বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাবার নামে বন্দোবস্ত দেয়া দিনাজপুরের ‘মাতা সাগর’ জলাধারের প্রায় ৪৬ একর জমি সংক্রান্ত মামলার আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করেছেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক।
রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফুল ইসলাম এই আবেদন করেন।
আবেদনের বিষয়ে সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন: ‘বন্দোবস্তের শর্ত ভেঙে এই সম্পত্তি এখন পর্যন্ত দখল করে আছে।
এই আইনজীবী আরো বলেন: ‘২০০৪ সালে এই সম্পত্তি নিয়ে মামলা হয় এবং ২০০৫ সালে রায় হয়ে যায়। এত অল্প সময়ে রায় ঘোষণাটি ছিল অনভিপ্রেত। এই রায়ের পর হাইকোর্টে আপিল হলে মামলার এক্সিবিট (প্রদর্শিত নথিপত্র) নিয়ে যাওয়ায়র কারণে মামলটি প্রস্তুত হচ্ছিল না। আজকে দিনাজপুরের ডিসির প্রতিনিধি হিসেবে সেখানকার এসি ল্যান্ড এসে হলফনামা করেছেন দ্রুত সময়ে আপিলটি শুনানি করার জন্য।’
দিনাজপুরের মাতাসাগরের প্রায় ৪৬ একর খাসজমি বরাদ্দ হয় খালেদা জিয়ার বাবা এম ই মজুমদারের মালিকানাধীন দিনাজপুর লাইভস্টক অ্যান্ড পোলট্রি ফার্মের নামে। জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি ও ৪ জুন দুটি বন্দোবস্তের মাধ্যমে ওই বরাদ্দ দেয়া হয়।
১৯৮৪ সলে খালেদা জিয়ার বাবার মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া, ভাই সাঈদ ইস্কান্দার, শামীম ইস্কান্দার, বোন খুরশীদ জাহান হক ও বেগম শালিনা এক পর্যায়ে মা তৈয়বা মজুমদারের কাছে পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায়িক শেয়ার হস্তান্তর করে দেন।
১৯৮৬ সালে তৈয়বা মজুমদার তার সমস্ত শেয়ার চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান, তার বাবা আরশাদ আলম ও তাদের আত্মীয় জনৈক রোকসানার কাছে বিক্রি করে দেন। ফজলুর রহমানের বাবা আরশাদ আলম মারা গেলে সর্বশেষ ওই পোলট্রি ফার্মের শেয়ারের মালিকানা দাঁড়ায় বিএনপি নেতা চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান ও তার ভাই মিজানুর রহমানের।
১৯৯৫ সালে আত্মীয় রোকসানাও তার শেয়ার মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দেন। ফলে ওই ফার্মের মালিকানা নিয়ে মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমান ভোগদখল করতে থাকেন। ২০০৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ওই সম্পত্তির খাজনা দিতে গিয়ে জানতে পারেন, সম্পত্তিটি তাদের নামে না হয়ে সরকারের নামে রেকর্ড হয়েছে।
এরপর মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমান তাদের নিজেদের নামে ওই জমির স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে দিনাজপুরের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ডিক্রি ঘোষণার মামলা করেন। ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল দিনাজপুরের তৎকালীন প্রথম যুগ্ম জেলা জজ রায় ঘোষণা করেন। এরপর ওই রায় নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে। সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া জমি কীভাবে ব্যক্তির নামে স্বত্ব ঘোষণা করা হলো, সে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই।
এরপর ২০০৪ সালে খাস জমিটি সরকারের নামে রেকর্ড হয়েছে জানতে পেরে নিজেদের নামে স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে দিনাজপুরের আদালতে মামলা করেন মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমান।
বিএনপি শাসনামলে ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল ওই জমির স্বত্ব তাদের দু’জনের নামে ঘোষণা করে রায় দেন দিনাজপুরের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক সদ্য বিদায়ী আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক দুলাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি আপিল করে সরকার। কিন্তু মামলায় প্রদর্শিত নথি না থাকায় দীর্ঘ প্রায় দশ বছর আপিলটি শুনানি করা সম্ভব হয়নি।
রোববার সেই আপিলটিই দ্রুত শুনানির জন্য দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের পক্ষে একটি আবেদন করা হয়।
আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার বিবাদীপক্ষ (ডিসি অফিস) আপিলটি দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিলেও তা সম্ভব হয়নি, কারণ বাদীপক্ষ রায় ঘোষণার পর পরই প্রদর্শিত নথি (ডকুমেন্টস) নিম্ন আদালত থেকে উঠিয়ে নেয়।বিবাদিপক্ষ একাধিক নোটিশ গ্রহণ করলেও তারা ওইসব নথি দাখিল করেননি। বাদিপক্ষ জেনে শুনেই এই আপিল নিষ্পত্তি করতে বিলম্ব করছে। এ কারণে ওইসব প্রদর্শিত নথি ছাড়াই দ্রুত আপিলটি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।