কলোনী বাসিন্দাদের আবেদন আদালতে নিষ্পত্তির আগেই লালমাটিয়া নিউ কলোনীর তিনটি চারতলা ভবন ভেঙ্গে ফেলেছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদকে অমানবিক বলছে বাসিন্দারা।
আগাম জানান না দিয়ে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান লালমাটিয়া নিউ কলোনীর বাসিন্দারা। ভবন ভাঙ্গার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালত যান কলোনীর বাসিন্দারা। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালত সর্বশেষ সময় দিয়েছিলো আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ।
কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তের আগেই ওই উচ্ছেদকে অবৈধ ও অমানবিক বলছেন বাসিন্দারা।
তারা বলেন, ‘হঠাৎ করে এসেই ভবন উচ্ছেদ শুরু করা হয়। গুন্ডাবাহিনীর নেতৃত্বে এ উচ্ছেদে মা বোনরাও শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়। তাদের টেনে হিচড়ে ভবন থেকে নামানো হয়।’
‘আমরা শুধু বলেছিলাম যে আজকের জন্য এটা অন্তত বন্ধ রাখেন, আমাদের যাওয়ার সুযোগ দেন, তারপর ভাঙ্গেন, কোনো কথা রাখেনি তারা। সুপ্রীম কোর্টের অর্ডার রয়েছে আজকে পর্যন্ত কিচ্ছু করতে পারবে না।
উচ্ছেদের ছবি নেয়র সময় সাংবাদিকদেরও বাধা দেয়া হয়। নারীদের সঙ্গে অশালিন আচরন করা হয় বলে অভিযোগ।
নির্যাতনের শিকার এক নারী বলেন, ‘আমার পরিবারের তিন নারীকে মাথায় আঘাত করে জখম করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা বারোটি হোন্ডা নিয়ে এসে এ আক্রমণ করে।’
এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে উচ্ছেদের সময় গৃহায়ণ কতৃপক্ষের কর্মচারীদের আচরণ ছিলো ঔদ্ধত্যপূর্ণ। পরিবারের সদস্যরা বলছে, উচ্ছেদের মাধ্যমে শুধু আমাদের অবমাননা করা হয়নি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকেও অবমাননা করা হয়েছে।
ওই তিন ভবনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিউ কলোনি সোসাইটি ভবন ভাঙার বিষয়ে স্থগিতাদেশ আছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে গতকাল শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেই শুনানি পিছিয়ে ২১ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করে সকাল থেকে ভবন ভাঙতে শুরু করে।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, উচ্ছেদ করতে আইনানুগ কোনো বাধা নেই। কাগজপত্রে উচ্ছেদে বাধা থাকলে এভাবে উচ্ছেদ করা হতো না। এখানে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত আছেন। তাদের নির্দেশেই সব ধরনের আইন মেনে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
কলোনীর বাসিন্দাদের হয়ে যারা আদালতে আবেদন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকায় উচ্ছেদের সময় তাদের কেউই ছিলেন না।
১৯৬২ সালে সাতটি ভবন নির্মাণের পর থেকে নিউ কলোনিতে অনেকেই বসবাস করছেন। এদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও পরিবার, ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছেন।
১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিলো জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আওতাধীন মোহাম্মদপুরের আসাদগেট নিউ কলোনীতে অর্ধশতাব্দী ধরে বসবাস করা ৭টি ভবনের ১১৪টি পরিবারের কাছেই স্বল্প মূল্যে ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি করতে হবে।
বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ১৮ বছরেও ফ্ল্যাটগুলো কলোনির বাসিন্দাদের নামে বরাদ্দ দেয়নি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ গত বছরের ৬ জুলাই পুরাতন ওই ৭টি ভবন ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করতে টেন্ডার আহবান করা হয়। এর বিরুদ্ধে রিট করা হলে আদালত ভবন ভাঙ্গার ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
রিপোর্টটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন: