সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে অন্য রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে গাল্ফ শিল্ড-১ সামরিক মহড়ার সমাপনী দেখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সোমবার সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় আল জুবাইল প্রদেশে ‘জয়েন্ট গাল্ফ শিল্ড-১’ নামের যৌথ মহড়ার কুচকাওয়াজ ও সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবারের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন স্বয়ং সৌদি বাদশাহ সালমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সামরিক মহড়ার সমাপনীতে যোগ দেবেন বলে বাংলাদেশের অনেকেই এখন গাল্ফ শিল্ড এবং এ নামে যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়ে জানতে আগ্রহী হচ্ছেন।
জয়েন্ট গাল্ফ শিল্ড-১ কী?
গাল্ফ শিল্ড-১’কে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামরিক অনুশীলনের মহড়া। এতে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা যেমন সবচেয়ে বেশি, তেমনি এতে ব্যবহৃত হাতিয়ার ও অস্ত্রশস্ত্রের মানও উল্লেখ করার মতো।
গাল্ফ শিল্ড-১’কে সামরিক কৌশলের দিক থেকে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কেননা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের আধুনিকতম সামরিক ব্যবস্থার সম্মিলন ঘটে এই অনুশীলনে।
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পাশাপাশি সৌদি আরবের বন্ধুপ্রতিম ও ভ্রাতৃসম্পর্কের মুসলিমসহ অন্যান্য অনেকগুলো দেশ অংশ নেয় এই অনুশীলনে।
আয়োজনের সমাপনী উপলক্ষে আরব, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জয়েন্ট গাল্ফ শিল্ড-১-এর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল-সুবেই বলেন, অংশ নেয়া দেশগুলোর স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে মিলে বিশাল এই অনুশীলনের আয়োজন করেছে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আল-সুবেই বলেন, ‘মহড়াগুলো দু’ ধরনের সামরিক অভিযানের ওপর ভিত্তি করে সাজানো: ১. শত্রুর বিরুদ্ধে উপকূলীয় প্রতিরক্ষাভিত্তিক গতানুগতিক সামরিক অভিযান, ২. অনিয়মিত যুদ্ধভিত্তিক অভিযান যা শত্রুদের নির্মূল করতে কোনো গ্রাম বা প্রাতিষ্ঠানিক এলাকায় প্রবেশ ও পুনর্দখলের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।’
এই দু’ ধরনের অভিযানের ভিত্তিতে গাল্ফ শিল্ড-১ সাজানো হয়েছিল দু’টি পর্যায়ে।
অংশগ্রহণকারী দেশ
উদ্যোক্তা দেশ সৌদি আরবের ২৩টি বন্ধু ও ভ্রাতৃসম রাষ্ট্র এই মাসব্যাপী সামরিক আয়োজনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, মিশর, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজার, চাদ, জিবুতি, কোমোরোস, ওমান, গায়ানা, তুরস্ক, মৌরিতানিয়া, বুরকিনা ফাসো, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য।
এসব দেশের কয়েক লাখ সেনা সদস্য গাল্ফ শিল্ড-১-এর বিভিন্ন পর্যায়ের মহড়ায় অংশ নিয়েছেন এবং সোমবারের সমাপনী কুচকাওয়াজেও তাদের নৈপুণ্য দেখাবেন।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই অনুশীলনে অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।
উদ্দেশ্য
বিশালাকার এই সামরিক আয়োজনের উদ্দেশ্য মূলত অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সামরিক প্রস্তুতি বাড়ানো, যৌথ কৌশলগুলোর আধুনিকায়ন এবং যৌথ সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্মিলনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি।
সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে গাল্ফ শিল্ড-১ মুখপাত্র বলেন, এই অনুশীলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর একটি হলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি, এমন শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড ঠেকাতে জোটবদ্ধ সামরিক যুদ্ধ-অভিযানের ধারণাকে জাগ্রত করা।
এর মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যকার সামরিক অভিন্নতাও ফুটে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন মুখপাত্র। তিনি বলেন, গাল্ফ শিল্ড-১-এর মাধ্যমে উন্নয়ন হচ্ছে সম্মিলিত নিরাপত্তা, একতা এবং একই গন্তব্যের ধারণারও। এর সাহায্যে বাহিনীর সদস্যদের জোটবদ্ধ লড়াইয়ের উচ্চমানের প্রশিক্ষণও হয়ে যাচ্ছে।
পরবর্তী পরিকল্পনা
সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স জোটের বিমান হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে সৌদি আরব। শনিবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ওই সমর্থন জানানো হয় সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে।
তবে এর মধ্য দিয়েই সৌদির কাজ শেষ নয়। রোববার দাহরান শহরে আরব লিগের সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ের বিশাল তালিকায় সিরিয়া ইস্যুও যুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। সেই আলোচনা গড়াতে পারে সোমবারের অনুষ্ঠানেও।
সমাপনী শেষে লন্ডন যাবেন প্রধানমন্ত্রী
সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত গাল্ফ শিল্ড-১-এর সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। ওই সমাপনীর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বিকেলে দাম্মাম থেকে বিশেষ ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে তিনি কমনওয়েলথ হেডস অব গভর্নমেন্ট মিটিং (সিএইচওজিএম) বা কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।