চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বই নিয়ে পৃথিবী যেভাবে ভাবছে, আমরা তা পারিনি

বাঙালির সপ্তম ঋতু (পর্ব-১৯)

বইকে ঘিরে পৃথিবী কতভাবেই চিন্তা করে। আমরা সেভাবে করতে পারিনি। বইকে এখনও আধুনিক বিপনন কাঠামোর ভেতরে আনা যায়নি। বই বাণিজ্যের যে বলয় তার পেছনে থাকা চাই বিপুল বিস্তারিত সৃজনশীলতা।

কী হতে পারে? আমাদের দেশে এখনও সর্বাধিক বিক্রিত বা বেস্ট সেলার বইয়ের হিসাব করা হয় না। বই বিক্রি হয় খুবই কম। কোনো বই দুশো কপি বিক্রি হলে ধরা হয় ব্যাপক কাটতি। কিন্তু পৃথিবীর নামী লেখকদের বই হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়। বই প্রকাশকে ঘিরে নানা রকমের ভাবনা থাকে। প্রস্তুতি থাকে। বইয়ের পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে প্রকাশনার বিভিন্ন পর্যায়ে সৃজনশীল প্রচারণা থাকে। বইয়ের বাস্তবতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাথায় ভাবনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। একটি শহরের, একটি দেশের মানুষ ভাবতে থাকেন, বইটি পড়া দরকার। যে পড়বে সে এগিয়ে থাকবে। যে পড়বে না সে থাকবে পিছিয়ে।

ভালো ভালো সিনেমা দেখার মতো। এখনও নিয়মিত সিনেমা দর্শকেরা আলোচনায় ঢুকে শুধু একের পর এক চলচ্চিত্র, তার পরিচালক তার পাত্র-পাত্রির কথা বলতে থাকেন। ধরা যাক ‘আ গেম অব থ্রোনস’ এর কথা। সিনেমা পাগল সৃজনশীল দর্শকরা শুধু এই ধারবাহিক চলচ্চিত্রটি দেখেই শেষ নামান না। এর প্রতিটি চরিত্র ও সংলাপের সঙ্গে তারা হাঁটতে থাকেন। চরিত্র ও সংলাপের বাইরেও আরো নানা বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে থাকেন। তাদের মনোজগতে রেখাপাত করতে থাকে চলচ্চিত্রটি। তার প্রভাব নানাভাবেই বিস্তৃত হতে থাকে। চলচ্চিত্রটির শেকড় কিন্তু বই।

আ গেম অব থ্রোনস (সিংহাসনের খেলা) হল জর্জ আর. আর. মার্টিন রচিত ‘আ সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার’ উপন্যাস ধারাবাহিকের প্রথম উপন্যাস। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট, ১৯৯৬। উপন্যাসটি ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ কাল্পনিক উপন্যাসের জন্য লুকাস পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও নেবুলা পুরস্কার ও ওয়ার্ল্ড ফ্যান্টাসি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে। এই উপন্যাসের পরিচ্ছেদ ব্লাড অব দ্য ড্রাগন উপন্যাসিকাটি ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিকার জন্য হুগো পুরস্কার লাভ করে। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে উপন্যাসটি ছিল নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রিত বই। ২০১১ সালের জুলাই মাসে শীর্ষে পৌঁছায়। এর সকল পর্যায়েই সিনেমা বোদ্ধা নির্মাতারা বিষয়টির গভীরে গিয়ে ভাবতে থাকেন। স্বপ্ন দেখতে থাকেন।

আমাদের দেশে প্রচুর সংখ্যক বই বের হয়। ধরা যাক, এর ত্রিশ ভাগ পাতে দেয়ার মতো (হতে পারে আরো কম, হোক না)। এই ত্রিশ ভাগ নিয়ে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। উপন্যাসগুলোকে আমরা আলাদা করে ফেলতে পারি। খুব বেশি নয় দশটি মৌলিক উপন্যাসকে সিনেমা বানানোর জন্য ভাবনায় আনতে পারি। চলচ্চিত্রের সংগঠকরা শুধু নিজেদের গল্প নিয়ে ভাববেন কেন। বইমেলার সেরা বই আপনারাও বাছতে পারেন। আপনারাও তো সেরা বইয়ের জন্য দশটি পুরস্কার রাখতে পারেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন পারে দশটি বইকে পুরস্কৃত করতে।

আপনারা ঘোষণা দিয়ে গল্পের সার সংক্ষেপ নিন। বই জমা নিন। লেখককে পুরস্কার দিন। তারপর বই থেকে সিনেমা বানান। এর ভেতর দিয়ে অনায়াসেই জমে যেতে পারে আমাদের শিল্প সাহিত্যের ভূবন। বড় ক্যানভাসে ভাবতে পারলে সেখানে অনিয়ম দাঁড়াতে পারবে না। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার পথ পায়।

আমরা কবিতার বইকে পুরস্কৃত করি। একটি কবিতার বইয়ের সব কবিতা ভালো নয়। তারপরও কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি পুরস্কার পেতেই পারেন। তার চেয়ে আগে কবি পুরস্কার পেতে পারেন ভালো একটি কবিতার জন্য। কবিতা একটি অনবদ্য সৃষ্টি। যারা বিখ্যাত কবি, তাদের তো বিশেষ কয়েকটি কবিতা বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তাহলে বইমেলায় কেন সেরা কবিতার জন্য কয়েকজন কবিকে পুরস্কার দেয়া হবে না! বইমেলায় সেরা কবিতার জন্য অনেক দামী পুরস্কার ঘোষণা করতে পারে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সে কবিতা শুধু প্রকাশ হয়ে বইয়ের মধ্যেই পড়ে থাকবে না। সেটির বহুমুখি ব্যবহার থাকবে। সেই কবিতা মানুষের চেতনা বিকাশে কাজ করবে। কবিতাটি আমাদের অগ্রসরমান জীবন ধারায় যুক্ত হয়ে যেতে পারে।

এর কিছুই হচ্ছে না। গন্তব্যহীন এক ধাঁধার মধ্যে আটকে আছে শিল্প সাহিত্যের পথ।