১৪ বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার জেরে ওই মামলার প্রধান আসামী টাইলস ঠিকাদার নাসির কাজী খুন হয়েছেন বলে নিহতের পরিবার ধারণা করছে। তারা বলছেন: গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ইদুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান বি এম খালেকের লোকজনই নাসিরকে হত্যা করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে নাসির কাজীকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে পুলিশ জানিয়েছে: হত্যাটি পূ্র্ব পরিকল্পিত। নাসিরকে ফোনে দেওয়া হুমকি, সিসি টিভি ক্যামেরা অচল করে দেওয়াসহ নানা বিষয় বিবেচনায় রেখে হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গত রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মহাখালী কলেরা হাসপাতালের পেছনের দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের দক্ষিণপাশের গলিতে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি গুলিতে নাসির উদ্দিন কাজী (৪০) মারা যান। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন আগে ওই মসজিদের টাইলসের কাজ শুরু করেন নাসির। ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন গলিতে ২৬টি সিসি ক্যামেরা ছিল, কিন্তু হত্যাকাণ্ডের সোয়া এক ঘন্টা আগে থেকেই ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা অচল করে দেয় দুর্বৃত্তরা। সিসি ক্যামেরা ক্যাবল বিচ্ছিন্ন করে খুব কাছ থেকে নাসিরকে গুলি করে নিরাপদেই পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় নিহত নাসির কাজীর মেয়ে নার্গিস আক্তার নিপু বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেছেন। পূর্ব শত্রুতার জের উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে এই মামলায়।
নিপু জানান: শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ইদুলপুর ইউনিয়নে তাদের গ্রামের বাড়ি । ওই ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান বি এম খালেকের লোকজনই তার বাবাকে হত্যা করেছে। চেয়ারম্যানের লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল।
২০০৪ সালে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ইদুলপুর ইউপির চেয়ারম্যান বিএম খালেক দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। নাসির ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন এবং গ্রেপ্তার হয়ে ১৪ মাস জেল খাটেন। পরে জামিনে বের হন। কিন্তু নিহত চেয়ারম্যান খালেকের লোকজন নাসিরকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছিল।
জেল থেকে বের হয়ে নাসির সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। রাজধানীর উত্তরায় বাসা নিয়ে থাকতেন তিনি। সম্প্রতি ঠিকাদারি কাজের সুবিধার্থে তিনি মহাখালীতে ভাড়া বাসায় ওঠেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সাইহান অলিউল্লাহ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে।
মামলার তদন্ত এবং ছায়া তদন্তের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন: ঠিকাদার নাসির কাজী হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। এগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ১৪ বছর আগে শরীয়তপুরের ইদিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ খালেক হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। ওই হত্যার সঙ্গে নাসির কাজী জড়িত ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে নাসির হত্যার যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাসির কাজী মহাখালী, নিকেতন ও আশপাশের এলাকায় টাইলসের ঠিকাদারির কাজ করতেন। এ হত্যার সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব অথবা চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: হত্যাটি পূ্র্ব পরিকল্পিত, নাসিরকে ফোনে দেওয়া হুমকি, সিসি টিভি ক্যামেরা অচল করে দেওয়াসহ নানা বিষয় বিবেচনায় রেখে হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।