জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতের করা জরিমানা স্থগিত করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে আজকের আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এ মামলার সকল নথি পাঠাতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, আমাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত রয়েছেন। তবে আপিলটি শুনানি করবেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী।
এরপর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, ‘‘ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্ডম্যান্ট অ্যাক্ট ১০ (১) ধারায় আপিল করা হয়েছে। আমি আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আবেদন করছি। আপিল গ্রহণ হলে জামিন আবেদন দেওয়া হবে। ৪০৯ ধারায় আপিলকারীকে সাজা দিয়েছেন ওই (বিচারিক) আদালত।’’
এসময় আদালত বলেন, ‘অ্যাডমিশনে কী প্রেয়ার আছে? নাকি শুধুই আপিল অ্যাডমিশন চেয়েছেন? অ্যাডমিশনের পরে আর কী প্রেয়ার আছে?’
এর জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, একটা আপিল অ্যাডমিশনের আবেদনে নরমালি যা যা থাকে আমরা তাই চেয়েছি। এরপর আপিলের নথি দেখে আদালত বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী সাজা বা দণ্ড স্থগিতের বিধান আছে। কনভিকশন কি স্থগিত করা যায়? ক্রিমিনাল অ্যাক্ট ল’ অ্যামেন্ডম্যান্ড অ্যাক্টে কনভিকশন স্থগিতের বিধান নাই। আপনারা তো কনভিকশনও স্থগিত চেয়েছেন।
এসময় এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সাধারণত এটা একটা প্রথা। সেজন্য এটা আমরা চেয়েছি। এরপর আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে এই আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মামলার নথি তলব আদেশ দেন এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড স্থগিত করেন।
এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৫ দিন ধরে তিনি (খালেদা জিয়া) কাষ্টডিতে আছেন। যেহেতু তাকে শর্ট সেনটেন্স দেওয়া হয়েছে, সেজন্য আমরা তার বেইল (জামিন) চাচ্ছি। বয়স, সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় জামিন পাওয়ার হকদার তিনি।
এসময় আদালত বলেন, আদালতের প্রথা আছে সাজা কম হলে জামিন দেওয়ার। তবে এই মামলায় মেরিট আছে। একারণে এটা আমরা কার্যতালিকায় এনে শুনানি করতে চাই।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে দাঁড়িয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, আমরা সকালে আপিল আবেদনের নথি পেয়েছি। বিষয়টা আমরা ম্যারিটের উপর শুনানি করতে চাই। তাই আমাদের সময় দরকার।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলার পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, আমরা অ্যাডমিশনের শুনানি করতে পারিনি। এরপর তিনি দুদক আইনের ৩৩ (৫) ধারা দেখিয়ে আদালতকে বলেন, এ ধরনের বিশেষ আইনের মামলার ক্ষেত্রে দুদককে যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে শুনানি করতে হবে। আর আমরা আজ ৯টা ৩১ মিনিটে জামিন আবেদনরের কপি পেয়েছি। ফৌজদারী আইন ব্যবস্থায় নারী বলে আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। কিন্তু দুদক আইনে সেই সুযোগ নেই। জামিনের আবেদন অনেক বড়, গ্রাউন্ডও অনেক। আমরা চাচ্ছি বিষয়টি কার্যতালিকায় এনে শুনানি করা হোক।
এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, সাধারণত কম সাজা হলে আপিল করলে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়। তখন আদালত বলেন, আপিল বিভাগের অনেক আদেশ আছে কম সাজা হলে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো বিশেষ আইন প্রণয়নের আগে। যেহেতু দুদক আইনে আছে তাদের যুক্তিসঙ্গত সময় দেওয়ার তাই আমরা রোববার দুপুর ২টায় শুনানির জন্য রাখলাম।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুপুর ২টায় শুনানির সময় নির্ধারণের আবেদন জানালে আদালত বেলা ১২টায় শুনানির জন্য সময় ঠিক করেন। তার আগে গত মঙ্গলবার বিকালে হাইকোর্টের এই বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন উপস্থাপন করা হলে আদালত আপিল গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী বিষয়টি আজকের কার্যতালিকার ৬ নম্বরে আসে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আর তার ছেলে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই সাথে এদের সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা জরিমানা করা হয়।
ওইদিন আদালত ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় উল্লেখ করে এর সারসংক্ষেপ পড়েন। তবে সোমবার পর্যবেক্ষণসহ রায়ের যে অনুলিপি দেওয়া হয় তা ছিল ১ হাজার ১৭৪ পৃষ্ঠার।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। এখন তিনি সেখানেই আছেন।