গাবতলী গরুর হাট। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে হাতের ডানে একটু সামনে মানুষের জটলা। জটলার কারণ লম্বা শিংওয়ালা দুটি গরু। প্রায় আড়াইফিট লম্বা শিং দেখতে যেমন রাজকীয় গরুর নামও তেমন চমকপ্রদ। ‘বাহুবলী’।
চ্যানেল আই অনলাইনকে বিক্রেতা আব্দুল মালিক জানালেন, গরুগুলো এসেছে ভারতের রাজস্থান থেকে। এদের মধ্যে লম্বা, বাঁকা শিংওয়ালাটার নাম বাহুবলী। অন্যটার নাম দেওয়া হয় নাই। পাঁচলাখ করে দাম হাঁকছেন প্রতিটি গরুর। চারলাখ টাকা দাম উঠলে বিক্রি করে দেবেন বলে জানান তিনি।
দৃষ্টিনন্দন শিং ও উচ্চতার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে বাহুবলী। এ নামে ভারতে তুমুল জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র উপমহাদেশের দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে।
বাহুবলী ছাড়াও শাহরুখ খানের জনপ্রিয় চরিত্র ‘ডন’ ও কলকাতার আরেক আলোচিত ছবি ‘পাগলু’ নামেও গরু উঠেছে গাবতলী পশুর হাটে।
ডনকে সামলানো মুশকিল
বাহুবলীর একটু সামনে সাদা-কালো রঙের এক জোড়া গরু। একটা শান্তশিষ্ট, অন্যটা সবার দিকে তাকাচ্ছে রাগী চোখে। তার কাছে কেউ যেতেই ফোঁস করে উঠছে।
বিক্রেতা কামাল হোসেন জানালেন, সাদা-কালো রাগি গরুটার নাম ‘ডন’। ডন একবার রেগে গেলে বাগে আনা কঠিন। এজন্য এর নাম ডন রাখা হয়েছে। চ্যানেল আই অনলাইনকে বিক্রেতা বলেন: ডনের পাশে যেটা দেখছেন ওর নাম রাজাবাবু। রাজাবাবু ও ডন একই মালিকের। নরসিংদীর মাধবদী থানার আলগীবাজার গ্রামের এমরান ভুঞার খামারের গুরু এগুলো। তার খামারে প্রায় ৪০টা গরু আছে। বড় দুটো গাবতলী গরুর হাটে আনা হয়েছে। কারণ এখানে বড় বড় ক্রেতা আসেন।
কামাল হোসেন জানান, ডনকে সামলাতে লাগে ৪ জন। দিনে ৫ কেজি করে দুধ খেত ছোটবেলায়। ডনের ওজন ২৯ মন। লম্বায় ১১ ফুট, দৈর্ঘ্য সাড়ে পাঁচ ফুট। ডনের দাম হাঁকা হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত দাম উঠেছে ছয় লাখ। ঈদের এখনো চারদিন বাকি। বৃহস্পতিবার থেকে প্রকৃত ক্রেতা আসতে শুরু করবে। তখন দাম বাড়বে বলে আশাবাদী কামাল হোসেন।
রাজাবাবু ও ডনের বিশেষত্ব জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘গাবতলীর হাটে যতগুলো বড় গরু আসছে সবার চেয়ে ডনের ফিটনেস ভালো। সবগুলো বড় গরুকে ফ্যান দিয়ে বাতাস করতে হয়। কিন্তু ডনের বাতাস লাগে না। কারণ আমরা মোটাতাজা করার জন্য ইনজেকশন দেইনি।’ ডন রাজাবাবুর মাংস স্বাস্থ্যসম্মত বলে দাবি করেন কামাল।
‘পাগলু’ ‘ছোট’ সম্পর্কে খালাতো ভাই
গাবতলী হাটে ঢুকতেই হাতের বামে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় গরু। এর মধ্যে ‘পাগলু’ সবার নজর কেড়েছে। দীর্ঘদেহী ও কালো কুচকুচে গায়ের রঙ দেখে হাতি বলে ভুল হতে পারে। পাগলুর পাশে একটু ছোট আরেকটা গরু। সেটাও দেখতে পাগলুর মতো। তবে সেটার নাম ‘ছোট’।
পাগলু ও ছোটর মালিক আব্দুল করিম। তার বাড়ি আমিন বাজারের বড়দেশি গ্রামে। তিন বছর আট মাস বয়সী ৪৫ মন ওজনের পাগলুর দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ ঠাকা। ১২/১৩ লাখ হলে বিক্রি করবেন তিনি।
আব্দুল করিম বলেন: ‘পাগলু যতসময় দাঁড়িয়ে থাকে ঠিক ততসময় শুয়ে থাকে। ধরেন যদি আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে তো ঠিক আধাঘণ্টা শুয়ে থাকবে। ছোটবেলা থেকে এটা ওর স্বভাব। এছাড়া যখন ওজন কম ছিল খুব দৌড়ে বেড়াত। তাই ওর নাম পাগলু। পাশে যে গরুটাকে দেখছেন, একটু ছোট বলে ওর নাম ছোট। পাগলু আর ছোট খালাতো ভাই। পাগলুর মা, ছোটর মা দুই বোন।
পাগলু একবার ছোটাছুটি করছিল। থামাতে গিয়ে আব্দুল করিমের বাবা রশি টেনে ধরেন। রশির এক প্রান্ত প্যাঁচ লেগে যায় বুড়ো আঙ্গুলে। পাগলু সেই সময় এত জোরে রশি টান দেয় যে আব্দুল করিমের বাবার হাতের বুড়ো আঙ্গুল খসে পড়ে যায় বলে জানালেন গরুর মালিক।
কুষ্টিয়া থেকে এসেছে বাদশাবাবু
কুষ্টিয়া সদরের রুজদার শেখ তার পালা গরু নিয়ে এসেছেন গাতবলী গরুর হাটে। লাল রঙের সুদর্শন গরুর নাম বাদশাবাবু। শাহিয়ান জাতের বাদশাবাবুর বয়স সাড়ে চার বছর। ছয় দাঁতের গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত দাম উঠেছে সাড়ে ছয়লাখ।
বৃহস্পতিবার কিংবা শুক্রবার গরুর চাহিদা বাড়বে। সে সময়েই কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি হবে বলে আশাবাদী রুজদার শেখ।
উটের সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক
গাবতলি গরুর হাটে তিনটি পাকিস্তানি উট আনা হয়েছিল, দুটি বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আছে একটি মাত্র উট। ক্রেতা দেখা না গেলেও উট দেখতে সাধারণ মানুষের ভিড় লেগেই আছে। তরুণ ছেলে-মেয়েরা উটের সঙ্গে সেলফি তুলছে।
উট বিক্রেতা জানালেন, প্রতিটি উট ১৩-১৫ লাখ ও দুম্বা তিন/চার লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উট ও দুম্বার চাহিদা অনেক।
ছবি: মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ