চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গণভবনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন: রিজভী

গণভবনে বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গণভবনকে প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভবন মনে করেন না। তিনি নিজের ভবন মনে করেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি দখলের প্রবণতা আছে। এই দখলদারী মনোভাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণভবনকে ব্যক্তিগত ভবন মনে করেন বলেই সেখানে বসে একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে যাচ্ছেন।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আচরণবিধির ১৪ ধারায় বলা আছে, সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না।

এখন প্রশ্ন হলো, গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেড়শো সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করার যে অঙ্গীকার করেছেন তা কি আচরণবিধি ভঙ্গ নয়? সেদিনের অনুষ্ঠানটি সরকারি কর্মসূচি ছিল না। সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে এবং জনগণের ভবন গণভবনকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করে তুলেছে। এসব কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় যে, সরকার একতরফা ও ভোটারশূন্য নির্বাচনের পথেই হাঁটছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্মাণ করতে দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন তা অরুচিকর, অশ্রাব্য ও উস্কানিমূলক। তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না।

নির্বাচনী আচরণবিধির ১১ ধারায় বলা আছে, কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের মনোনীত কেউ বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি উস্কানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করতে পারবেন না। ওই ধারার উপ-ধারা (ক)-তে উল্লেখ আছে, ‘নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রদান বা কোন ধরনের তিক্ত (উস্কানিমূলক বা মানহানিকর) বক্তব্য প্রদান করতে পারবেন না। যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী বর্তমানে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ তবু এই উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রীয় ভবন গণভবনে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গণভবনে সাক্ষাতকার নিয়েছেন। রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে একতরফা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার প্ল্যান করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের নানা ধরনের নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।

নির্বাচনী আচরণবিধির ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী গণভবনের মতো একটি রাষ্ট্রীয় ভবনে থেকে জনবিরোধী কার্যকলাপ এবং জনগণের ভোটারাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র কোনভাবেই করতে পারেন না।’

‘এই পরিস্থিতিতে গত তিন দিন আগে বিকাল ৫টায় গণভবনে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাত থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৮ লাখ কম্বল দিতে যাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি),’ বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের নামে কম্বলসহ ত্রাণসামগ্রী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিতরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযোগ দেয়া হলেও শুধু আশ্বাসে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের গতি-প্রকৃতি লক্ষ্য করলে বিস্মিত হতে হয়, সত্যি বিচিত্র নির্বাচন কমিশন!’

বিএনপির এই নেতা বলেন, দলবাজ নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কখনোই সাহসী হতে পারবেন না। ‘মূলত জাল-জোচ্চুরি-প্রহসনের ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশন সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সুস্পষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি অমান্য করলেও নির্বাচন কমিশন তাতে কর্ণপাত না করে নির্বাচন নিয়ে সরকারের গোপন মিশনগুলির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করছে। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন কমিশনের পক্ষে বিধি ভঙ্গকারী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কার্যত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়।

‘তবে এখনো সময় আছে, নিজেদেরকে সরকারের ছাতার নিচে থেকে বের করে জনগণের ছাতার তলে আসুন। জনগণের হরণকৃত ভোটারাধিকার ফেরত দেয়ার চেষ্টা করুন। আশা করবো, বিধিভঙ্গের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করবেন। যদি বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচনের চিন্তা করে থাকেন, তবে আপনারা রেহাই পাবেন না। অন্যায় বা অবিচারের পন্থা অবলম্বন করলে দেশের সাধারণ মানুষ তা রুখে দিতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে আপনাদের।’

এসময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হলে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে নিতে হবে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।