এক ঢিলে দুটি পাখি মারার গল্প তো শুনেছেন। কিন্তু, তিনটি! শোনেননি তো? চলুন তাহলে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেই গল্পে।
ভারতীয় প্রদেশগুলোর মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গের পরে বাংলাদেশে সম্ভবত এখন সবচেয়ে আগ্রহের জায়গা গুজরাট। গুজরাটের রাজনীতি ও রাজনৈতিক মেরুকরণই এই প্রদেশটিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এতোটা আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
গুজরাট ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘর-প্রদেশ, এটাও আগ্রহের অন্যতম কারণ। ২০০২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত, গুজরাটের প্রবল প্রতাপশালী মুখ্যমন্ত্রী ও একমেবাদ্বিতীয়ম নেতা ছিলেন মোদী। তাঁর কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গুজরাট প্রদেশে এতোটা প্রভাব ও জনপ্রিয়তা।
সেই জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতাতেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনেও জয় পেয়ে টানা ষষ্ঠবারের মতো গুজরাটের প্রাদেশিক সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে তাদের এ জয়যাত্রা অব্যাহত আছে। ১৯৯৮-এর আগাম নির্বাচন, ২০০২-এর আগাম নির্বাচন, ২০০৭, ২০১২ সালের পর এবারও তারা জিতে নিল গুজরাট। ধরে নেওয়া যায়, কোন অঘটন না ঘটলে, আরও পাঁচ বছর গুজরাটে নিশ্চিন্তে পার করতে যাচ্ছে বিজেপি।
এবারের নির্বাচনে মোট ১৮২টি আসনের মধ্যে তারা ৯৯টি আসন পেয়েছে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পেয়েছে ৭৭টি আসন।
আসন সংখ্যার বিচারে অবশ্য যদি জনপ্রিয়তার হিসার করা যায়, তাহলে জয়ী দল বিজেপিকে এখানে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, গত চারটি প্রাদেশিক তথা বিধানসভা নির্বাচনে তারা জিতলেও, প্রতিবারই আগের তুলনায় বিজেপির আসন কমেছে। শুধু ১৯৯৮ সালের তুলনায় ২০০২ সালেই যা তাদের আসন বৃদ্ধি পেয়েছে।
গুজরাটে বিজেপি প্রথম ক্ষমতায় আসে ১৯৯৫ সালে। সেবার তারা আসন পেয়েছিল ১২১টি। ১৯৯৮-এ ১১৭টি। ২০০২-এ ১২৭, ২০০৭-এ ১১৭, ২০১২-এ ১১৫টি। প্রতিবারই তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কংগ্রেস। এই নির্বাচনগুলোতে কংগ্রেস যথাক্রমে ৪৫, ৫৩, ৫১, ৫৯ ও ৬১টি আসন পেয়েছিল।
লক্ষ্য করার বিষয়, ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম বিজেপি ১০০-এর নিচে আসন পেল। আর, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর কংগ্রেস এই প্রথম ৭৫-এর অধিক আসন পেল। আমরা কি কোন পালা বদলের গান শুনছি?
আরেকটু পেছনে ফিরি। বিজেপি আসলে ১৯৯০ সালের নির্বাচনেই ক্ষমতায় আসতে পারত। মাত্র অল্প কয়েকটি আসনের ব্যবধানে তারা সেবার সরকার গঠন করতে পারেনি। সেবার তারা আসন পেয়েছিল ৬৭টি। ৭০-এর অধিক আসন পেয়ে অধুনালুপ্ত জনতা দল, ৩৩ আসন পাওয়া কংগ্রসের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে ফেলে। বলার কথা হলো, ১৯৮৮ সালের ১১ অক্টোবর জনতা দল (১৯৯৯ সালে বিলুপ্ত) বেশ কয়েকটি পার্টির (জনতা পার্টির একাংশ, লোক দল, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-জাগজিবান ও জন মোর্চা) সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই বাজিমাৎ!
১৯৬০ সালে মহারাষ্ট্র ভেঙে গুজরাটিদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে সৃষ্টি হয়েছিল আজকের গুজরাট। দুই বছর পরেই, ১৯৬২ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয় গুজরাট সরকার, যেটাকে বলে দ্বিতীয় বিধানসভা। তখন ১১৩টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। এর পর, ১৯৬৭-এ ৯৩, ১৯৭২-এ ১৪০, ১৯৭৫-এ কংগ্রেস ৭৫ [কংগ্রেস-(ও)-সহ (৫৬ আসন) কোয়ালিশন], ১৯৮০-এ ১৪১ ও ১৯৮৫-এ ১৪৯টি আসন পেয়ে গুজরাটে সরকার গঠন করে কংগ্রেস। মানে, এখন পর্যন্ত ১৪টি প্রাদেশিক নির্বাচনের মধ্যে, দ্বিতীয় থেকে শুরু করে সপ্তম পর্যন্ত ৬টি বিধান সভা টানা জিতে নিয়েছিল কংগ্রেস। মাঝে, ১৯৯০-তে শুধু জনতা দল। এর পর সর্বশেষ ৬টি নির্বাচন টানা জিতল বিজেপি। কিন্তু, এবারই প্রথম এমন ‘ভরাডুবি’ হলো দলটির!
দুই দফায় হওয়া এই নির্বাচনের একদম মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাহুল গান্ধী, গত ১৬ ডিসেম্বর। কংগ্রেস নেতৃত্ব জানত, রাহুলই এবার নেতৃত্বে আসছেন। রাহুল তাঁর সভাপতিত্বের প্রথম মেয়াদ শুরু করার আগ দিয়ে গুজরাট নির্বাচনকে ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে নিয়েছিলেন বললে অত্যুক্তি হবে না। সরাসরি মাঠে নেমেছিলেন তিনি। টানা তিন মাস তিনি গুজরাটের মাঠে ছিলেন। সঙ্গে গুজরাটি রাজনীতি-অর্থনীতির অন্যতম শক্তিশালী নির্ধারক ‘প্যাটেল’দের একাংশের সমর্থনও আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। হার্দিক প্যাটেল, অল্পেশ ঠাকুর ও জিগ্নেশ মেবানীকে পাশে নিয়ে রাহুল গান্ধী যথাক্রমে পাতিদার, ওবিসি (আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস) ও দলিতদের ভোট ব্যাংক বাড়িয়েছেন। সংখ্যালঘু মুসলমানদের তো কংগ্রেস পাশে পেয়ে আসছেই। আর অন্যদিকে, বিজেপির শরিক শিব সেনার ৪২ জন প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন! সব সমীকরণ মিলিয়ে, কংগ্রেস আসলেই অনেক দূর এগিয়ে গেল গুজরাটে।
গুজরাটের মানুষ বিজেপিকে জিতিয়েছে এটা সত্য। কিন্তু, বিজেপির যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস সেটাকে তারা মাটিতে নামিয়ে এনেছে। আবার, গুজরাটের মানুষ কংগ্রেসকে হারিয়েছে, এটাও সত্য। কিন্তু, কংগ্রেসকে তারা দীর্ঘ ২৭ বছর পর পচাত্তরের অধিক আসনে যোগ্য মনে করেছে। এখানে সরকার গঠন করতে হলে প্রয়োজন হয় ৯২টি আসন। বিজেপি যদি আর ৯টি আসন কম পেত, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেগুলো কংগ্রেসের পকেটেই যেত। চিত্র তখন বদলে যেত। হয়তো, ৬টি আসন নিজেদের পকেটে নেওয়া অন্যান্য ছোট দলগুলোর সমর্থন নিয়ে কংগ্রেসই সরকার গঠন করে ফেলতে পারত।
আবার, এই ছোট দলগুলোই কংগ্রেসের ‘ক্ষতি’ করে দিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। দলগুলো তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি নির্বাচনে; আবার, পেরেছেও। ভোট-ভাগের রাজনীতি বেশ ভূমিকা রেখেছে এখানে। কুমারী মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি দলিত ও ওবিসিদের ভোটে ভাগ বসিয়েছে। কোন আসন না জিতলেও শতকরা ০.৭ ভাগ ভোট গেছে এই বসপা’র দখলে। সদ্য গঠিত গুজরাট-ভিত্তিক ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি (বিটিপি) ০.৭ ভাগ ভোটসহ পেয়েছে ২টি আসন। রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী পার্টি স্যেকুলার (আরএসপিএস) ও আম-আদমি পার্টি মিলে ০.৩ ভাগ ভোট কেটেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাক্সে ভোট পড়েছে ৪.৩ ভাগ, যারা কি না ৩টি আসনও জিতে নিয়েছেন।
শারদ পাওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) মূলতই মহারাষ্ট্র কেন্দ্রিক দল। তবে, মহারাষ্ট্র-গুজরাটে সীমান্তে দলটির বেশ প্রভাব রয়েছে। তারা একটি মাত্র আসন পেলেও, পুরো প্রদেশে শতকরা ০.৬ ভাগ ভোট কেটে নিয়ে গেছে নিজেদের ঝুলিতে। ফলে, ক্ষতিটা বিজেপির চেয়ে কংগ্রেসেরই হয়েছে বেশি। এনসিপির প্রদেশ নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল তাই পোস্ট-পোলে বলেছেন, ‘এনসিপির সঙ্গে জোট করা উচিত ছিল কংগ্রেসের। হলে হয়তো ফল আরও ভালো হতো।‘ মনে হচ্ছে, শুধু এনসিপি নয়, একটি বৃহত্তর জোট গড়তে পারলে সত্যই বিজেপিকে এ যাত্রায় ঠেকিয়ে দিতে পারত কংগ্রেস!
সঙ্গে ‘দুটি’ ক্ষতি খোদ কংগ্রেসের ‘ঘর’ থেকেই হয়েছে। প্রথমটি করেছেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শঙ্কর সিং বাঘেলা। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে না পেরে তিনি কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যান তার অনুসারীদের নিয়ে। হিন্দুস্থান কংগ্রেস পার্টির (এইচসিপি) টিকিটে লড়েন এদের ৯৫ জন। সাকুল্যে, মাত্র ০.৩ ভাগ ভোট কেটে নিয়ে গেলেও, কংগ্রেসের ক্ষতিটা বেশ ভালোই করে দিয়ে গেছে বাঘেলা-বাহিনী!
দ্বিতীয় ক্ষতিটি করেছেন ২০১৪ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে, আহমেদ প্যাটেলের বিরুদ্ধে থাকা দলত্যাগী ১৪ জন কংগ্রেস নেতা। এদের ৭ জনকে এবার বিধানসভায় প্রার্থিতা দেয় বিজেপি। ২ জন জিতেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন, সি কে রাউলজি জিতেছেন গুজরাটি রাজনীতির খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গোধরার আসনটি। তাও, মাত্র ২৫৮ ভোটে! দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই আসন চরম হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পুনোরুদ্ধার করল বিজেপি। এই আসনে একাধিক মুসলমান স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিলেন। তাদের ভোটও ভাগ হয়ে যাওয়ায় আসনটি হাতছাড়া হয়ে গেল কংগ্রেসের!
সব মিলিয়ে ১৬টি আসনে কংগ্রেস ৩ হাজারেরও কম ভোটে হেরেছে। ভোট না কাটলে হয়তো তারা আসনগুলো পেয়েই যেত। ধোলকা নামের একটি আসনে বিজেপি প্রার্থী মাত্র ৩২৭ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। সৌরভ প্যাটেলের মতো নাম করা বিজেপি মন্ত্রীও মাত্র ৯০৬ ভোটে জিতেছেন তার আসনে!
এই অংকগুলোকে আমরা হাড্ডাহাড্ডি ও রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের চিহ্নবাহী বলতেই পারি। সেই চিহ্ন কিন্তু আরও ১৩টি আসনেও দেখা গেল এবার। এই আসনগুলোতে কংগ্রেস ৩ হাজারের কম ভোটে জিতেছে আর এগুলোর ৯টি-তে ব্যবধান ২ হাজারেরও কম। তো ২৯টি আসনে দারুণ লড়াই হয়েছে বলতে হবে। এমন দারুণ টানটান ভোট-যুদ্ধ বহুদিন পর দেখল ও দেখাল গুজরাট। যে কারণে, ক্ষমতাসীন বিজেপি জিতেও চাপে পড়ে গেল।
কংগ্রেস ভোটে হেরেও স্বভাবতই উৎফুল্ল। যদিও, আফসোস তাদের থাকবেই। কেননা, বহু বছর পর অনেক কাছে নিয়ে গিয়েও, কংগ্রেসকে খুব কাছ থেকে ফিরিয়ে দিলেন গুজরাটবাসী! এখানেই আসলে তারা এক ঢিলে দুটি পাখি মেরেছেন। বিজেপিকে অনেকটা নামিয়েছেন, কিন্তু টিকিয়ে রেখেছেন; কংগ্রেসকে অনেকটা উঠিয়েছেন, কিন্তু বসতে দেননি!
কংগ্রেসের আফসোস সবচেয়ে বেশি বাড়াল সম্ভবত ‘না ভোট’ (নান অব দ্য অ্যাবাভ বা নোটা)। নোটা ভোট পড়েছে ৫.৫ লাখের ওপরে। পৃথিবীর বহুদেশের এই পরিমাণ জনসংখ্যাই তো নেই! মোট ভোটের ১.৮ শতাংশ ছিলেন এই ভোটাররা। প্রায় ১০০টির মতো আসনে ৩ সহস্রাধিক নোটা ভোট পড়েছে। ১৬টি আসনে ৫ সহস্রাধিক। ২টি আসনে ৬ সহস্রাধিক। বিশ্লেষণ হচ্ছে, অন্তত ২৪টি আসনে এই নোটা ভোটই ব্যবধান তৈরি করে দিয়েছে!
বলা বাহুল্য, ২০১২ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে গুজরাটে ‘না ভোটে’র কোন বিধি ছিল না। বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির প্রতি একটা বিশাল অংশ মোটেও খুশি নন। সে দিক বিবেচনায় বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসকে তারা ভোট দিতে পারতেন। তারা কোন দলকেই যে যোগ্য মনে করছেন না, এটা ভারতীয় রাজনীতি-বিজ্ঞানে বেশ আলোচনার খোড়াক তৈরি করে দিয়েছে ইতোমধ্যেই।
এই ‘নোটা’ই হলো সেই তৃতীয় পাখি, যেটির মাধ্যমে দুটি পার্টিকেই অস্বীকার করে তাদের একদম মাটিতে নামিয়ে আনলেন গুজরাতবাসী! বলা হচ্ছে, ‘নোটা’ই এখন গুজরাতের তৃতীয় বৃহত্তম ‘দল’!
বিজেপি এবার শতকরা ৪৯.১ ভাগ ভোটারের ভোট পেয়েছে, গতবার যেখানে তারা পেয়েছিল ৪৬.৮৫ ভাগ ভোট। এটাই আশ্চর্যের, ভোট বাড়লেও, আসন কমে গিয়েছে তাদের! যদিও, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৫৯.১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, সে হিসেবে মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে বিধানসভা নির্বাচনে তাদের জনপ্রিয়তা কমেছে ১০ ভাগ। অন্যদিকে, গত বিধান সভায় কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৮.৯৩ ভাগ ভোট। এবার সেটা ৪৩.৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে, যার অধিকাংশই গ্রামকেন্দ্রিক। শহরে এখনও বিজেপির জনপ্রিয়তাই অটুট আছে। নির্বাচনে পপুলার ভোট বিজেপি পেয়েছে মোট ১,৪৭,২৪,৪২৭টি, কংগ্রেস পেয়েছে ১,২৪,৩৮,৯৩৭টি। প্রায় ২৩ লক্ষ ভোট বিজেপি বেশি পেয়েছে। তবুও, কোথায় যেন তাদের খটকা না থেকে পারেই না।
২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে ভারতের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন তথা লোকসভা নির্বাচন। সেখানে ২৬টি আসন আছে গুজরাট থেকে। গেল বার অর্থাৎ ২০১৪ সালে সবগুলোই জিতে নিয়েছিল বিজেপি। এই বিধানসভার ফল বলছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে সমীকরণ বদলে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনা আছে। বিধানসভা নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের কারণে, নিজের প্রদেশেই কংগ্রেসের অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
মোদীর নয়া-অর্থনৈতিক নীতি মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতে মাত্রাতিরিক্ত পরিবর্তন ও জটিলতা, জিএসটিসহ অতিরিক্ত করারোপের ফলে সাধারণ মানুষ বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সম্প্রদায় তো ফ্যাক্টর হিসেবে আছেই, সঙ্গে অর্থনীতির প্রভাব সম্ভবত অনেক বড় নির্ধারক হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে। নিজের রাজ্যই মোদীকে সেটা বুঝিয়ে দিল বেশ ভালো করে। মোদীর অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে খোদ দলটির তাত্ত্বিকভাবে ক্যাডার তৈরির সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কিছুটা নাখোশ। তাদের মতে, মোদী সরকার বৃহৎ পুঁজি ও শিল্পপতিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুললেও কৃষক-শ্রমিক-গরীর মানুষদের দিকে নজর দিচ্ছেন না। খোদ দলটির কৃষক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা এমন অভিযোগ করেছেন সংঘের কাছে। বলা হচ্ছে, মোদী সরকার আরএসএসের কথা শুনছেন না। উল্টো আরএসএসকেই মোদী-অমিতের কথায় চলতে হয়। তবে, গুজরাটে ‘অশনি সংকেত’ পেয়ে যাওয়ায় এবার আরএসএস ও বিজেপির অন্যান্য নেতারা মোদী-অমিত জুটিকে চাপে রাখতে ইতোমধ্যেই নাগপুরে গিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের কাছে অসন্তোষ ব্যক্ত করে এসেছেন।
প্রদেশে চাপ, কেন্দ্রে চাপ, সংঘে চাপের চেয়েও অবশ্য মোদীর জন্য সবচেয়ে বড় চাপ রাহুল গান্ধী। মোদীর একদম প্রবল-বিকল্প-তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ৪৭ বছর বয়সী কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর ‘উত্থান’ ঘটে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মোদীর একক ক্যারিশমার কারণেই বিজেপি গুজরাট ধরে রাখতে পেরেছে যেমন সত্য, তেমনি রাহুল-ম্যাজিকেই কংগ্রেস গুজরাটে এতোটা এগিয়ে গেছে এটাও সত্য। রাহুল ক্রমাগত চাপে রাখছেন মোদীকে। বলছেন, “গুজরাটে ‘জবরদস্ত ঝটকা’ খেয়েছে বিজেপি। গুজরাটের জনগণই নরেন্দ্র মোদীর মডেল মানেন না!”
হারলেও, কংগ্রেস শিবিরে এখন প্রেরণার উৎস গুজরাটে দেওয়া এই ‘জবরদস্ত ঝটকা’। মোদী গুজরাট নিয়ে এগোন। অন্তত আগামী দেড় বছর রাহুল-রথে সওয়ার হওয়া কংগ্রেসও ‘গুজরাটের ঝটকা’ নিয়েই এগোবে বলে মনে হচ্ছে!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)