স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর বাবা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন: আজ কি করলে স্কুলে? ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুয়া ছেলের উত্তর: আজ স্পোর্টস করেছি, আমি অনেক টায়ার্ড। কৌতুহলি বাবার পাল্টা প্রশ্ন: কোন মাঠে খেললে তোমরা? ছেলের জবাব: বাবা, মাঠে কেনো? স্পোর্টসটা আমাদের ক্লাসরুমেই হয় ! এবার সত্যি সত্যি হতাশ হলেন বাবা। কিন্তু কিছুই বলতে পারলেন না। অবশ্য ছেলেকে স্বপ্ন দেখানোর মত কোন কিছু তার হাতে নেইও।
শুনতে গল্পের মত মনে হলেও এটি একটি সত্য ঘটনা। গল্পের বাবা সত্যি সত্যি মাঠ কাঁপানো একজন। দেশ বিদেশের বিভিন্ন মাঠেই রেখেছেন তার প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি বাংলাদেশের প্রথম টেষ্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার দুর্জয় এখন রাজনীতির মাঠে দারুণ ব্যস্ত এক লোক।
বৃহস্পতিবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটোরিয়াম আয়োজিত ‘ক্রীড়া-বান্ধব ঢাকা চাই’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন দুর্জয়। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাতিক্রমী এই মতবিনিয়ম অনুষ্ঠানের আয়োজক সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার। সব ছাপিয়ে তাই অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় জাতীয় খেলোয়াড়, সংগঠক এবং ফেডারেশন কর্তাদের মিলন মেলায়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জাননো হয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক এবং সাইদ খোকনকে। ৪৪টি ফেডারেশন এর সম্মিলিত উদ্যোগে আগামীর জন্য একটি সুন্দর-আধুনিক এবং ক্রীড়া বান্ধব ঢাকা তৈরীর প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। দুই মেয়র প্রার্থী অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে তা শুনেন এবং পরে আলাদাভাবে মাইক্রোফোনের সামনে আসেন। জানান তাদের পরিকল্পনার কথা।
কিছুটা তাড়া ছিলো ঢাকা দক্ষিনের মেয়র প্রার্থী সাইদ খোকনের। তাই বিশেষ অনুরোধ করে তিনি আগে বক্তব্য দেন। ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাইদ খোকন নিজেকে একজন তরুণ উদ্যমী এবং খেলাধুলা প্রিয় মানুষ হিসেবে তুলে ধরেন। ঢাকা দক্ষিনের প্রায় ৩৭টি মাঠের কথা উল্লেখ করে খোকন প্রতিশ্রুতি দেন তিনি নির্বাচিত হলে বেদখল হয়ে যাওয়া ওই সবগুলো মাঠ পুনরুদ্ধারের কাজে হাত দেবেন। এছাড়াও জানান নাগরিকদের সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপন নিশ্চিত করতে একটি পরিকল্পিত এবং পরিচ্ছন্ন নগরী তৈরীর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তিনি।
এরপর মাইকে আসেন ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক। বরাবরের মত আবেগী বক্তব্যে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। প্রায় ৪০ মিনিট মাইক্রোফোনের সামনে ছিলেন আনিসুল হক। শুনিয়েছেন তার বাবা-মা, স্ত্রী সন্তান এবং পরিবারের নানা কথা। গল্পে গল্পে বলেছেন, কিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোন পেয়ে তিনি আজ ঢাকার মেয়র প্রার্থী এবং কিভাবে গত তিন সপ্তাহে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে তার দৈনন্দিন জীবন।
আনিসুল হক বলেন, অনেকেই বলেন আমি অনেক বড়লোক। গরীব-দুঃখি মানুষের দুঃখ কষ্ট বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমি মধ্যবিত্ত বাংলাদেশী পরিবার থেকে সংগ্রাম করে উঠে আসা এক লোক। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমি একজন চ্যালেঞ্জ পছন্দ করা ব্যাক্তি। আমার স্বভাব অনুয়ায়ী সিটি নির্বাচনেও সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে আগামী ৫ বছরের জন্য ছুটি চেয়েছি এবং তা শুধুমাত্র আমার স্বপ্নের ঢাকা তৈরীর কাজে।
সাইদ খোকনের সঙ্গে তিনিও প্রতিশ্রুতি দেন আধুনিক ঢাকা শহরে খেলাধুলার সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন তিনি। গড়বেন নিরাপদ ঢাকা। আনিসুল হক জানিয়েছেন তার স্বপ্নের ঢাকা গড়তে একটি শক্তিশালী পান্ডুলিপি তৈরীর কাজ চলছে। ২২০ সদস্যের একটি টিম কাজ করছে এটি তৈরীতে। দুই এক দিনের মধ্যেই তা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে মত বিনিয়ময় সভায় আরও বক্তৃতা করেন যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সাহেদ রেজা, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বাদল রায় এবং টেবিল টেনিস তারকা জোবেরা রহমান লিনু। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমন, সাবেক জাতীয় ফুটবলার গোলাম সারওয়ার টিপু, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, কায়সার হামিদসহ অন্যরা।