বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এখন সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। খালেদার জিয়াকে সম্প্রতি জেলে কেমন দেখেছেন, তাও জানান এই বিএনপি নেতা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ বলেন, গত সপ্তাহে দেখা হয়েছে নেত্রীর সঙ্গে। তার শরীর খুবই নরম হয়ে গেছে। কিন্তু মনোবল শক্ত। দুই হাতে ব্যথা। ফুলে গেছে। পা টা মাটিতে রাখা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। আজকে এক বছর হয়ে গেছে তার বন্দীজীবনের। বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে একটি ছোট্ট, ভিত্তিহীন কারণে সাজা দেয়া হয়েছে। এই মামলায় ৭ দিনের বেশি জেলে থাকার কথা নয়। অথচ হাইকোর্টে জামিনের পরও তাকে দুই মাস জেলখানায় থাকতে হলো৷ তাকে এরপর ছোট ছোট মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। কুমিল্লা, নড়াইল আর ঢাকার তিনটি মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো। এরপর চলে গেলো নিম্ন আদালতে৷ নিম্ন আদালত তো পুরোপুরি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সুপ্রিমকোর্টের কোনো এখতিয়ার নাই বললেই চলে।
তিনি আরও বলেন, লিগ্যাল সিস্টেমে সরকার যে হস্তক্ষেপ করছে তা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব না। এখান থেকে মুক্ত হওয়া না গেলে দেশে সভ্যতা আসবে না। আইনিভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনজীবীরা সবাই চেষ্টা করেছেন। এখন সম্ভব নয়। আইনজীবীদের হাতে তা নেই। আদালতেও নেই। এটা চলে গেছে সরকারের ইচ্ছার উপর। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আগামী ৭দিনেই বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি আসবে।
মওদুদ বলেন, এখন আমাদের যা করতে হবে তা হলো-আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। যেহেতু আদালতের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তাই আন্দোলন। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে একটি আন্দোলনের কর্মসূচি দরকার, সেই আন্দোলন সফল করতে আমরা যা কিছু করার করি৷ আর আন্দোলন বললেই আন্দোলন হবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঘর বাড়ি পুড়িয়েছে, হত্যা করেছে৷ তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, সংলাপে কোনো দাবি মানা হয়নি। তবু আমরা দুটি কারণে নির্বাচনে যাই- প্রথমত হলো বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী মামলার শিকার। ভয় ভীতি, অত্যাচার, নির্যাতনে নিস্পেষিত৷ এই অবস্থা থেকে দলকে চাঙ্গা করতে নির্বাচনে যাই। আর একটি কারণ হলো, ড. কামালের উপর অন্ধ বিশ্বাস ছিলো। অন্তত বিশ্বাস ছিলো নির্বাচন হবে। কিন্তু দুটি আশাই আমাদের নিরাশায় পরিণত হয়েছে। সরকারের এই ফ্যাসিবাদী আচরণের কথা কল্পনাই করতে পারিনি৷ সরকার যে এতোটা নিচে নেমে যাবে তা ভাবতেই পারিনি।
আন্দোলন বিষয়ে মওদুদ বলেন, আন্দোলন কাকে নিয়ে করবেন? যারা আন্দোলন করবে তারা তো দাঁড়াতে পারে না। আন্দোলন যাদেরকে নিয়ে করবেন তাদেরকে পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস ফিরিয়ে আনেন। তাদেরকে আমাদের সঙ্গে একত্রিত করেন। তাহলে তারা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আন্দোলন করবে। এই দুঃসময়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে এবং তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। এই পুনর্বাসন যদি আমরা করতে পারি তাহলে সম্ভব। এই সরকার যে শূণ্যতা সৃষ্টি করেছে তা আর তখন থাকবে না। সরকার বেশিদিন আনন্দে থাকতে পারবে না। কোনো না কোনো সময়ে আন্দোলন হবে, সরকারের পতন হবে।
সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, এডভোকেট মাহবুন উদ্দিন খোকন, গণফোরাম নেতা এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।