ভারতের বিহার রাজ্যে ভাইরাসজনিত মস্তিষ্কের প্রদাহে এ পর্যন্ত ১০৫ জন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও কয়েকশ’।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অসুস্থ প্রত্যেকটি শিশুর রোগের লক্ষণ একই – তীব্র জ্বর, তারপর খিঁচুনি। এক পর্যায়ে মাথা ফুলে যায়। সঙ্গে দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, প্যারালাইসিস, জ্ঞান হারানো। যারা মারা গেছে তাদের প্রায় সবারই বয়স ১০ বছরের কম।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত এই রোগটির নাম অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস সিনড্রোম (এইএস)। শতাধিক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মাত্র গত কয়েক সপ্তাহে।
মূলত বিহারের মুজাফফরপুরে মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটছে।
কেন ঘটছে এত শিশুমৃত্যু
এইএস মস্তিষ্কের একটি ভাইরাসজনিত রোগ। কিন্তু শুধু ভাইরাস নয়, এত বিপুল সংখ্যক শিশুমৃত্যুর কারণ হিসেবে অনেকগুলো সমস্যার পাঁচমিশালিকে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে লিচুর মধ্যে থাকা টক্সিন বা বিষাক্ত জৈব-রাসায়নিক পদার্থ।
২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে শুধু মুজাফফরপুর জেলাতেই হাজারের বেশি শিশু এইএসের সংক্রমণে মারা গেছে।
রোগটি এভাবে মারাত্মক অবস্থা ধারণ করার মূল কারণ নিয়ে গবেষকরাও বিভ্রান্ত। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিহার রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ তাপদাহ, অপুষ্টি এবং এর মাঝে খালিপেটে অনেক বেশি লিচু একবারে খাওয়ার কারণে চলতি বছর এইএস ভাইরাস শিশুদের কাবু করে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এর চিকিৎসা হিসেবে শুধু নির্দিষ্ট সময় পরপর রোগীকে গ্লুকোজ আর প্রয়োজনে কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিলেই রোগী ধীরে ধীরে সেরে ওঠার কথা বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু বিহারের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে মনে করছেন তারা।
মুজাফফরপুরের শ্রীকৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান ডা. জি এস সাহনি বলেছেন, শুধু লিচু খাওয়াকে একা দোষ দেয়া যাবে না। এই হাসপাতালেই বেশিরভাগ এইএস আক্রান্ত শিশুকে ভর্তি করা হচ্ছে।
‘শুধু লিচু এর কারণ হলে শহরাঞ্চলের শিশুরাও এর শিকার হতো। গত দুই দশকে বিহারের শহরাঞ্চলগুলোতে গুনে চারটার বেশি এইএসের কেস পাওয়া যায়নি,’ বলেন ডা. সাহনি।
এনডিটিভি জানিয়েছে, এইএসে ভুগে মারা যাওয়া বেশিরভাগ শিশুই বিহারের দরিদ্রতম মহাদলিত জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত। তারা সবাই অপুষ্টির শিকার।
বিহারে বর্তমানে শুধু হিটস্ট্রোকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। এই তীব্র গরমে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি অপুষ্ট দেহে তুলনামূলক সহজলভ্য সুস্বাদু ফল লিচু বেশি করে খাচ্ছে শিশুরা। খালিপেটে অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু, বিশেষ করে একটু অপরিপক্ক লিচু খেলে এতে থাকা টক্সিন শরীরকে আক্রান্ত করে।
অন্যদিকে এইএসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ একের পর এক রোগী চিকিৎসার জন্য ভিড় জমাচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। ধারণক্ষমতার বাইরে এত বেশি শিশুকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ফলে সব মিলিয়ে বাচ্চাগুলো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।