বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে শিল্পী অঞ্জন দত্ত এক বিস্ময়। গান ছাড়াও তার অভিনয়, নির্মাণে বারবার মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক। গান-সিনেমার মিথস্ক্রিয়ায় চমকে দেয়ার অভ্যেস আছে তার! জনপ্রিয় গানের চরিত্র ‘রঞ্জনা’কে সিনেমায় এনে বছর দশেক আগে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। এবার সিনেমায় আনছেন তার গানের সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্র বেলা বোসকে!
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংগীতপ্রেমী বাঙালির কাছে ‘বেলা বোস’ অতি আপন একটি নাম। সেই গান ও চরিত্রটির জনপ্রিয়তা সাতাশ বছর পার করে আজও অমলিন। যিনি বছরের পর বছর ২৪৪-১১-৩৯ নম্বরের ফোনের ওপারে বসে আছেন চুপ করে!
গানের সেই বেলা বোসকে এবার বড়পর্দায় দর্শকদের সামনে আনতে চলেছেন অঞ্জন দত্ত। আর বড়পর্দায় বেলা বোসকে আনার পিছনে যার ইচ্ছে এবং সঙ্গত পরতে পরতে লেগে রয়েছে, তিনি এ ছবির প্রযোজক রানা সরকার। এমন খবরই জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
প্রধানত রানা সরকারের উদ্যোগের ফলেই যে বেলা বোসকে বড়পর্দায় আনতে রাজি হয়েছেন অঞ্জন, সেকথা নিজেই জানিয়েছেন বেলার স্রষ্টা। অবশ্য এ ব্যাপারে তাঁর নিজেরও যে বহুদিনের ইচ্ছে এবং তাগিদ ছিল সেকথাও অস্বীকার করেননি এই প্রখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক।
ছবির নাম ‘বেলা বোসের জন্য’। কিন্তু এই যে এতবড় একটি আইকনিক চরিত্র যিনি বাস করেন নব্বই দশকের সমস্ত বাঙালির স্বপ্নে এবং কল্পনায়, তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এই কাজটা কি ভীষণ চ্যালেঞ্জিং নয়? কঠিন নয়? কোনও রাখঢাক না করে বেলা বোসের স্রষ্টার জবাব, “ভীষণ কঠিন! তবে চ্যালেঞ্জটা আমি নিচ্ছি। ৬৬ বছর বয়সে এসেও যে এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারছি তার কারণ রানা সঙ্গে আছে বলেই।”
তা ঠিক কেমন হবে এই বেলা বোস? পরিচালকের কথায় জানা গেল ‘গায়ক’ অঞ্জনের গানে এতদিন বেলাকে যেমন ভেবে এমন জেনে এসেছে শ্রোতা, ছবির বেলায় বেলা সেরকম ন্যাকা একেবারেই নয়। গানে জানা গেছিল প্রেমিক চাকরি পাচ্ছিল না দেখে পরিবারের পছন্দে অন্য জায়গায় বিয়েতে রাজি হয়ে গেছিল সে। ছবিতে মোটেই সে ওরকম নয়। অঞ্জন আরও জানিয়েছেন সোসিওপলিটিক্যাল প্রেক্ষাপটে বেলাকে সম্পূর্ণ অন্যরকমভাবে হাজির করবেন তিনি। আর হ্যাঁ, এবারে কিন্তু সেখানে টেলিফোন থাকবে, তোলাও হবে এবং নানান চমকও থাকবে, দাবি বেলার স্রষ্টার! প্রেমও থাকবে, অবশ্যই থাকবে তবে তা সম্পূর্ণ নতুন এক মোড়কে পেশ করা হবে দর্শকের কাছে।
কথাপ্রসঙ্গে অঞ্জন আরও একবার স্পষ্টভাবে জানালেন যে ‘বেলা বোস’ কাউকে ভেবে তিনি লেখেননি। কারোও প্রেমে পড়েও গাননি। তবে? ‘দু’টো মানুষের প্রেমের কথা ভেবেই এই গান তৈরি করেছিলাম।’, কোনও রাখঢাক না করে, বিতর্কের গন্ধ না ছড়িয়ে সাফ কথা তার।
তবে গায়ক-পরিচালকের কাছ থেকে জানা গেল ২৪৪১১৩৯ নম্বরটা এক খবরের কাগজের অফিসের নম্বর ছিল। সেই কাগজের এডিটর রোজ এত ফোন পেতে লাগলেন বেলাকে একটিবার ডেকে দেওয়ার জন্য যে বাধ্য হয়ে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তারা। রেগে গিয়েছিলেন অঞ্জনের বাবাও। বলেছিলেন পাবলিক নুইসেন্স অ্যাক্টে ছেলের শাস্তি হওয়া উচিত। এরপরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন অঞ্জন। শেষে ওই ফোন নম্বর চিরতরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এবারে বেলাকে নিয়ে সেসব ‘ভুল’ যে আর তিনি করবেন না নিজের মুখে সেই কথা দিলেন তিনি।
‘বেলা বোসের জন্য’ ছবির সুরকারের দায়িত্বে রয়েছেন নীল দত্ত। আর ‘বেলা বোস’ এর চরিত্রে? এখনই সেকথা বলতে নারাজ ছবির পরিচালক কিংবা প্রযোজক।