চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গুগল’র প্রধান নির্বাহীর ‘তেলাপোকা’ তত্ত্ব

আইআইটি-এমআইটির প্রাক্তন ছাত্র তিনি, বর্তমানে গুগলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারন একটি পরিবার থেকে উঠে এসে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুন্দর পিচাই এখন গণমাধ্যমসহ টেক দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত মানুষ।

আত্মোন্নয়নের গল্প তার চেয়ে ভালো আর কে শোনাবে? রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে একটি সাধারণ ঘটনায়ও সুন্দর পিচাই খুঁজে পেলেন আত্মোন্নয়নের এক অসাধারণ তত্ত্ব। বিষয়টি আবার তেলাপোকা কেন্দ্রীক, শুনুন তার মুখেই।

একটা রেস্টুরেন্টে কোথা থেকে যেনো হুট করে একটা তেলাপোকা উড়ে এলো। এসে বসলো এক মেয়ের শরীরে। মেয়েটি চিৎকার করে উঠলেন ভয়ে। ভয়ার্ত চেহারা এবং কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে চিৎকার করে তিনি লাফাতে শুরু করলেন, আর দুটি হাত দিয়ে চেষ্টা করছিলেন তেলাপোকা থেকে রেহাই পেতে। তার অভিব্যক্তিই এমন ছিলো যে তার সঙ্গে থাকা সবাই একত্রে প্যানিক হয়ে পড়লো।শেষ পর্যন্ত তেলাপোকাটি শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলতে সক্ষম হলেন তিনি, কিন্তু মেয়েটির সঙ্গে থাকা অন্য এক মেয়ের গায়েই আবার আশ্রয় নিলো সেটি।

এবার দ্বিতীয় মেয়ের পালা, সেও যথারীতি নাটক শুরু করলো। অবশেষে ওয়েটার এলো তাদের উদ্ধারকর্তা হিসেবে।

ছুঁড়ে দেওয়ার কারণে এবার তেলাপোকাটি ওয়েটারের শরীরে গিয়ে বসলো। ওয়েটার চুপচাপ কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকলো, তেলাপোকাটিকে দেখলো, তারপর সেটাকে হাত দিয়ে ধরে রেস্টুরেন্টের বাইরে ফেলে দিয়ে আসলো। কাহিনী শেষ।

আমি কফির মগে চুমুক দিচ্ছিলাম আর তাদের কাণ্ডকারখানা দেখছিলাম। আমার মনের অ্যান্টেনাতে একটা প্রশ্ন খেলে গেলো, তাদের এই হিস্টিরিয়া রোগীর মতো আচরণের জন্য কি তেলাপোকা দায়ী? যদি তাই হয়, তাহলে ওয়েটারটি বিরক্ত হলো না কেন? সে কিভাবে কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই কাজটা ঠিকঠাক করে ফেললো।

বুঝলাম, তেলাপোকাটি নয়, মেয়েদুটিকে বিরক্ত করা তেলাপোকাকে নিয়ন্ত্রণে মেয়ে দুটির অক্ষমতাই ছিলো এর কারণ।

আরও বুঝলাম, বাবা, বস বা আমার স্ত্রীর চিৎকার আমাকে বিরক্ত করে না, বরং তাদের প্রতি বিরক্ত হওয়াকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা বলেই বিরক্ত হই। একইভাবে বিরক্ত হই রাস্তায় থাকা লম্বা ট্র্যাফিক জ্যামের উপরও। কারণ বিরক্ত হওয়াকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।

সমস্যাটির চেয়ে সমস্যার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের আরো বিরক্ত করে তুলে।

ঘটনাটি থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছিলাম, আমাকে জীবনে কখনো প্রতিক্রিয়া করতে হবে না, বরং সাড়া দিতে হবে। মেয়ে দুটি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিলো আর ওয়েটারটি সাড়া দিয়েছিলো।

প্রতিক্রিয়া মানুষের স্বভাবজাত কিন্তু সাড়া দেওয়ার প্রবণতা আসে ভালো চিন্তাভাবনা থেকে। জীবনকে বোঝার একটি অসাধারণ পথ এটা।

যে মানুষটা তার জীবন নিয়ে খুশি, এমন নয় যে তার জীবনের সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে। সে খুশি কারণ তার দৃষ্টিভঙ্গি। সে ভাবে তার জীবনের সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। এজন্যই সে খুশি।