ঢাকাই সিনেমা অশ্লীলতার যুগ পার করেছে প্রায় দেড় দশক হলো। কিন্তু সেই ছাপ যেন এখনও লেগে আছে রাজধানী ঢাকার অদূরেই। তাও গাজীপুর চৌরাস্তার মতো একটি জনবহুল এলাকায়! সেখানে সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত শাকিব খানের ‘আমি নেতা হবো’ সিনেমার পোস্টারের পাশেই দৃশ্যমান দেশি ও বিদেশি অশ্লীল সিনেমার পোস্টার। যা পথচারীদের জন্য রীতিমত বিব্রতকর।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গাজীপুর চৌরাস্তা ও তার আশে পাশের এলাকা ঘুরে চোখে পড়েছে বাংলাদেশের ‘নিষিদ্ধ নেতা’ ও বিদেশি ‘লাইভ ইস এনজয়’ নামের দুইটি অশ্লীল সিনেমার পোস্টার। যেসব পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো চৌরাস্তা এলাকা। পোস্টারগুলোর নিচে সিনেমা হলের নামও দেওয়া আছে। চান্দনা ও ঝুমুর। তার ঠিক পাশেই শোভা পাচ্ছে শাকিব খানের সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘আমি নেতা হবো’র পোস্টার।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর চৌরাস্তার আশেপাশে বেশ কয়েকটি সিনেমা হল রয়েছে। হলগুলো হলো উল্কা, নন্দিতা, বর্ষা, চান্দনা, ঝুমুর। সাধারণত এই হলগুলোর পোস্টার চোখে বেশি পড়ে। ঈদ বাদে সারাবছর এখানে এমন অশ্লীল সিনেমার পোস্টার দেখা যাচ্ছে। নতুন সিনেমা আসলে এখানে সে পোস্টার লাগলো হয়, সেগুলো নষ্ট হয় কিন্তু এসব অশ্লীল পোস্টার অজানা কারণে থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে এসব পোস্টার দেখে বিব্রতবোধ করছেন অনেকেই। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)-এর শিক্ষার্থী আরিয়ান হক চ্যানেল আই অনলাইনকে জানালেন, এখনও অশ্লীল পোস্টার লাগানো হচ্ছে। পরিবার, পরিজনের সঙ্গে এই রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে লজ্জায় যে কারো মাথা নিচু করে যেতে হয়। এরকম পাবলিক প্লেসে এতো খোলা-মেলা পোস্টার এই সময়ে এসেও কিভাবে লাগানো থাকে?
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, এলাকার সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। অথচ তারা এমন বিব্রতকর পোস্টারগুলো নিয়ে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। আমরা এখন ডিজিটাল যুগে বাস করছি। সবকিছুই আপডেটেড। অথচ আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের একাংশের মানুষ এখনও সেকেলে! তাদের বোঝা উচিত এই অশ্লীল সিনেমার জন্য আমাদের দেশের দর্শকরা সিনেমা বিমুখ হয়েছে। তারপরেও কিছুকিছু স্থানে এসব সিনেমা এখনও প্রদর্শিত হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জানা যায়, অশ্লীল সিনেমার পোস্টারের কারণে ২০১৬ সালে গাজীপুর মহানগরে পৃথক ২টি অভিযান চালিয়ে দুটি সিনেমা হলকে জরিমানা ও ১ বছরের কারাদণ্ড অনাদায়ে আরো ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গাজীপুর মহানগরের জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত ঝুমুর সিনেমা হল ও বি আই ডিসি বাজার সংলগ্ন নন্দিতা সিনেমা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে।
এসময় ঝুমুর সিনেমা হলে অনুমোদনহীন অশ্লীল পোস্টার ও বেআইনি ছবি প্রদর্শনের দায়ে মোঃ হযরত আলীকে গ্রেপ্তার করে ১ বছরের কারাদণ্ড ও অনাদায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আরো ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর দিকে বিআইডিসি বাজার সংলগ্ন নন্দিতা সিনেমা হলে অভিযান চালিয়ে অশ্লীল পোস্টার ও নগ্ন ছবি প্রদর্শন কালে খন্দকার আল হাসিব (২৭) কে গ্রেপ্তার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অশ্লীল এই চলচ্চিত্রগুলো ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া এসব অশ্লীল সিনেমা চলাকালে ‘কাটপিস’ জুড়ে দেয়া হচ্ছে। প্রান্তিক শ্রেণীর দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করতেই এমনটা করা হচ্ছে।
একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ঝুমুর সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে কিনা এমনটা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, যদি প্রদর্শিত হয়ে থাকে এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সিনেমা হলে নতুন কনটেন্ট দিতে ব্যর্থ হচ্ছে যারা সিনেমা নির্মাণ করছেন তারা। নতুন ছবি না থাকলে হল টিকবে কীভাবে?
মধুমিতা হলের কর্ণধার নওশাদ আরো বলেন, মানুষ যেমন খাবার ছাড়া বাঁচে না, সিনেমা হলও তেমনি কনটেন্ট ছাড়া টিকে থাকেনা। এই সময়ে এসেও অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে, এটা দুঃখজনক ব্যাপার। প্রদর্শক সমিতি সবসময় সোচ্চার রয়েছে এসব অশ্লীল সিনেমার বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড়কথা হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হলে চাই ভালো ভালো ছবি।