চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গতির জবাব পাওয়ার হিটিং: লড়াইয়ের ভেতর যত লড়াই

চলতি বিশ্বকাপের সঙ্গে ১৯৯২ বিশ্বকাপের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে অনেকই। শিরোপা নির্ধারণ হলে আরেকটা জায়গায়ও মিলে যাবে। ইমরান খানের নেতৃত্বে সেবার বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পথে তিনটি ম্যাচে হেরেছিল পাকিস্তান। এবারও যারা শিরোপা জিতবে, নামের পাশে থাকবে তিনটি পরাজয়ের দাগ!

১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জেতার পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত ও সাউথ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল পাকিস্তান। বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড হেরেছে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কাছে।

রোববারের ফাইনালে লর্ডসের ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে কয়েকঘণ্টা পরই মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ম্যাচে শিরোপার মীমাংসা করে দিতে পারে কয়েকটি ফ্যাক্টর। লড়াইয়ের ভেতরের সেসব লড়াই নিয়েই এই আয়োজন।

বিশ্বসেরা ব্যাটিং বনাম বিশ্বসেরা বোলিং অ্যাটাক
এবারের আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপগুলোর একটি ইংল্যান্ডের। পরিসংখ্যান তাদের এগিয়ে রাখবে শীর্ষেই। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে টুর্নামেন্টে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৬.৪৩ ইকোনমিতে রান সংগ্রহ করেছে ইংল্যান্ড। উইকেটপ্রতি ৪৩.২৬ গড়ে রান তুলেছে স্বাগতিকরা, যেক্ষেত্রে তাদের চেয়ে এগিয়ে কেবল ভারত।

বোলিংয়ে যে নিউজিল্যান্ডই সেরা সেটি নিয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। ওভারপ্রতি মাত্র ৫.০১ রান দিয়েছে কিউইরা। বোলিং গড়ও দুর্দান্ত- ২৭.১২ যেটি আবার টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ।

যদি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ও ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের তুলনা করা হয় তবে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে থাকবে ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ডের ওভারপ্রতি রান তোলার হার ১০ দলের মধ্যে নবম এবং ব্যাটিং গড় সপ্তম। সেখানে বোলিং ইকোনমি রেট ও বোলিং গড়েই শুধু নিউজিল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে ইংল্যান্ড।

গতি বনাম পাওয়ার হিটিং
ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি ও লোকি ফার্গুসন- গতির ঝড় তোলার জন্য প্রস্তুত নিউজিল্যান্ডের পেস অ্যাটাক। এই তিন গতিদানবের উপস্থিতিই নিউজিল্যান্ডকে সেরা বোলিং আক্রমণের তকমা দিয়েছে। গতির জবাবে ইংল্যান্ডের রয়েছে পাওয়ার হিটার। ইনিংসের শুরুতে জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো ঝড় তোলার জন্য প্রস্তুত। গতি আর পাওয়ার হিটিংয়ের শুরুর লড়াই-ই ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দিতে পারে। শেষদিকে জস বাটলার ও ইয়ন মরগানও রয়েছেন টর্নেডো ইনিংস খেলার জন্য।

রয়-বেয়ারস্টো বনাম গাপটিল-নিকোলস
১২৮, ১৬৪, ১২৩ ও ১২৪- বেয়ারস্টো ও রয় একসঙ্গে ইনিংস ওপেন করার সময় সর্বশেষ চারটি জুটি। দুজনের দুর্দান্ত জুটিই ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছে। রোববারের ফাইনালে এই জুটিই গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। অন্যদিকে সর্বশেষ ৭ ইনিংসে ৭ গড়ে ১, ২, ২৯, ৫, ০, ১২, ০- রান করেছে নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি। ফাইনালেও যদি একই পথে হাঁটেন দুদলের ওপেনাররা, সেটি ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখবে শিরোপা জয়ের পথে।

নিউজিল্যান্ডের উইলিয়ামসন-নির্ভরতা এবং ইংল্যান্ডের রুট ফ্যাক্টর
বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে কেন উইলিয়ামসন ও জো রুট দুজনই রয়েছেন দারুণ ছন্দে। রুট ৫৪৮ এবং উইলিয়ামসন করেছেন ৫৪৯ রান। দুজনের রানের ব্যবধান মাত্র এক। তবে দলের মধ্যে তাদের প্রভাব বিবেচনায় আনলে পার্থক্য বিস্তর। উইলিয়ামসন নিউজিল্যান্ডের ৩০% রানের অবদান রেখেছেন। সেখানে ইংল্যান্ডের রানে রুটের অবদান ২০ শতাংশের কম। উইলিয়ামসন যখন ক্রিজে ছিলেন তখন নিউজিল্যান্ডের ৫৯ শতাংশ রান এসেছে। রুটের ক্ষেত্রে সেটি ৪৭ শতাংশ। ফাইনালে উইলিয়ামসন ও রুট ফ্যাক্টর প্রভাব ফেলতে পারে ফল নির্ধারণেও।

লড়াইটা পেস অ্যাটাকেরও
ইংল্যান্ডের পেস অ্যাটাকও কম শক্তিশালী নয়। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ৬৬ উইকেট নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। খুব পিছিয়ে নেই ইংল্যান্ডও, ইংলিশ পেসারদের দখলে গেছে ৬৪ উইকেট। দুই দলের দুজন করে খেলোয়াড় কমপক্ষে ১৫ উইকেট নিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের লোকি ফার্গুসন ও ট্রেন্ট বোল্ট এবং ইংল্যান্ডের জফরা আর্চার ও মার্ক উড। লর্ডসে দুদলের পেসাররা পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন।

টস ফ্যাক্টর
বিশ্বকাপের ফাইনালে টস এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বিশ্বকাপে আগে ব্যাটিং করে সর্বশেষ ২২ ম্যাচের ১৭টিতেই জয় পেয়েছে দলগুলো। লর্ডসে তো আগে ব্যাটিং করা দলের জয়ের হার শতভাগ! চলতি আসরে লর্ডসে চারটি ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করা দল জিতেছে। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের আগের ১১ আসরে সাতবারই আগে ব্যাটিং করা দল জয় পেয়েছে। যদিও ২০১১ সালে ভারত এবং ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া রানতাড়া করে শিরোপা জেতে। এই আসরে রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ এড়াতে টস হয়ে উঠতে পারে ফলের নিয়ামক।