ইরানি কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়তা দিয়েছিল, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উপলক্ষে নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে ম্যাচ টিকিট। কথামত সেই টিকিটগুলো অনলাইনে ছাড়ার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে।
ইরানের নারীদের জন্য এটি হতে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনার একটি ধাপ। দেশটিতে নারীদের মাঠে যেয়ে পুরুষদের খেলা দেখার সুযোগ ছিল না। ছেলের বেশ ধরে ম্যাচ দেখতে যেয়ে এক মেয়ে আইনের মারপ্যাঁচে পড়ার পর গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিলে নড়েচড়ে বসা ফিফার চাপে ভোল পাল্টায় দেশটি।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তেহরানে আগামী বৃহস্পতিবার কম্বোডিয়ার মুখোমুখি হবে ইরান। ইরান ফিফাকে আগেই নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, সেই ম্যাচের নির্ধারিত কিছু পরিমাণ টিকিট সংরক্ষিত রাখা হবে নারীদের জন্য। গ্যালারির একটি অংশও বরাদ্দ রাখার কথা জানায় ইরান।
শুক্রবার সকালে অনলাইনে ছাড়া হয় নারী আসনের ৩৫০০ টিকিট। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ইরানের সংবাদমাধ্যম আইএসএনএ।
ফিফা জানিয়েছে, সর্বমোট ৪৬০০ টিকিট সংরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি তারা পেয়েছে ইরানের কাছ থেকে। তবে নারী সমর্থকদের কথা চিন্তা করে টিকিটের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা সংস্থাটির। একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ম্যাচে নারীদের খেলা দেখার বিষয়টি তদারকি করতে একজন প্রতিনিধিও পাঠাবে ফিফা।
১৯৮১ সাল থেকেই পুরুষদের ম্যাচে ইরানের নারীদের প্রবেশ নিষেধ। মাঠে নারীদের প্রবেশের এই নিষেধাজ্ঞা যদিও আইনে লিখিত নেই। গত বছর তেহরানের একটি মাঠে বিশ্বকাপ বাছাই দেখার জন্য সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
তবে গত মাসে সাহার ছদ্মনামে এক নারী ভক্তের গায়ে আগুন ঢেলে আত্মাহুতির বিষয়ে আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। প্রিয় ফুটবল দল এস্তেঘলাল অফ তেহরানের খেলা দেখতে গিয়ে গত মার্চে পুরুষের বেশে মাঠে প্রবেশের চেষ্টাকালে ধরা পড়েন ওই তরুণী। পরে তিন দিনের জেল দেয়া হয় তাকে।
জামিনে মুক্তি দেয়া হলেও তরুণীর মামলার রায় পেতে ছয় মাস সময় লেগে যায়। কিন্তু তিনি যখন আদালতে যান তখন পারিবারিক কাজের কারণে বিচারক তা মুলতবি করে দেন।
এরপর আবারও তিনি তার মোবাইল ফোন আনতে আদালতে যান। গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সেদিন তিনি আদালতে গেলে কেউ বলছিলেন যে, দোষী প্রমাণিত হলে তাকে ছয় সপ্তাহ থেকে দুই বছরের জেল দেয়া হতে পারে।
ওই তরণী সেই কথা শুনে আদালত প্রাঙ্গণেই গায়ে আগুন দেন। এরপর হাসপাতালে এক সপ্তাহ জীবনযুদ্ধে লড়ে তার মৃত্যু হয়।
সাহারের এই ঘটনা সারাবিশ্বে থাকা ইরানিরা গুরুত্ব সহকারে নেন। তার প্রিয় দলের নীল রংয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইরানিরা হ্যাশট্যাগ ‘ব্লু গার্ল’ শব্দের প্রচলন ঘটায়। নড়েচড়ে বসে ফিফা। ফুটবল মাঠে নারীদের প্রবেশ বন্ধ করে রাখায় ইরানকে নিষিদ্ধ করারও হুমকি দেয়া হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।