গুগল ম্যাপের অনুরূপ তৈরি পোশাক খাতের বিশদ তথ্য নিয়ে তৈরি করা হবে ‘ডিজিটাল ম্যাপ’। যেখানে দেশে মোট কারখানা ও শ্রমিক সংখ্যা, কারখানার ধরণ, অবস্থান, ঠিকানা এবং কারখানার দালান কাঠামোসহ বিস্তারিত সব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে।ফলে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে দেশের এই খাত সম্পর্ক সহজে জানা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনে ‘ডিজিটাল আরএমজি ফ্যাক্টরি ম্যাপিং ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা হয়।
পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বজনীন ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে দেশ-বিদেশে পোশাক খাতের স্বচ্ছতা প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়ে। সঠিক তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে এ খাতকে ঘিরে বির্তক ও বিভ্রান্তি রয়েছে। এই ডিজিটাল ম্যাপের মাধ্যমে এসব সমস্যা দূর হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব, সি অ্যান্ড এ সোর্সিং বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক শান্তনু সিং।
সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা উন্নয়ন সেন্টারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রহিম বি তালুকদার।
ডিজিটাল ম্যাপ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক পারভীন সুলতানা হুদা প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী চার বছরে এটি বাস্তবায়িত হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল ম্যাপ পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে। এর আওতায় দেশের ২০টি পোশাক উৎপাদনকারী জেলার ১০৪টি উপজেলার পোশাক কারখানাগুলো ডিজিটাল ম্যাপের মধ্যে আসবে। ফলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে দেশের এই খাত সম্পর্ক সহজে জানা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে ব্র্যাক ইউএসএ।
দেশের সব কারখানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই ডিজিটাল ম্যাপে নিয়ে আসা হবে। কারখানার মৌলিক তথ্যগুলোর সঙ্গে কারখানা পণ্যের ধরণ, উৎপাদন ধরণ, নারী ও পুরুষ শ্রমিক, ক্রেতা, কারখানার অনুমোদন ও সনদ, ফায়ার সিস্টেম, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কতদূর, নিরাপত্তা কমিটি, ট্রেড ইউনিয়নসহ তথ্য সব থাকবে।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমের আরেকটি ধাপ হচ্ছে- এই ডিজিটাল ম্যাপ।তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বলেই প্রতিযোগী দেশগুলো মিথ্যাচার করছে। শ্রমিকরা কাজ করছে, বেতন পাচ্ছে। অথচ ক্রেতাদের কাছে নেতিবাচক সংবাদ পাঠানো হচ্ছে।
অধ্যাপক সাদ আন্দালিব বলেন, দেশের পোশাক খাত নিয়ে গবেষণার অভাব রয়েছে। কিন্তু আমাদের গবেষণা করতে হবে আগামী ১৫ বা ২০ বছর পর পোশাক খাতের অবস্থান কোথায় পৌঁছবে তার সঠিক ধারণা পেতে একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান করা জরুরি।
শান্তনু সিং বলেন, ডিজিটাল ম্যাপ পোশাক খাতে স্বচ্ছতা আনবে। অনেক দেশ এমনটি এখনও চিন্তা করেনি। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে। বাংলাদেশ এখানেও নেতৃত্ব দিবে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনে দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। উদ্যোক্তারা সবুজ কারখানা নির্মাণ করছে। কিন্তু এসব বাদ দিয়ে শুধু ব্যবসায়ীদের খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
“আমাদের কিছু লোক, শ্রমিক নেতা এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বিদেশে দেশের পোশাক খাত নিয়ে শুধু নেতিবাচক কথা বলেন। সেটিই যেন তাদের লক্ষ্য। তাদের কাছে, পোশাক খাতের ব্যবসায়িরা যেন শুধু লুটপাট করেন। কিন্ত তারা যে, অর্থনীতির জন্য কিছু করছেন, মানুষকে চাকরি দিচ্ছেন; সেটি দেখেন না সমালোচনাকারীরা”