‘দণ্ডিত’ ও ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ ব্যক্তি দলের যে কোন কমিটির সদস্যপদ কিংবা সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্যতা সংক্রান্ত গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি যে ‘সংশোধিত গঠনতন্ত্র’ নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছিল তা গ্রহণ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই আদেশের ফলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় পদে থাকতে পারেন না বলে অভিমত দিয়েছেন আইনজ্ঞরা। কারণ তারা দুজনেই দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
বিএনিপির ‘সংশোধিত গঠনতন্ত্র’ গ্রহণ না করার নির্দেশনা চেয়ে মোজাম্মেল হোসেন নামের এক ব্যক্তির করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো.আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
আজকের আদেশের বিষয় সাবেক আইন মন্ত্রী শফিক আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আদেশটি যথাযথ হয়েছে। হাইকোর্ট আজ যে আদেশটি দিয়েছেন তাতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আইন ও নৈতিকতার দিক থকে দলীয় পদে থাকতে পারেন না। কারন তারা দণ্ডিত।’
আর আদেশের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন: একটা দলের পদে দণ্ডিত কেউ থাকতে পারবে না এটাই তো স্বাভাবিক। সমস্ত দুনিয়ার সব রাজনৈতিক দলের এটাইতো নৈতিক স্ট্যান্ডার্ড। আজ নির্বাচন কমিশনের উপরে সঠিকভাবেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যাতে এটা গ্রহণ না করে। এটা গ্রহণ করার অর্থ হবে-দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করা। হাইকোর্টের আজকের আদেশের পরে বিএনপির দণ্ডিতরা দলের পদে থাকতে পারেন কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, তাদের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের কপি যদি নির্বাচন কমিশন গ্রহণ না করে তাহলে পারবে না।
হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আজ আমাদের ধর্মঘট চলছিল। ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর এটি জানতে পারলাম। এ ব্যাপারে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমরা দেখছি, কীভাবে কোন পরিপ্রেক্ষিতে আদেশটা হলো। রিট কীভাবে হলো। আমাদের বিষয়টা পরীক্ষা করে তারপরে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিন্তা করবো।
আদেশের পর রিটের পক্ষের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বলেন: বিএনপির ‘সংশোধিত গঠনতন্ত্র’ গ্রহণ না করতে বিএনপি সমর্থক দাবিকারি কাফরুলের বাসিন্দা মো: মোজাম্মেল হোসেন নির্বাচন কমিশনে একটা আবেদন করে। এবং ‘সংশোধিত গঠনতন্ত্র’ গ্রহণ না করার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিট করেন মোজাম্মেল।
আজ সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনে মোজাম্মেল হোসেনের আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ইসির প্রতি নির্দেশ দেন। এবং মোজ্জামেলের আবেদন নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির ‘সংশোধীত গঠনতন্ত্র’ গ্রহণ না করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
সংশোধনের আগে বিএনপির গঠনতন্ত্রে ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা ছিল: নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
তারা হলেন: (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায় বা কুখ্যাত বলে
পরিচিত ব্যক্তি।
গত ২৮ জানুয়ারি বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়।
সেখানে ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয় যে: ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা/ বিলুপ্ত হবে। এখানে উল্লেখ্য যে ( / বিলুপ্ত হবে ) বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।