বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা বাংলাদেশের বাঁ হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেকের পর থেকেই যে আলো ছড়ানো শুরু করেছেন তার মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। অনেক রেকর্ডের জন্ম দিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ক্রিকেটের ওডিআই বিশ্ব একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন। মুস্তাফিজের আলোতে নিজেদের আলোকিত করতে দুনিয়ার সব ঘরোয়া দলই তাকে দলে পেতে উম্মুখ।
‘গোল্ড’ ক্যাটাগরিতে থাকা মুস্তাফিজকে প্রথম সুযোগেই বড় অঙ্কের টাকায় (৩৯ লাখ টাকা) কিনে নিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট লিগের (পিসিএল) দল লাহোর কালান্ডার্সে। এই দলে গেইল ছাড়াও মুস্তাফিজের সতীর্থ হওয়ার কথা ডোয়াইন ব্রাভো, ওমর আকমল, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইয়াসির শাহ, শোয়েব মাকসুদের।
তাকে দলে টানতে পাখির চোখ করে রয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দলগুলো।
কিন্তু, এসব দল টাকার বস্তা আর আশার ভেলা নিয়ে বসে থাকলেও পাচ্ছে না কাটার মাস্টারকে। এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের আগে তাকে নিয়ে কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চায় না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। পরেও অতি ব্যবহারে নষ্ট হতে দিতে চায় না।
বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পরিস্কার করেই জানিয়ে দিয়েছেন, পিসিএল-আইপিএল খেলতে বিসিবি থেকে মুস্তাফিজকে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হবে না।
কাঁধ ও পায়ের চোটে জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দু’টি ম্যাচ খেলতে পারেনি মুস্তাফিজ। চলছে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কাজ।
বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে বা কাঁধে ইনজুরিতে পড়া মুস্তাফিজ বর্তমানে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। তাই তার পিএসএল এবং আইপিএলে খেলা হবে না। বিসিবি থেকে তাকে অনাপত্তিপত্রও দেওয়া হবে না।
খেলার সুযোগের পাশাপাশি হাইপ্রোফাইল দুটি টুর্নামেন্টে খেলতে না পারায় বড় ধরনের আর্থিক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন মুস্তাফিজ।
সে ব্যাপারেও অবশ্য কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি। পুরো না হলেও বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বোর্ড সভাপতি।
ক্রিকেট বোর্ড থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, মুস্তাফিজের পিএসএল-আইপিএল না খেলা শুধুই ইনজুরি সংক্রান্ত কারণ নয়। এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও।
বোর্ড সভাপতির আর্থিক প্রণোদনার ইঙ্গিত থেকেই সেটা অনুমান করছেন অনেকে।
বিদেশে ঘরোয়া লীগ খেলে আপাততঃ মুস্তাফিজের গুপ্তধন ‘কাটারের’ গোমর ফাঁস হয়ে যাক সেটা চায় না ক্রিকেট বোর্ড।
গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি২০ দিয়ে অভিষেক হয় মুস্তাফিজের। সেই ম্যাচে তিনি শহিদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজের উইকেট নিয়েছিলেন। টি-২০তে শহিদ আফ্রিদি, ওয়ানেডেতে রোহিত শর্মা এবং টেস্টে হাশিম আমলাকে দিয়ে উইকেটের খাতা খোলেন মুস্তাফিজ।
এর দুই মাস পর জুনে তাকে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। তিন ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি। মুস্তাফিজের বোলিং রহস্য বুঝতে না পেরে ভারতের অলরাউন্ডার রবিচন্দন অশ্বিন বলেছিলেন ‘আমরা তো আর মুস্তাফিজকে কিডন্যাপ করতে পারি না।’
আর বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে দলের সদস্য ও বাঁ হাতি পেসার গোলাম নওশের প্রিন্স মুস্তাফিজকে ‘রত্ন’ উল্লেখ করে যত্ন নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিসিবি সেই যত্ন নিতেই কিছুটা ‘ঝুঁকির’ আশ্রয়ই নিয়েছে।
মুস্তাফিজের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাচ্ছেন বিশ্বে সেরা ব্যাটসম্যানরা। সেই পারফর্মেন্সের সূত্র ধরে কাটার মাস্টারকে নিয়ে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফো’তে ভারতীয় সাংবাদিক আকাশ চোপড়া এক প্রতিবেদনে লিখেছিলেন ‘বিশ্বের সেরা সেরা ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে সফল ও লম্বা রেসের ঘোড়া বিস্ময় বালক মুস্তাফিজ। অমিত বোলিং প্রতিভার অধিকারী মুস্তাফিজের বোলিং রহস্যটা না হয় অজানাই থাক। উন্মোচিত না হোক এ রহস্যের।’ বিসিবিও হয়তো এমনটাই চাইছে!