তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পারভেজ বিভিন্ন সময় ছোটখাটো অপরাধমূলক কাজ করত।

গত ৫ ডিসেম্বর বিকেলে শিশু রাকিনকে অপহরণ করা হয়েছিলো। এর পাঁচ দিন পর তার অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার শিশুটির নিজ বাড়ির বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে।

অপহরণের পর শিশুর বাবা সৈয়দ শামীম ইকবাল গত ৭ ডিসেম্বর শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এমন নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-১। এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।