প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্যের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন খোদ সুপ্রিম কোর্ট।
গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রধান বিচারপতির বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ বৈঠকের পর সুপ্রিম কোর্ট শনিবার গণমাধ্যমের কাছে লিখিত বিবৃতিতে তাদের অবস্থান জানান।
এতে বলা হয়: ছুটিভোগরত মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয় গত ১৩ অক্টোবর তারিখে বিদেশ গমনের প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হস্তান্তর করেন। উক্ত লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই বিবৃতিটি বিভ্রান্তিমূলক।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়: গত ৩০/০৯/২০১৭ তারিখ মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় বিচারপতি এস কে সিনহা ব্যতিত ৫ জন বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। মাননীয় বিচারপতি ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় তিনি উক্ত আমন্ত্রণে উপস্থিত হতে পারেননি। অপর চারজন অর্থাৎ মাননীয় বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং মাননীয় বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার মহোদয়গণ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
‘দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরো সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে মাননীয় বিচারপতি মোঃ ইমান আলী মহোদয় ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে আপিল বিভাগের উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি মহোদয় এক বৈঠকে মিলিত হন যে, ওই সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস. কে. সিনহা মহোদয়কে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওই সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
‘এই সিদ্ধান্তের পর ওইদিনই বেলা ১১.৩০টায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের ১৯, হেয়ার রোড, রমনা, ঢাকা বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগসমূহ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরেও তার কাছ থেকে কোন প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের উল্লেখিত মাননীয় ৫ জন বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, অভিযোগ সমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
‘এ পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরেরদিন অর্থাৎ ০২/১০/২০১৭ তারিখে তিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। এরপর ০২/১০/২০১৭ ইং তারিখে তিনি উল্লিখিত মাননীয় বিচারপতিগণকে কোন কিছু অবহিত না করেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট ১ (এক) মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। সে প্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মাননীয় বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
‘উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদেরও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে এর আগে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে কোন প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয় নাই। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে বিবৃতি প্রদান করা হলো,’ বলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
(বিবৃতির সাধু ভাষার জায়গায় চলিত ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে)
বিস্তারিত দেখুন ভিডিও রিপোর্টে: