সরকারি অর্থ ব্যয় করে ক্ষমতায় টিকে থাকার আকুতি জানাতে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন: ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিদেশিদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।’
রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন: ‘দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে ট্রানজিটসহ ভারতকে সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পায়নি বাংলাদেশ। তবে প্রতিদান হিসেবে ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। ভারতীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এমন খবর প্রকাশ করেছে।’
‘‘শুক্রবার শান্তি নিকেতনের ‘বাংলাদেশ ভবনে’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাসিনা। বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন ট্রানজিটসহ সব দিয়েছে তার সরকার, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এবার তাই ভারতের সহযোগিতা চাই।
গণমাধ্যমের খবরে এটা পরিষ্কার শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে ভারত যাননি, তিস্তার পানির জন্য যাননি, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে যাননি, তিনি গেলেন ক্ষমতায় টিকে থাকার দেনদরবারে’’, বলেন রিজভী।
বিএনপির এই নেতা বলেন: শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছেন তাদের দুঃশাসনের জবাব দিতে মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে। শেখ হাসিনার বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে, দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করে বন্দুকের জোরে আর ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।
তিনি বলেন: ‘বিচার বহির্ভূত হত্যায় সারাদেশকে লাশের মিছিলে পরিণত করে, দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি আর দলীয়করণের মাধ্যমে গোটা দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে ঢুকিয়ে একটা অস্বাস্থ্যকর, জরাজীর্ণ, নানা অসুখ-বিমুখের উৎসস্থল অবাসযোগ্য কারাকক্ষের মধ্যে বাস করাতে বাধ্য করার পরও প্রধানমন্ত্রী এবার একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের মনোবাসনা পূরণে নিরাপদ বোধ করছেন না। তাই তাদের চিরাচরিত আশ্রয়স্থল ভারতের শরণাপন্ন হয়েছেন শেখ হাসিনা আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করে অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে। এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে যেখানেই গেছেন সেখানেই ব্যর্থ হয়েছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন: ‘ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ স্বীকৃতপ্রাপ্ত স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখতে চায়, বাংলাদেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করতে চায় না। কারণ দু’দেশের বন্ধুত্ব হলো জনগণের সঙ্গে জনগণের। অতীতের মতো কলঙ্কজনক নির্বাচন সমর্থন করা ভারতের উচিত নয়। কিন্তু যদি বাংলাদেশের জনসমর্থনহীন একজন ব্যক্তি ও দলকেই বারবার তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় তাহলে বাংলাদেশের জনগণ মনে করবে ভারত শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে চায়। যেটি হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সামিল।’