দিন কোন মতে পার হলেও শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় না পাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রাত যেন এক কষ্টের নাম। মার্কেটের নিচে, ছাদে অথবা খোলা আকাশের নিচে গাদাগাদি করে কাটছে তাদের জীবন।
এই অবস্থায়ও অবশ্য থামেনি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী ঢল। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই শত মাইলের পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর খাদ্য সরবরাহে কাজ করছে বিভিন্ন দেশি- বিদেশি সংগঠন। তবে রোহিঙ্গারা সবথেকে বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে থাকার জায়গা নিয়ে।
মোহাম্মদ রহিম। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা এক রোহিঙ্গা। রাতে সিএনজিতে করে পরিবার নিয়ে একবার টেকনাফ একবার উখিয়া ঘুরেছেন আশ্রয়ের সন্ধানে। কিন্তু কোথাও জায়গা না পেয়ে টেকনাফের উচুপ্রং এলাকার একটি মার্কেটের নিচে পরিবার নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন তিনি।
ঠিক একই অবস্থা আরও অনেকের। বিভিন্ন মার্কেটের সিড়ি, ছাদ অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বারান্দায় আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। অপরিচ্ছন্ন গিঞ্জি পরিবেশ, তারপরও ক্লান্তিই যেন ঘুম পাড়িয়ে দেয় রোহিঙ্গাদের। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার চোখেই ভয়াল অভিজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা ফিরতে চায় নিজ বাসায়, চায় নিজ জমির ফসল কাটার অধিকার।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, সেনা সদস্যদের বর্বর হত্যাযজ্ঞ এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশে এসে উঠেছে। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, রোহিঙ্গা ‘জঙ্গিদের’ নির্মূল করতেই তারা অভিযান চালাচ্ছে রাখাইন রাজ্যে।
অবশ্য বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশে সরাসরি প্রভাব পড়ছে কক্সবাজারের মানুষের উপর। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে বাড়তে থাকা রোহিঙ্গার চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। তবে নানা ভোগান্তির অভিযোগ থাকলেও মানবিক কারণে এই স্থানীয়রাই রোহিঙ্গাদের নিজেদের দোকানঘরসহ অন্যান্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।