শেখ হাসিনা মুজিব পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে স্বাভাবিক নিয়ম প্রক্রিয়ায় রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল না। তবে তিনি ছাত্রজীবনে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারপরও যতটা প্রত্যক্ষভাবে পরবর্তীকালে রাজনীতিতে আসেন সেটি কিন্তু হওয়ার কথা ছিল না। প্রকৃতির নির্মম বাস্তবতা ও দায়িত্বের অমোঘ নিয়মে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দেশ পরিচালনার মত গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
তবে রাজনীতির পথটা শেখ হাসিনার জন্য ততটা মসৃণ ছিল না, দেশ রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের জন্য ১৯ বার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে। উগ্রবাদি গোষ্ঠীরা সর্বদাই তৎপর ছিল এবং এখনো রয়েছে কিভাবে শেখ হাসিনাকে দুনিয়া থেকে বিতাড়িত করা যায়। যেকোন মূল্যে যদি শেখ হাসিনাকে সরানো যায় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করে পশ্চিমা বিশ্বের তাবেদারি করার সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে মৌলবাদিদের দ্বারা। যেমনটি আমরা দেখেছিলাম, মীরজাফরের শাসনামলে, শাসনকর্তা ছিল এ দেশীয় কিন্তু কর্তৃত্ব ছিল সম্পূর্ণ ব্রিটিশদের হাতে।
একটু ফ্ল্যাশবাকে আসা যাক, ইডেন কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচন করার সময়ে শেখ মুজিব কারাগারে ছিলেন। সে সময়েই তুমুল প্রতিযোগিতা সম্পন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্বগুণ, দূরদর্শিতা, রাজনৈতিক মনোভাবে দৃঢ়সম্পন্ন হওয়ার কারণে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পেরেছিলেন। তাছাড়া তৎকালিন সামরিক সরকারের রোষানলে ছিল শেখ মুজিবের পরিবার। এ রকম বৈরী পরিবেশে কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভিপি হিসেবে জয়লাভ শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই পরিচায়ক। শেখ হাসিনার রাজনীতিতে হাতেখড়ি কিন্তু ছাত্রজীবন থেকেই হয়েছিলো এবং এখনো তিনি গর্বের সহিত উল্লেখ করেন তিনি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলেন। ঐ সময়টায় শেখ হাসিনার ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ তৎকালিন সময়ে শেখ মুজিবের আন্দোলন সংগ্রামকে আরো বেগবান করে তুলেছিল। বাংলার মানুষের মুক্তি আন্দোলনের চেতনার গতিকে আরো শাণিত করেছিলো।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা এবং প্রায়োগিক সিদ্ধান্তের সঠিকতা বিশ্বের নেতাদের কাছে বিশেষ বার্তা দিয়ে থাকে এবং সকলেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেক বিষয়েই শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিচ্ছন্নতায় ও সাহসিকতায় একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সঠিকতা যাচাই হয়েছে উক্ত বিষয়গুলোতে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত বাবু কোন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এখন আর আমরা শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিতে যাই না, উনি আগের থেকে অনেক প্রজ্ঞাবান এবং উপমহাদেশের রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রতিভার অধিকারী এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কারোর পরামর্শ ব্যতিরেকে। ইতঃপূর্বে শেখ হাসিনার গৃহিত একক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র এবং দলের জন্য সহযোগী উপকরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনাকে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সুপারিশ কিংবা পরামর্শ প্রদান করেন না। কারণ রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় তিনি এতটাই পারদর্শী হয়েছেন যে, নিজের সিদ্ধান্তগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে প্রতিনিয়ত সফলভাবেই।
বাংলাদেশের ইতিহাসের খুব আলোড়ন সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হল: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম হাতে গ্রহণ করা। বিচারের কাজ হাতে গ্রহণ করার শুরু থেকেই দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে হতে ষড়যন্ত্র করে বিচারের কাজকে বাধাগ্রস্থ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। যুদ্ধাপরাধীদের দলের পক্ষ থেকে বিদেশে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে বিচারকে বাধাগ্রস্থ করার হীন উদ্দেশ্যে গর্হিত কাজ করতে দ্বিধা করেনি প্রতারকচক্র। দেশের অভ্যন্তরে জ্বালাও পোড়াও সহ নানাবিধ বিশৃঙ্খলা তৈরির প্রক্রিয়ায় অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে সরকারকে পক্ষাখাতগ্রস্থ করার হীন চেষ্টা করেছিলো একটি বিশেষ জোট।
বিদেশ থেকে লবিষ্ট নিয়োগ ও প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিলো বিচারকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের অনুরোধকে পিছনে ফেলার সাহস দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল বাধা-বিপত্তিকে পিছনে ফেলে বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সমর্থ হয়েছেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতার ভূয়সী প্রশংসা হয়েছিলো। জাতিকে স্বাধীনতার শত্রুদের চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে পেরেছেন। মোদ্দা কথা হলো: শেখ হাসিনার কর্মকান্ডকে এখন অনেকেই নজির হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অন্যান্য দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনার মডেলকে অনুসরণ করে বিচারকার্য পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনা এখন আর উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতা নয়, বৈশিক পরিমন্ডলেও প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বিশ্ব নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে চমকপ্রদ এবং যৌক্তিকতার মিশেলে তথ্যপূর্ণ উপস্থাপনায় শেখ হাসিনার বক্তব্যের সারসংক্ষেপকে মূল্যায়ণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিসরে যা প্রকৃত অর্থেই উল্লেখ করার মত।
অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হল: পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর উপর দুর্নীতির অভিযোগে ঋণের টাকা বাতিল করে দেয়। অথচ যেখানে বিশ্ব ব্যাংক আদৌ কোন টাকা ছাড় দেয়নি সেখানে দুর্নীতির প্রশ্ন তোলাও অবান্তর। কিন্তু শেখ হাসিনা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ছিলেন অটল। অভিযোগের তোয়াক্কা না করে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করার সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অবশেষে, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মিথ্যা প্রমাণ শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্বকে বিশ্ব মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে দালিলিকভাবে। তবে সেসময় দেশীয় গণমাধ্যমের অতিবিলাসী এবং অতিরঞ্জিত খবর তৎকালিন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে পদত্যাগে বাধ্য করায়। তবে বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে গণমাধ্যমের মুখ থুবড়ে পড়ে। এখন পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে, পাশাপাশি ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্রগ্রাম চারলেনের কাজের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কাজের উদ্বোধন এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেনের কাজ চলমান সহ ঢাকা শহরের নির্মিতব্য ফ্লাইওভার এর মাধ্যমে যানজট কমিয়ে আনা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ফলাফল। এসব ক্ষেত্রে তিনি অদ্বিতীয়।
কয়েকটি পরিসংখ্যানিক চিত্রের মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাপী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকশিত চিত্রকে সামান্য হলেও বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। ২০১০ সালের ৮ মার্চ নারী দিবসের শতবর্ষ পালন উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন এশীয়দের মধ্যে ক্ষমতাধর ৮ জন নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিলো সেখানে শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৬ষ্ঠ স্থানে। অন্যদিকে, ২০১০ সালে টাইমস সাময়িকীর অনলাইন ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সেরা ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ ফরচুন ম্যাগাজিনের জরিপে শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দশম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিবেচনার ক্যাটাগরি ছিল: ব্যবসা, সরকার ব্যবস্থা, বিশ্ব প্রীতি ও কলায় যে মানুষগুলি বিশ্বে পরিবর্তন এনেছে এবং একই সঙ্গে অন্যের জন্য এ মানুষগুলি অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বর্তমান বিশ্বের ১৮ জন নারী নেতৃত্বকে নিয়ে “উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিষ্টারস” বইয়ের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার ছবি অনন্য মর্যাদার অংশীদার। লেখক রিচার্ড ও ব্রিয়েন শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে ৩ পৃষ্ঠার নিবন্ধন লেখেন।
তবে শেখ হাসিনার এ অর্জনের পথ মোটেই সুখকর ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর লোমহর্ষক ঘটনার পরে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক উত্তরসূরিদের (প্রবীণ ও নবীন নেতারা) নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে সুযোগ লুটে নেয় সামরিক সরকার। একের পর এক সামরিক সরকাররা ক্ষমতার পালাবদলে কয়েকজন নীতিভ্রষ্ট আ’লীগ নেতাকে সোপান হিসেবে ব্যবহার করে। প্রত্যেক সামরিক সরকারই ক্ষমতায় আরোহন করে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশপ্রেমিক বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিটুকু জাগরুক রাখার প্রত্যয়ে কাজ করেছেন নিরবে নিভৃতে। রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথে সব কিছু হারিয়ে ও বাবার স্মৃতি এবং বাঙালির প্রতি সীমাহীন আবেগের বন্ধনস্বরূপ বাংলাদেশে পদার্পণ করেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশে আসার পরেও খুনি চক্রের দ্বারা বারংবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
শেখ হাসিনা তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান এর সাহস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথকে রুদ্ধ করতে তৎকালিন সামরিক সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। এতগুলো নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হলো অথচ তার বিচার করা হবে না কোন সভ্য দেশে এমনটা কল্পনা করাও দূষণীয় ব্যাপার বটে অথচ সেটি স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটেছিল। দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যদিও ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি সরকার বিচারের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। কিন্তু ২০০৯ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে আ’লীগ সরকার শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বিচার কার্যক্রম শুরু করে এবং আসামীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয় যদিও এখনও ফাঁসির আসামীরা পলাতক অবস্থায় রয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে জনসাধারণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীসহ শেখ মুজিবের ঘাতকদের বিচারের কাঠগোড়ায় দাঁড় করানোর জন্য। এবং একটি বিষয় অতুলনীয় বিচারকার্যে কোন তাড়াহুড়ো না করে স্বাভাবিক নিয়ম প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিচারের কাজকে ত্বরান্বিত করেছিলেন যেন পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন উঠার সুযোগ না আসে। এখানেই শেখ হাসিনা অন্য যে কোন রাজনৈতিক নেতার তুলনায় অনন্য।
১৯৯২ সালে ছাত্রলীগ অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে তিনি কয়েক মাসের জন্য ছাত্র সংগঠনটির সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। অথচ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে ছাত্র সংগঠনকে অনেক রাজনীতিবিদ দলীয় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন ছাত্রদের মধ্যে ভেদাভেদ দূর হউক এবং মেধার ভিত্তিতে দলীয় পদ-পদবি দেওয়ার চর্চা শুরু হোক। তিনি চেয়েছিলেন দলটিকে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত করতে যার কারণেই বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ও তিনি এ রকম একটা কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। শুধু তাই নয় দলের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাংলার জনগণ এবং সিনিয়র নেতাদের অনুরোধে আবেদনপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ রকম কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাংলার রাজনীতিবিদদের সহজে দেখা যায় না, এখনও তিনি দলের হাল ধরার জন্য বিকল্প নেতৃত্ব তৈরির তাগিদ দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। এসব দৃষ্টিকোণ হতে বিশ্বে রাজনৈতিক চর্চায় তিনি অভিন্ন।
আন্তর্জাতিকভাবেও শেখ হাসিনা গৃহিত সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতি যেকোন দেশের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত। এশিয়ার তিন পরাশক্তি চীন, ভারত ও জাপানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার পরিচায়ক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া সহ বিশ্বের নীতি নির্ধারণী দেশগুলোর সাথে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কগুলোও উল্লেখ করার মতই। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ন্যায়, সততা, সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনাকে ধরা হয় এবং স্বয়ং জাতিসংঘ বাংলাদেশের উন্নয়নে বারংবার প্রশংসা করেছেন এবং সে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকৃতঅর্থেই সঠিক পরিকল্পনা, নিয়মানুবর্তিতা, দায়িত্বশীলতা, বিচক্ষণতা এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে বিশ্বে মর্যাদায় শেখ হাসিনার অনন্য সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইত্যবসরে।
সুতরাং, উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, ব্যক্তিগত লোভ লালসার উর্ধ্বে উঠে দেশ এবং দলের স্বার্থে ১৯৮১ সালের ১৭ মে এক বৃষ্টিস্নাত দিনে লাখ লাখ মানুষের জনসমাগমে বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। নানাবিধ সমস্যা, ষড়যন্ত্র দমিয়ে রাজপথের আন্দোলনে বাংলার জনগণকে সম্পৃক্ত করে ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত হন দুঃখী-মেহনতি মানুষের নেত্রী। তিনি দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে জনমত গঠন করেন ভোটের অধিকার আদায় প্রতিষ্ঠার জন্য।
মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন এবং গরিব দুখী মানুষদের নিজের আপনজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ কারণেই তিনি অদ্বিতীয় বাংলার মানুষের মণিকোঠায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় একজন সংগ্রামী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়েও রাতদিন পরিশ্রম করে চলেছেন মানুষের অধিকার আদায় ও বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদাই সচেষ্ট। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্ব ও শেখ হাসিনার অসম জনপ্রিয়তা তাই প্রমাণ করে। পারিবারিক সাদামাটা জীবন হতে শত কষ্ট বেদনা সহ্য করে বর্তমানে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মর্যাদার আসনে আসীন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)