প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়।
এর আগে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে গভর্নর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা খোয়া যাওয়া এবং তার পরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
মঙ্গলবার সকালে পদত্যাগপত্র সঙ্গে নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন চাপে থাকা গভর্নর।
ড. আতিউর রহমান পদত্যাগের পর ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব দেয়া হয় আবুল কাশেমকে। এরপরই নতুন গভর্নরের নিয়োগ দেয়া হয়।
পদত্যাগের আগে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকার সময় চ্যানেল আইকে গভর্নর বলেন, ‘আমি পদত্যাগ এর জন্য প্রস্তুত, নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় আছি, সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে চাই।’
গভর্নর বলেন, তিনি যে কাজগুলো করেছেন তা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষার জন্য। তবে সরকার যা চাইবে, দেশের স্বার্থের জন্য যা প্রয়োজন তিনি তাই করবেন। ইতোমধ্যে কাজগুলো শুরু করা হয়েছে সেগুলোর নিরাপত্তা যেনো বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য তিনি একটু সময় নিচ্ছেন বলে সে সময় জানান।
তিনি বলেন, ‘মানুষ কাজ করতে গেলে ভুল করেই। আমি অনেক বেশি কাজ করলেও সে তুলনায় ভুল কমই করেছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক নিয়ে নেয়া পদক্ষেপগুলো যদি সরকার ভুল মনে করে থাকে তবে সেগুলো সংশোধনের সুযোগ ছিলো বলে মনে করেন গভর্নর, ‘আমি যদি অন্যায় করে থাকি, তবে আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমার সন্তানের মতো।’
‘আমি আমার কাজগুলোর ব্যাখ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিতে চেয়েছিলাম,’ পদত্যাগের আগে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষমান অবস্থায় বলেছিলেন ড. আতিউর রহমান।
এর আগে নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিতে ড. আতিউর রহমান গিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে। অর্থমন্ত্রী তখন তাকে বলেন, তিনি চলে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালোভাবে চলবে।
‘তিনি মতামত দিতেই পারেন,’ বলেন গভর্নর, ‘কিন্তু আমি তাকে ব্যাখ্যা করে বলেছি, আমি যদি তখন খবরটা দিয়ে দিতাম, তবে যে টাকাগুলো এখন ফেরত আনতে পেরেছি হয়তো আনতে পারতাম না। হ্যাকাররা সাবধান হয়ে যেতো।’
তবে সব এজেন্সিকে বলা হয়েছিলো এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিচার, বিবেক ও দেশপ্রেম থেকে যা করা ঠিক মনে হয়েছে তাই তিনি করেছেন বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। ‘তারপরও সরকার যদি চায় আমার চেয়ে উপযুক্ত মানুষ কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা করবে, আমি ভালোভাবে তাকে কাজ বুঝিয়ে দেবো।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চুরি যায়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে সময় মতো না জানানো এবং পুরো ঘটনাটি চেপে যাওয়ার বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তীব্র ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। ওই ঘটনায় গভর্নর ড. আতিউর রহমান দেশে ফেরার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চান বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর। তবে সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাতে দেখা করতে পারেননি তিনি।