চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গাজীপুর সিটি জয়ে কোথায় আওয়ামী লীগের ভয়?

কয়েকদিন আগে হয়ে যাওয়া গাজীপুরের তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সবগুলোতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বড় পরাজয় ভাবিয়ে তুলেছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। তাদের শঙ্কা আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই ফলাফল নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু তাই-ই নয়, জেলা নেতৃত্বের কোন্দলের সুযোগ নিয়ে আবারো জয় পেতে পারে বিএনপি।

গত ২৯ মার্চ পিরুজালী, ভাওয়াল মির্জাপুর ও ভাওয়াল গড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। এই ৩টি ইউপির মধ্যে ২টি জয় পেয়েছে বিএনপি এবং আরেকটি জয় লাভ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী।

তবে দলের এমন ফলাফলে উদ্বেগ নেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। ওই ফলাফলের পর তিনি স্বীকার করেন, গাজীপুরের ইউপি নির্বাচনে হারের কারণ দলীয় কোন্দল।

আর এই বিষয়টিই বেশি ভাবাচ্ছে গাজীপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। তাদের  আশঙ্কা দলীয় অন্তঃকোন্দল দলকে ভোগাবে।  তাদের মতে, নেতাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে মহানগর ও জেলার সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রকাশ্য দুইটি বলয়ে বিভক্ত।  এ দ্বন্দ্বের মাশুল হিসেবেই ৩ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।

৩০ মার্চ দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এবং ৩১ মার্চ গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও গাজীপুরে পরাজয়ের জন্য ইকবাল হোসেন সবুজকে দায়ী করা হয়। এ জন্য তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।

সম্পাদকমণ্ডলীর ওই বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আর কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে গাজীপুর সিটি
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে গাজীপুর সিটি

এ বিষয়ে গাজীপুরের একজন সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সবুজের বিরোধিতায় আমাদের হারতে হয়েছে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সবুজ গ্রুপের রাজনীতি করেন।

‘এই অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম যদি মনোনয়ন পান, তাহলে সবুজের বিরোধীপক্ষও জাহাঙ্গীরের বিপক্ষে গোপনে কাজ করবে। এরফলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জেতার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আবার সে মনোনয়ন না পেলে সবুজ গ্রুপ দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করে নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করবে।

জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার দাবি, ইউপি নির্বাচনে রহমত আলী এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে নৌকার পরাজয় ঘটেছে। এমনকি ভাওয়াল মির্জাপুর যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী জিতেছে, সেটাও ছিল ইকবাল হোসেন সবুজের কারণে। কারণ নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ সরকার মনজু ছিলেন সবুজ সমর্থিত। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া যুবলীগ নেতা জালাল উদ্দিন ছিলেন রহমত আলীর সমর্থিত প্রার্থী।

মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী এক নেতা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন যেই পাক না কেন, দ্বন্দ্বের কারণে তাকে প্রচণ্ড ভুগতে হবে। আর সেই সুযোগটাই নেবে বিএনপি।

তার মতে, গাজীপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বিবেচিত হলেও কোন্দলের কারণে এবারও হয়তো আওয়ামী লীগকে হারতে হতে পারে। এই কোন্দল নিরসনে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি।

নিজের বিরুদ্ধে উঠা এসব অভিযোগের জবাবে ইকবাল হোসেন সবুজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ইউনিয়ন-থানা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশ একসঙ্গে করে গাজীপুরের তিন ইউনিয়নের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়।

‘এর মধ্যে ভাওয়াল মির্জাপুরে মোশারফ হোসেন দুলাল, পিরুজালী সাইফুল্লাহ সরকার মনজু এবং ভাওয়াল গড় ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সালাহউদ্দিন সরকারের নাম প্রস্তাব করা হয়। তবে তাদের মধ্যে কেন্দ্র থেকে সাইফুল্লাহ পরিবর্তে জালাল উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচনে সাইফুল্লাহ জয়ী হয়। তার নাম দল থেকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব করা হয়েছিল। সে যদি জয়ী হয়েই যায়, তাহলে আমি একা দোষী হবো কেন?’

বাম থেকে পর্যায়ক্রমে: আ.ক.ম মোজাম্মেল হক,মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজে এবং রহমত আলী এমপি
বাম থেকে পর্যায়ক্রমে: আ.ক.ম মোজাম্মেল হক,মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এবং রহমত আলী এমপি

তবে, তিনি সাইফুল্লাহ’র পক্ষে কাজ করেছেন কিনা তা স্পষ্ট না করলেও দলের ভরাডুবির জন্য রহমত আলী এমপি এবং জেলা যুবলীগের সদস্য খোরশেদকে সরাসরি দায়ী করেন।

বলেন, ‘শুধু অভিযোগ নয়, এর প্রমাণ দিতেও প্রস্তুত।’

এরই মধ্যে নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ খুঁজতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে নৌকার বিপক্ষে যারা কাজ করেছে এবং যাদের কারণে কোন্দল কমছে না, তাদের চিহ্নিত করতে কাজী জাফরউল্লাহকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরূদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, যারা দলের নির্দেশের বাইরে যাবে, তাদের দলে রাখা হবে না।’

গত ৩১ মার্চ খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ই মে এই দুটি সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৩ সালে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নান জয় লাভ করেন। লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লাহ খানকে হারান।