খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারও দায়ী বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল আব্দুল মুহিত।
শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ স্বীকারোক্তি করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা বিশ্বাসই করা যায় না সোনালী ব্যাংকের এখন আমানত ও ঋণের অনুপাত প্রায় ৩৫/৩৬ শতাংশ। এটা ক্ষতিকারক। আরো একটি দোষ আছে, সেটা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। এটা অনেক বেশি। এর জন্য সরকার দায়ী, আমরাও দায়ী। আর কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহককে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়াটাও দায়ী।
তিনি বলেন, আমরা দায়ী কারণ আমরা রাষ্টয়াত্ব ৬টি ব্যাংকের উপর একটু বেশি জারিজুরি করি। যেহেতু সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়, তাই এই ব্যাংককের উপর জারিজুরিটা একটু বেশি পড়ে। তবে খেলাপি ঋণ আমাদেরকে কমাতে হবে। সেক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের বিস্তারিত সক্ষমতা যাচাই করতে হবে।
এক্ষেত্রে দুটি পরামর্শ দেন তিনি। তা হলো, প্রথমে গ্রাহকের কেওয়াইসি (know your customer) ফর্ম ভালভাবে চেক করে নেয়া অর্থাৎ ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের ঋণ পরিষদের সক্ষমতাসহ বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা। দ্বিতীয়ত, যে প্রকল্প ঋণ দেয়া হবে তা সঠিক ভাবে বিশ্লষণ করা।
‘কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তার সঠিক বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা নির্ভুলভাবে করতে হবে। তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে না। তখন খেলাপিও কমে যাবে। সেজন্য যেসব প্রকল্পে ঋণ দেয়া হবে, সেগুলো ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, আমি প্রায়ই বলে থাকি ব্যাংকিং খাতে যথেষ্ট দূর্বলতা আছে। এটাতে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নয়। এটা স্বীকার করি। তবে ১৯৭২, ৭৩ থেকে ৮০ দশক। এই সময়ের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংককে ভাল মানে উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আশরাফুল মুকবুল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমিয়ে আনতে হবে। এই ব্যাংকের ১ হাজার ২১১ টি শাখার মধ্যে ১৮১টি লোকসানি শাখা। এটা একটু বেশি। এ লোকসানি শাখা বন্ধ করা বেশ কষ্টকর।
‘তবে যেসব স্থানে লোকসানি শাখা রয়েছে সেগুলো যদি স্থান পরিবর্তন করে এর আশেপাশে যায় এবং ওই সব এলাকাগুলো কাভার করে তাহলে লোকসান হয়তো কমে আসতে পারে। এ বিষয়টি সোনালী ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে করতে পারে।’
এ সময় সোনালী ব্যাংককে ভাল অবস্থানে পৌঁছাতে সরকার সহানুভূতিশীলতার সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, ২০০৯ সালে পরিকল্পনা করেছিলাম সোনালী ব্যাংককে একটি আদর্শ ব্যাংকে রূপান্তর করতে। কিন্তু তা হয়নি। ২০১৯ সালেও হবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এটা করা সম্ভব। কারণ আপনারা সবাই যোগ্য।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, সরকারি চাকরি করি- এই প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে গ্রাহককে সেবা দিতে হবে। কারণ সরকারি ব্যাংকের চেয়ে গ্রাহকরা বেসরকারি ব্যাংকে ভাল সেবা পায়। তাই তাদের আস্থা ফেরাতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও গ্রাহকদের সেবার মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
তবে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, অনেকে ব্যাংকিং খাতের সমালোচনা করে। কিন্তু এ খাতে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা বিবেচনা করে না।